বিএসইসি চেয়ারম্যানকে এনটিসির শেয়ারহোল্ডারদের লিগ্যাল নোটিশ
Published: 4th, February 2025 GMT
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে আইনি নোটিশ (লিগ্যাল নোটিশ) পাঠিয়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) কিছু শেয়ারহোল্ডার। কোম্পানিটিতে নূন্যতম শেয়ার ধারণ না করা সত্ত্বেও একজন পরিচালককে পদে রাখায় তাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বিএসইসি চেয়ারম্যানের পাশাপাশি আইনি নোটিশটি ডিএসই ও সিএসইর এমডি, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সচিব, এনটিসির এমডি ও ১০ পরিচালককে এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসের রেজিস্টারকে দেওয়া হয়েছে।
এই নোটিশটি ন্যাশনাল টি কোম্পানির নেসার উদ্দিন, কোহিনুর আহমেদ, কাজী মুরসালিন উল্লাহসহ ১২ জন শেয়ারহোল্ডারের পক্ষে ব্যারিস্টার ফারাবি সালাউদ্দিন তুসহিব পাঠিয়েছেন।
গত রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) লিগ্যাল নোটিশটি বিএসইসিতে পাঠানো হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল টি কোম্পানি পরিচালকদের দ্বারা পরিচালিত হয়, যা কোম্পানি আইন ও বিএসইসির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনসের ভঙ্গ। এ কোম্পানিটিতে বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী একজন পরিচালক ২ শতাংশ করে শেয়ার ধারণ করে না। তারপরেও সে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কোম্পানি পরিচালনায় পর্ষদের সিদ্ধান্তকে ক্ষতিকর মনে করা হচ্ছে।
এদিকে কোম্পানির পর্ষদের রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে লিগ্যাল নোটিশে। যে অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া জরুরি বলে দাবি করা হয়েছে।
কোম্পানিটিতে পরিচালকদের কোরাম পূরণ ছাড়াই অবৈধভাবে পর্ষদ সভা করে বিশেষ এজেন্ডা পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যেটা পর্ষদের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লিগ্যাল নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বিএসইসির রেগুলেশনস ও নোটিফিকেশন ভঙ্গের মাধ্যমে কোম্পানি ও শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগকে বিপদে ফেলা হয়েছে। অথচ বিএসইসি কোম্পানিটিকে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন (কর্পোরেট গভরনেন্স) অনুযায়ী পরিচালনা করাতে বাধ্য। এ অবস্থায় বিএসইসিকে কোম্পানিটির পুরো পর্ষদের কার্যক্রম তদন্তের পদক্ষেপ নিতে আহবান করা হয়েছে। এছাড়া আইন অনুযায়ি পদক্ষেপ নিতে, বিএসইসিকে একজন পরিচালক নিয়োগ দিতে বা অন্যকোন পদক্ষেপ নিতে এবং পর্ষদের সব সভা বাতিল করার দাবি জানানো হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