Samakal:
2025-06-16@06:26:59 GMT

পুড়ে গেলে যা করবেন

Published: 3rd, February 2025 GMT

পুড়ে গেলে যা করবেন

আগুন দেখলে আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে ধীরস্থির থাকুন। প্রথমে এর উৎপত্তি কোথায়, সত্যিই এটি লেগেছে কিনা, জানার চেষ্টা করুন। অযথা চিৎকার-চেঁচামেচি না করে প্রাথমিক অবস্থায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করুন। তেলজাতীয় আগুনে কম্বল, কাঁথা, ছালা বা মোটা কাপড় ভিজিয়ে চাপা দিন। বৈদ্যুতিক আগুনে দ্রুত প্রধান সুইচ বন্ধ করুন। পরনের কাপড়ে আগুন লাগলে মাটিতে গড়াগড়ি দিন। ভুলেও দৌড়াবেন না। তাতে আগুন বেড়ে যাবে। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে, পর্যায়ক্রমে ধীরে-সুস্থে নেমে আসুন। হুড়াহুড়ি করে নামতে যাবেন না। আগুন ঊর্ধ্বমুখী, তাই ওপরতলায় আগুন লাগলে প্রথমে সেই তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন। ওপরের তলার পর নিচের দিকের তলার লোকজনকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দিন।
প্রাথমিক চিকিৎসা
ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন– শরীরের উপরিভাগের স্তর হচ্ছে ত্বক। আগুনে ত্বক পুড়ে গেলে চামড়া লাল হয়ে যায়, সামান্য ফুলে যায় এবং জ্বালা করে। এ অবস্থাকে বলে প্রথম বা ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন। এ ক্ষেত্রে পোড়ার স্থানে শুধু ১৫ থেকে ২০ মিনিট পানি ঢাললেই চলবে। খুব বেশি জ্বললে একটি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন।
সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন– দুই বা সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন হলে ত্বকের উপরিভাগের প্রথম স্তর (এপিডার্মিস) সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরবর্তী স্তর (ডার্মিস) আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুড়ে যাওয়া স্থান লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, ফোসকা পড়ে এবং প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
সাধারণত গরম পানি বা গরম তরল কিছু পড়লে, কাপড়ে আগুন লেগে গেলে, মোমের গরম তরল অংশ সরাসরি চামড়ায় লাগলে, আগুনে উত্তপ্ত কড়াইজাতীয় কিছুর স্পর্শে এ ধরনের বার্ন হয়। এ ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ ধরে পানি ঢালতে হবে– এক-দুই ঘণ্টা পর্যন্ত। ফোসকা গলানোর চেষ্টা করবেন না।
থার্ড ডিগ্রি বার্ন
তিন বা থার্ড ডিগ্রি বার্ন হলে ত্বকের উপরিভাগের দুটি স্তরই (এপিডার্মিস ও ডার্মিস) সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চামড়ার নিচে থাকা মাংসপেশি, রক্তনালি, স্নায়ু ইত্যাদিও আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায়, চামড়া পুড়ে শক্ত হয়ে যায়, স্পর্শ করলেও ব্যথা অনুভূত হয় না। সরাসরি আগুনে পুড়লে, বিদ্যুতায়িত হলে, ফুটন্ত পানি বা তরল সরাসরি শরীরে পড়লে বা বিস্ফোরণে এ ধরনের বার্ন হয়। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব আগুন বা গরম জায়গা থেকে সরিয়ে নিন। পুড়ে যাওয়া কাপড় খুলে দিতে হবে। অযথা ডিম, টুথপেস্ট ইত্যাদি লাগাবেন না। এতে কোনো উপকার নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এমনভাবে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে তার পুড়ে যাওয়া অংশ খোলা দিকে থাকে। তার পর জগ বা মগে ঠান্ডা পানি বা বরফপানি এনে পোড়া জায়গায় ঢালতে হবে, যতক্ষণ না তার জ্বালা-যন্ত্রণা কমে এবং ক্ষতস্থানের গরমভাবও কমে না যায়। আক্রান্ত স্থানটি ফুলে যাওয়ার আগে সেখান থেকে ঘড়ি, বেল্ট, আংটি, কাপড় ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলতে হবে। পুড়ে যাওয়া অংশে কাপড় লেগে থাকলে সেটি না টেনে বাকি পোশাক কেটে সরিয়ে ফেলুন। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত ব্যান্ডেজ বা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান হালকা করে বেঁধে দিতে পারেন। 
মুখের কোথাও পুড়ে গেলে পানি দিয়ে ঠান্ডা করতে হবে, যতক্ষণ না ক্ষতস্থান ঠান্ডা হয় এবং ব্যথা কমে। মুখ ঢাকার প্রয়োজন নেই। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত কাপড় দিয়ে এমনভাবে মাস্ক তৈরি করতে হবে, যাতে নাক, মুখ ও চোখ বের করে ঢাকা যায়। সিলভার সালফাডায়জিন ক্রিম হাতের কাছে থাকলে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে লাগিয়ে দিতে পারেন। আক্রান্ত অংশ পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে একটু উঁচু করে ধরে রাখুন। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকলে পানিতে একটু লবণ মিশিয়ে স্যালাইন বা শরবত করে খেতে দিন অথবা ডাবের পানি বা খাওয়ার পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করতে দিন। প্রাথমিক চিকিৎসা চালানো অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিন। v
[বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার

