ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাত আর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প সমার্থক হয়ে উঠেছিল। সরকার–ঘনিষ্ঠরা তাঁদের ইচ্ছেমতো অবকাঠামো প্রকল্প নিয়েছিলেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। তবে এর মধ্যে জনহিতকর প্রকল্প যে করা হয়নি, তা নয়। সেসব অতি জরুরি অবকাঠামোও যদি মাসের পর মাস অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয় আর কী হতে পারে?

যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রকল্পটি নিঃসন্দেহে জনহিতকর একটি প্রকল্প। কিন্তু ৩৮ কোটি টাকা অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হওয়ার ১৫ মাস পরও সেটি চালু হয়নি। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, এর কারণ হলো, প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দুই দফায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর মেলেনি।

চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করতে গেলে তার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম, আসবাবসহ আনুষঙ্গিক সুবিধা বাড়াতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে ৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে যেখানে চিকিৎসক থাকার কথা ৩২ জন, সেখানে চিকিৎসক আছেন ৮ জন।

নতুন প্রকল্পে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট মূল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মীদের আবাসনের জন্য পাঁচটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি অক্সিজেন প্ল্যান্ট ও সরবরাহ লাইনও সংযোজন করা হয়েছে। ফলে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা গেলে সেখানকার মানুষের কাছে সহজে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর একটা পথ তৈরি হবে। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ছয়তলা ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণে বহুমুখী ক্ষতি হচ্ছে। হাসপাতাল ভবনের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভবনে স্থাপিত লিফট, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ও অক্সিজেন সরবরাহ লাইনও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এমন একটি অবকাঠামো হেলায় ফেলে রাখা হয়েছে, অথচ পুরোনো ভবনে রোগীদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে জায়গার সংকটের কারণে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা বারান্দায় স্থাপন করতে হচ্ছে। রোগীদের বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডের ভাঙা জানালা দিয়ে হিম বাতাস ঢুকে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ রকম বাজে পরিবেশে চিকিৎসা নিয়ে রোগী কি নতুন করে রোগাক্রান্ত হবে না?

যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দ্রুত ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করে অন্তত নতুন ভবনটিতে যাতে রোগীরা সেবা পান, সে ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, তার উপায় বের করা দরকার। এত কোটি টাকার অবকাঠামো করার পরও নাগরিকেরা কেন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স প রকল প অবক ঠ ম

এছাড়াও পড়ুন:

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ইসলামী দলগুলোর

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিলের দাবিতে একাট্টা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। এসব দাবি না মানলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও ডাক দিয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের ‘নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ইসলামফোবিয়া: করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এতে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। নবগঠিত এনসিপির নেতাও কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবি জানান। 

সেমিনারে বক্তৃতা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা আশরাফউদ্দিন মাহদী প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় উলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজি। 

কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল ছাড়াও এতে দাবি করা হয়, ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ও দেশীয় চিন্তায় বিশ্বাসী নারীদের নিয়ে কমিশন করতে হবে। কোরআন-সুন্নাহ, সংবিধান এবং সামাজিক বাস্তবতার আলোকে নতুন প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে। 

কমিশনের প্রতিবেদনে উত্তরাধিকার এবং সম্পদে নারীর সমান অধিকারের যে সুপারিশ করা হয়েছে, একে ইসলামবিরোধী বলে আখ্যা দিয়েছে দলগুলো। তাদের ভাষ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নারীবিষয়ক কমিশন অন্তর্ভুক্তিমূলক ছিল না। এতে ইসলাম চর্চা করা নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পাশ্চাত্যের ধারণায় বিশ্বাসীদের নিয়ে গঠিত কমিশন বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে আমলে নেয়নি। 

ইসলামী দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে বার্তা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, ‘আমাদের ভাগ ভাগ, টুকরো টুকরো করে, আমাদের মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।’ অন্যান্য দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে যেতে চাই না। যদি বাধ্য করা হয়, তবে অবশ্যই আন্দোলনে নামব। জামায়াতের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। কমিশনের সুপারিশগুলোকে স্ববিরোধী আখ্যা দিয়ে জামায়াত আমির বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার, আবার নারীর জন্য কোটা রাখারও সুপারিশ করেছে। নারীরা সম্মানের প্রতীক। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ঘরে ঘরে সমস্যা সৃষ্টি করতে চায়। কমিশনের প্রতিবেদন কোরআন-সুন্নাহবিরোধী হওয়ায় জামায়াত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। কমিশনে যারা আছেন, তাদেরও প্রত্যাখ্যান করতে হবে। যদি কমিশন করতে হয়, এ দেশের বিশাল সংখ্যক নারীদের প্রতিনিধি রেখেই করতে হবে। 

চরমোনাই পীর সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে দেশ পরিচালনা করছেন না। তার পরও সব সময় আপনাদের সহযোগিতায় ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের রাস্তায় নামিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিস্টদের সুযোগ করে দেবেন না। পরিষ্কার বার্তা, সেদিকে পা বাড়ালে ৫ মিনিটও সময় পাবেন না। নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে দাবি করে রেজাউল করীম বলেছেন, পলাতক শক্তি এর মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। বিগত সময়ে নাস্তিকরা যে চক্রান্ত করেছে, কখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজও এমন হীন চিন্তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ইসলামপন্থি দলগুলোর ঐক্যের কথা বলেন চরমোনাই পীরও। তিনি বলেছেন, এই সেমিনারের মাধ্যমে ইসলাম ও মানবতার ভিত্তিতে দেশ গড়ার পদক্ষেপ অনেকটা এগিয়ে গেছে। 

মামুনুল হক বলেন, পশ্চিমাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নারীবিষয়ক সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েরও কেউ কেউ জড়িত। এই প্রস্তাবের একচুলও যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, আমাদের লাশের ওপর দিয়ে করতে হবে। ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি। আমরা ক্লান্ত। কিন্তু কোরআনের বিধানের মর্যাদা রক্ষায় যুদ্ধ করতে হলে করব।

আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার সমাজ ব্যবস্থা এই দেশে কায়েমের জন্য কমিশনের এমন সুপারিশ। কমিশন তাদেরই প্রতিনিধি। সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, এই কমিশন বাদ না দিলে সরকারের অন্য কমিশনগুলোও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কমিশনের সুপারিশ বাংলাদেশের সমাজ, সংস্কৃতি ও মানুষের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। যৌনকর্মকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চেয়ে নারীর অবমাননা করা হয়েছে। নারীর সম্মানহানি করা হয়েছে। 

সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনূস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম অপু প্রমুখ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