দেশের বাণিজ্যিক ফুল চাষের পথিকৃৎ শের আলী সরদার মারা গেছেন
Published: 12th, February 2025 GMT
দেশে বাণিজ্যিক ফুল চাষের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত শের আলী সরদার (৭৫) মারা গেছেন। আজ বুধবার সকাল ছয়টার দিকে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নানা রোগে ভুগছিলেন।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শের আলী সরদার ফুল চাষের প্রথম উদ্যোক্তাদের একজন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শের আলীর বাবা আবদুর রহমান সরদারের নার্সারির ব্যবসা ছিল। ফলদ ও বনজ গাছের চারা বেশি উৎপাদন করতেন আবদুর রহমান সরদার। বাবার নার্সারিতে কাজ করতেন শের আলী। ১৯৮২ সালের এক বিকেলে শের আলী নার্সারিতে ছিলেন, তখন এক পথচারী এসে তাঁর কাছে পানি খেতে চাইলেন। ওই পথচারীর হাতে ছিল কিছু রজনীগন্ধা। কথায় কথায় জানলেন পথচারীর নাম নূর ইসলাম। বাড়ি যশোর সদরে। সেই নূর ইসলামের মাধ্যমে শের আলী আড়াই মণ রজনীগন্ধার বীজ নিয়ে নিজের ৩০ শতক জমিতে বপন করেন। রজনীগন্ধার ভালো ফলন পেলেন।
ঢাকায় তখন রজনীগন্ধা বেশি পাওয়া যেত না। চাঁপা, রঙ্গন বা কাঠগোলাপ বিক্রি হতো। ফুলের বাজারও বেশি বড় ছিল না। সাধারণত পূজা-পার্বণে লোকে ফুল ব্যবহার করতেন। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন এইচ এম এরশাদ। তিনি মালঞ্চ নামে শাহবাগে একটি ফুলের দোকান উদ্বোধন করলেন। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ফুলের দোকান সেটি। শের আলীর রজনীগন্ধা দিয়ে দোকানটির যাত্রা শুরু। শের আলী তত দিনে গ্লাডিওলাস, জারবেরা ইত্যাদি ফুল উৎপাদনেও সফল হন।
যশোর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গদখালী। গদখালী থেকে আরও কিছুটা দূরে পানিসারা গ্রাম। গ্রামের কমবেশি সবাই ফুল চাষ করেন। পানিসারার পাশের গ্রামের মানুষেরাও ফুল চাষ করেন। প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়। কর্মসংস্থান হয়েছে পাঁচ হাজার মানুষের। এ ছাড়া ফুল কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত আরও ৫০ হাজার মানুষ। গদখালীর ফুল ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেটসহ ৫৫টি জেলায় যায়। শের আলীর দেখানো পথেই ফুল চাষে এ সফলতা আসে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা শের আলীর নার্সারি দেখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘শের আলীর ফুল বিশ্বমানের।’
পৃথিবীর ২০টির বেশি দেশ ঘুরেছেন শের আলী। জীবনে কোনো দিন ফুলের বীজ বিক্রি করেননি। শের আলী বলেছিলেন, ‘আমি জীবনে কখনো ফুলের বীজ বিক্রি করিনি। যতটা পেরেছি বিতরণ করেছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।
আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।