ক্যান্সারের সতর্কবার্তা: ১০টি লক্ষণ
Published: 3rd, February 2025 GMT
ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে, যেটি মানুষ নিজের অজান্তেই এড়িয়ে যায়। অথচ রোগবালাই শুরুতে ধরা পড়লে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়। একেবারে শুরুর দিকে শনাক্ত করা গেলে সব ক্যান্সারই সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি অনেক পরে ধরা পড়ে, তখন আর সারানো সম্ভব হয় না। উপসর্গগুলোর ব্যাপারে সবাই একটু সচেতন হলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায়, একজন ব্যক্তি সুস্থ জীবনযাপন করছেন। হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল তাঁর ক্যান্সার হয়েছে। এর মধ্যে তার কিছু লক্ষণও শরীরে দেখা দিয়েছিল। সেগুলো তিনি বুঝতে পারেননি, অথবা গুরুত্ব দেননি।
পরে দেখা গেল বিলম্ব করার কারণে ক্যান্সার ইতোমধ্যে তাঁর শরীরে অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁকে সারিয়ে তোলা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। তাই নিচের ১০টি লক্ষণ দেখা দিলে কখনোই অবহেলা করবেন না।
কারণ ছাড়া ওজন কমে যাওয়া
lক্যান্সার আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই কোনো না কোনো সময় ওজন হারাতে শুরু করে। যখন আপনি কোনো কারণ ছাড়াই ওজন হারাতে থাকেন, তখন এটিকে বলা হয় ব্যাখ্যাহীন ওজন হারানো। এতে চিন্তার কারণ আছে।
lব্যাখ্যাহীনভাবে বা কোনো কারণ ছাড়াই পাঁচ কেজি বা এর বেশি ওজন কমলে, সেটি ক্যান্সারের প্রথম লক্ষণ হতে পারে।
lঅগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালি বা ফুসফুসের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়ার এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
জ্বর
lক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সবচেয়ে সাধারণ একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। অবশ্য যে স্থানে ক্যান্সার উৎপন্ন হয়েছে, সেখান থেকে দেহের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া শুরু হলে তখন প্রায়ই জ্বর দেখা দেয়।
lক্যান্সারে আক্রান্ত সবাই কোনো না কোনো সময় জ্বরে ভোগেন। বিশেষ করে, যদি ক্যান্সার বা এর চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, তাহলে জ্বর বেশি হয়।
lঅনেক ক্ষেত্রে জ্বর ক্যান্সারের প্রাথমিক উপসর্গও হতে পারে। যেমন লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।
ক্লান্তি
lএখানে ক্লান্তি বলতে বোঝায় বেশ ক্লান্তিভাব, যা বিশ্রাম নেওয়ার পরও দূর হয় না। ক্যান্সার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
lকিছু কিছু ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুরুর দিকেই ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
lকোলন বা মলাশয় ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ক্ষেত্রে রক্তপাত হতে পারে। এটি সবক্ষেত্রে হয় না। এর কারণেও ক্যান্সারের সময় ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
ত্বকে পরিবর্তন
lত্বকের ক্যান্সার ছাড়াও আরও কিছু ক্যান্সার রয়েছে, যাতে আক্রান্ত হলে ত্বকে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এর লক্ষণ ও উপসর্গের মধ্যে রয়েছে:
lত্বক কালো হয়ে যাওয়া বা হাইপারপিগমেনটেশন
lত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া বা জন্ডিস
lত্বক লাল হয়ে যাওয়া। চুলকানি
lমাত্রাতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি
অন্ত্রের ক্রিয়া বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন
lকোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা আপনার মলের আকারে দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন মলাশয়ের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
lঅন্যদিকে প্রস্রাব করার সময় ব্যথা, প্রস্রাবে রক্তপাত, বা মূত্রাশয়ের কার্যক্রমে পরিবর্তন যেমন– আগের তুলনায় কম বা বেশি প্রস্রাব করা ইত্যাদি মূত্রাশয় বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
যে ক্ষত ভালো হয় না
lঅনেকেই জানেন, দেহে যদি আঁচিল থাকে যেটি বাড়ে বা ব্যথা হয় বা সেটি থেকে রক্তপাত হয়, তাহলে সেটি ত্বকের ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে। শরীরে যদি কোনো ক্ষত থাকে, যেটি চার সপ্তাহের পরও ভালো হয় না বা সেরে যায় না, এমন ক্ষতের প্রতিও আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
lমুখে যদি এমন কোনো ক্ষত হয়, তাহলে সেটি মুখের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
lআপনার মুখের যে কোনো পরিবর্তন যদি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে আপনাকে অবশ্যই একজন চিকিৎসক বা ডেন্টিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
lশিশ্ন বা জরায়ুতে ক্ষত হয়ে কোনো ধরনের সংক্রমণ কিংবা ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে। এমন অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রক্তপাত
