নতুন ভবন থাকতেও রোগী কেন মেঝেতে
Published: 11th, February 2025 GMT
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাত আর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প সমার্থক হয়ে উঠেছিল। সরকার–ঘনিষ্ঠরা তাঁদের ইচ্ছেমতো অবকাঠামো প্রকল্প নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। তবে এর মধ্যে জনহিতকর প্রকল্প যে করা হয়নি, তা নয়। সেসব অতি জরুরি অবকাঠামোও যদি মাসের পর মাস অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?
যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে জনহিতকর একটি প্রকল্প। কিন্তু ৩৮ কোটি টাকা অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ার ১৫ মাস পরও সেটি চালু হয়নি। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, এর কারণ হলো, প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুই দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর মেলেনি।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে গেলে তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আসবাবসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়াতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে যেখানে চিকিৎসক থাকার কথা ৩২ জন, সেখানে চিকিৎসক আছেন ৮ জন।
নতুন প্রকল্পে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট মূল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মীদের আবাসনের জন্য পাঁচটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সরবরাহ লাইনও সংযোজন করা হয়েছে। ফলে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা গেলে সেখানকার মানুষের কাছে সহজে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর একটা পথ তৈরি হবে। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ছয়তলা ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে বহুমুখী ক্ষতি হচ্ছে। হাসপাতাল ভবনের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনে স্থাপিত লিফট, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এমন একটি অবকাঠামো হেলায় ফেলে রাখা হয়েছে, অথচ পুরোনো ভবনে রোগীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে জায়গার সংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা বারান্দায় স্থাপন করতে হচ্ছে। রোগীদের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের ভাঙা জানালা দিয়ে হিম বাতাস ঢুকে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম বাজে পরিবেশে চিকিৎসা নিয়ে রোগী কি নতুন করে রোগাক্রান্ত হবে না?
যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্রুত ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করে অন্তত নতুন ভবনটিতে যাতে রোগীরা সেবা পান, সে ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, তার উপায় বের করা দরকার। এত কোটি টাকার অবকাঠামো করার পরও নাগরিকেরা কেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স প রকল প অবক ঠ ম
এছাড়াও পড়ুন:
কোটি টাকা ছিনতাই করতে সড়কে অপেক্ষায় ছিল দুর্বৃত্তরা: পুলিশ
রাজধানীর উত্তরায় এক কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগে থেকে ব্যাগভর্তি টাকা ছিনতাই করতে সড়কে অপেক্ষায় ছিল দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ জানিয়েছে, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ছাড়াও প্রযুক্তিগত তদন্ত করছে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের মোড়ে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, দুটি মোটরসাইকেলে থাকা চার আরোহীকে গতিরোধ করে একটি মাইক্রোবাস। র্যাবের পোশাক পরিহিত তিনজন মাইক্রোবাস থেকে নেমে আসে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহীদের দু’জন ভয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা ভর্তি দুটি ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেন। তাদের পিছু নেয় অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। মোটরসাইকেলের এক আরোহীকে ধরে এনে মাইক্রোবাসে তুলে ১ কোটি ১৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগীদের একজন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উত্তরায় ছিনিয়ে নেওয়া টাকা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের এক এজেন্টের।
পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, দুটি মোটরসাইকেলে যখন নগদের এজেন্টের লোকজন টাকা নিয়ে ১২ ও ১৩ নম্বর সড়কের সংযোগস্থল অতিক্রম করছিল তখন তাদের ব্যারিকেড দেওয়া হয়। মাইক্রোবাস থেকে নেমে র্যাবের পোশাক পরিহিত তিনজন মোটরসাইকেল আরোহীদের গতিরোধ করে। ঘটনাস্থলে আগে থেকে মাইক্রোবাস নিয়ে দুর্বৃত্তরা অপেক্ষা করছিল। এটি পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ক্লু ধরেই তদন্ত চলছে। প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোনো প্লট রয়েছে কি–না সেটিও দেখা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলছেন, ছিনতাইকাণ্ডে যে গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে সেটির নম্বর প্লেট ভুয়া ছিল। পেশাদার অপরাধী চক্র, আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স নাকি অন্য কোনো গ্রুপ এর সঙ্গে জড়িত তা বের করার চেষ্টা চলছে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছুটির দিন সকালে ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা আগেভাগে হাজির হয়। এরপর কোটি টাকা ছিনতাই করে ১৭ নম্বর সেক্টর হয়ে তুরাগের দিকে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন বলেন, ঈদের ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় টাকা জমা দেওয়া যায়নি। ছুটির মধ্যে ব্যবসার টাকা আমার বাসায় রাখা ছিল। শনিবার উত্তরার ইসলামী ব্যাংক শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা ছিল। তাই ব্যাংকে এবং বুথে জমা দেওয়ার জন্য চার কর্মচারীকে দিয়ে ওই টাকা অফিসে পাঠানো হচ্ছিল।