গত বুধবার ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই চক্র চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধ অংশ নিতে বাধ্য করে।

আকর্ষণীয় বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যায় একটি চক্র। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। ওই যুদ্ধে অংশ নিয়ে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন।
গত বুধবার গভীর রাতে ওই চক্রের মূল হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মুহাম্মদ আলমগীর হোছাইন (৪০)। তাঁকে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।


গতকাল শুক্রবার সিআইডির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বনানী থানায় হওয়া মানব পাচার আইনের মামলায় আলমগীরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আলমগীরের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার আমতলী মাঝেরপাড়া গ্রামে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, এই চক্রের সদস্যরা রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট কারখানায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী বা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরব পাঠান। সেখানে তাঁদের ওমরাহ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেন। সুলতান তাঁদের দাস হিসেবে রাশিয়ার সেনাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। যুদ্ধে অংশ নিতে না চাইলে তাঁদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। খাবার বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের মানসিক শক্তি ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন।

সিআইডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির নিহত এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামের একজন গুরুতর আহত হন। রাশিয়ায় পাঠানো ১০ জনের মধ্যে একজন নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন (২৪) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান। পরে তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর কাছে তথ্য পেয়ে যুদ্ধাহত আমিনুলের স্ত্রী (ঝুমু আক্তার) ঢাকার বনানী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেন।

তদন্তে সিআইডি আরও জানতে পারে, ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। রাশিয়ায় নিয়ে তাঁদের জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানাজানি হওয়ায়, তাঁরা রাশিয়ায় যেতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে সেখান থেকে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তাঁরা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না এবং দেশে ফিরতেও পারছেন না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে সিআইডি নেপালে পালিয়ে যাওয়ার সময় মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম সদস্য ফাবিহা জেরিন ওরফে তামান্নাকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে। ফাবিহা জেরিন ঢাকার বনানীর ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের অংশীদার। সিআইডি ভুক্তভোগীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

অভিযান তদারকির সঙ্গে যুক্ত সিআইডি প্রধান কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আলমগীর ২০০৮ সালে ছাত্র ভিসায় রাশিয়ায় যান। সেখানে বিয়ে করে তিনি ওই দেশের নাগরিকত্ব পান। এ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন ক্যাটাগরির ভিসায় ৫০ জনকে রাশিয়ায় নেন। গত এক বছরে ১১ জনকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় রাশিয়ার সেনা ক্যাম্পে কাজ করার কথা বলে নিয়ে যান। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে তাঁদের ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করেন। সেখান থেকে পাওয়া টাকাও বিভিন্ন খাতে খরচ হয়েছে ফিরিস্তি দিয়ে আলমগীর কেড়ে নেন।

সিআইডির কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে রাশিয়ার সরকার দুজন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে তাঁদের লাশ বাংলাদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরির নামে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠানো চক্রের হোতা গ্রেপ্তার