lক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় কিংবা তা ছড়িয়ে পড়ার পর অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। কাশির সঙ্গে রক্তপাত ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
lঅন্যদিকে যদি মলের সঙ্গে রক্তপাত হয় তাহলে এটি মলাশয় বা মলদ্বারে ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
lএনডোমেট্রিয়াম বা জরায়ুর আবরণে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের কারণে যোনিপথে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে।
lএ ছাড়া মূত্রের সঙ্গে রক্ত পড়লে সেটি মূত্রাশয় বা কিডনি ক্যান্সারের কারণে হতে পারে। স্তনবৃন্ত বা স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত-মিশ্রিত তরল বের হলে সেটি স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
শরীরের যে কোনো স্থান শক্ত হয়ে যাওয়া
lঅনেক ক্যান্সার ত্বকের মাধ্যমে শনাক্ত করা যেতে পারে। এ ধরনের ক্যান্সার সাধারণত স্তন, অণ্ডকোষ, গ্রন্থি এবং শরীরের নরম টিস্যুতে হয়ে থাকে।
lএ ক্ষেত্রে দেহে শক্তভাব বা মাংস জমে আছে– এ ধরনের অনুভূতি হয়। এটা এসব ক্যান্সারের প্রাথমিক বা বিলম্বিত উপসর্গ হতে পারে।
গিলতে অসুবিধা
lক্রমাগত বদহজম বা কোনো কিছু গিলতে গেলে সমস্যা হলে সেটি পাকস্থলী বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
l যাই হোক না কেন, এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত সব উপসর্গই ক্যান্সার ছাড়াও অন্য আরও অনেক কারণে দেখা দিতে পারে।
টানা কাশি বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন
lটানা কাশি ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় কাশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এ ছাড়া কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন এলে তা স্বরযন্ত্র বা থাইরয়েড গ্রন্থিতে ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
[সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ]
তথ্যসূত্র : বিবিসি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপসর গ
এছাড়াও পড়ুন:
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখাতে হামলা, নির্দেশদাতা এখনো পলাতক
চট্টগ্রাম নগরে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার প্রাইভেট কার থামিয়ে হামলার ঘটনায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে বান্দরবান থেকে কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)–কে গ্রেপ্তার করে ডিবি (পশ্চিম)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, এক ব্যক্তির নির্দেশে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে এ হামলা চালান। সেই নির্দেশদাতা এখনো পলাতক।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (গণমাধ্যম) আমিনুর রশীদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, হামলার সময় ওই ব্যক্তির মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কাস্টমস কর্মকর্তাকে ভয় দেখানোই ছিল হামলার লক্ষ্য। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
৪ ডিসেম্বর সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভাড়ায় নেওয়া প্রাইভেট কারে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলে করে তিন ব্যক্তি তাঁদের গাড়ি থামিয়ে চাপাতি দিয়ে গাড়ির কাচে কোপ দেন। গাড়ির কাচ ভাঙার পাশাপাশি হামলাকারীরা একজন আরেকজনকে বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’। তবে দুই কর্মকর্তা দ্রুত গাড়ি সরিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসেন।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি বিভিন্ন অনিয়ম, রাজস্ব জালিয়াতি ও নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি আটকে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জড়িত চক্র হামলা চালাতে পারে। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যমানের নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি, প্রায় ৩০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ সিগারেট এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিপুল পরিমাণ প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। এসব অভিযানে দুজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। প্রসাধনী জব্দের পর মো. আসাদুজ্জামানকে ফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।
হামলার নির্দেশদাতার পরিচয় এখনো প্রকাশ করেনি পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে তারা। তবে হামলায় ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নিষিদ্ধ পপি বীজ, ঘন চিনি ও মিথ্যা ঘোষণায় আসা প্রসাধনী জব্দের কারণে একটি সিন্ডিকেট ক্ষুব্ধ। গত দুই মাসে এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি আসছে।
আরও পড়ুনগাড়ি থামিয়ে কাচে চাপাতির কোপ, একজন বলতে থাকেন, ‘গুলি কর, গুলি কর’০৪ ডিসেম্বর ২০২৫