Prothomalo:
2025-06-15@23:17:30 GMT

সব অংশীদারকে আন্তরিক হতে হবে

Published: 7th, February 2025 GMT

রাজনৈতিক ঐকমত্যের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যে সংলাপের আয়োজন করতে যাচ্ছে, তাতে দেশবাসীর মনে নতুন করে আশাবাদ জেগেছে বলা যায়। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গত বছর সরকার যে ১১টি কমিশন গঠন করেছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে আছে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও বিচারবিষয়ক সংস্কার কমিশন।

বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন কমিশনের প্রতিবেদন গ্রহণকালে একে জাতীয় ও বিশ্বের সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সংস্কার কমিশনগুলোর এই সুপারিশ ইতিহাসে স্থান করে নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এর আগে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছিলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ছয়টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে এবং কমিশনপ্রধানেরা মিলিত হয়ে আশুকরণীয়, মধ্যকরণীয় ও নির্বাচনের পরে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা পেশ করবেন। আর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সব রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনের পক্ষের শক্তি, সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

আমরা মনে করি, বিভিন্ন কমিশন যেখানে কাজ শেষ করেছে, সেখান থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার ও অংশীজনদের কাজ শুরু হবে। এই অংশীজনদের মধ্যে আছে অন্তর্বর্তী সরকার, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজন। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে, এর আগে যেসব সংলাপ হয়েছে, তাতে তারা যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়নি। এবার সংলাপটা এমনভাবে করতে হবে, যাতে সব পক্ষ খোলামেলাভাবে ও যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।

নির্বাচন আগে না সংস্কার আগে—রাজনৈতিক মহলে যে বিতর্ক আছে, সেটা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি। আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হলে এর অবসান হবে।

আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি বিশেষ রাজনৈতিক পটভূমিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য অংশীজনের সমর্থন ও সহায়তা না পেলে তারা কোনো কাজে সফল হবে না। আবার অন্তর্বর্তী সরকারও অংশীজনদের বাদ দিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিলে তা-ও সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এখানে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও বোঝাপড়া থাকতে হবে।

আমরা যতটা জানি, কোনো দলই সংস্কারের বিষয়ে আপত্তি করেনি। তবে সংস্কারের মাত্রা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়েও মতভেদ থাকতে পারে। কোনো গণতান্ত্রিক সমাজে এটা অস্বাভাবিক নয়। কথা হলো এই ভিন্নমতকে আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব? আলোচনা ও যুক্তিতর্কই এ ক্ষেত্রেই একমাত্র পথ।

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ করার দায়িত্ব যেমন অন্তর্বর্তী সরকারের, তেমনি আন্দোলনের অংশীজনদেরও। তাঁরা স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটাতে যে দৃঢ় ঐক্যের পরিচয় দিয়েছেন, নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়েও তাঁরা ঐকমত্যে পৌঁছাবেন বলে আশা করা যায়। সংশ্লিষ্টদের মনে রাখতে হবে, তাঁরা যে সংগঠন বা দলের হয়ে কথা বলছেন, তাঁরা কেবল তাদেরই প্রতিনিধিত্ব করছেন না। প্রতিনিধিত্ব করছেন ১৭ কোটি মানুষকে। জনমানুষের প্রত্যাশাকে সবাইকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।

বিগত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারকে এমন একটি নির্বাচন করতে হবে, সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন, সব প্রতিযোগী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাতে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসতে না পারে, সে জন্য সংস্কারের বিষয়টিও উপেক্ষা করা যাবে না। নির্বাচনের দিন-তারিখ কিংবা সংস্কারের মাত্রা কী হবে—এগুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠারও কোনো বিকল্প নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ শ জনদ র ঐকমত য অ শ জন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলেছে দলটি।

আজ শুক্রবার রাতে এনসিপির এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।

এনসিপির বিবৃতিতে বলা হয়, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে এনসিপি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে লন্ডনে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি ‘সংসদ নির্বাচন’ বিষয়ে দলটিকে আস্থায় আনতে সফল হয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। কিন্তু বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করে এনসিপি।

নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে—এ কথা উল্লেখ করে এনসিপি আরও বলেছে, জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর করা এবং বিচারের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন–আকাঙ্ক্ষাকে অবদমিত করবে।

জনগণের দাবি তথা জুলাই সনদ রচনা ও কার্যকর করার আগে নির্বাচনের কোনো তারিখ ঘোষিত হলে তা জনগণ মেনে নেবে না বলে উল্লেখ করেছে এনসিপি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কাজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও জুলাই সনদ রচনা এবং কার্যকর করেই আসন্ন জুলাইকে যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করার উদ্যোগ নিতে সরকারকে জোর দাবি জানাচ্ছে এনসিপি।’

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়নে জুলাই সনদ কার্যকর করা ও বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণার পরই নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা চূড়ান্ত হওয়া উচিত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনসিপি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা মঙ্গলবার আবার শুরু
  • বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে
  • স্বপ্নে হলো দেখা
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • ইউনূস-তারেকের বৈঠক দেশের মানুষের জন্য স্বস্তির বার্তা, আশার আলো
  • ড. ইউনূস ও তারেকের বৈঠক জাতির জন্য স্বস্তির বার্তা: ১২ দলীয় জোট
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার ও জুলাই সনদ