বাংলাদেশ নিয়ে ভাবলেই নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে থাকি। ওদের মাথায় কী ঘুরছে, এবং সেটাই বা কীভাবে কাজ করছে—এসব নিয়ে ভাবি। ওরা ঠিকমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না বোঝার জন্য আমি ওদের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট দেখি, নিউজ মিডিয়ার কমেন্টগুলো পড়ি, তাদের কথাবার্তা শুনি।

চেষ্টা করি বুঝতে, কী কথা তারা বলতে চাইছে, যেটা আমরা বুঝতে পারছি না। অথবা, কী বলতে পারছে না, যেটা তাদের আসল ভয়েস। যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হলো, নতুন প্রজন্ম অনেক জায়গায় ‘নয়েজ ফিল্টার’ করতে পারছে না। তাদের বন্ধুদের কথাবার্তা, মা–বাবার শাসন, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ, অন্যের চাপে পড়ে নিজে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা তাদের নিজেদের ভয়েসকে হারিয়ে দিচ্ছে।

আমার বন্ধুদের সঙ্গে যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করি, তখন বুঝতে পারি যে নতুন প্রজন্ম প্রতিদিন যে হাজারও ইনফরমেশন পাচ্ছে, সেগুলোকে তারা ঠিকমতো প্রসেস করতে পারছে না। আমি যখন দেখি আমার পঞ্চাশোর্ধ্ব বন্ধুরাই এই নয়েজ ফিল্টার করতে পারছে না, সেখানে নতুন প্রজন্মের জন্য এটা আরও অনেক গভীরের সমস্যা। তো, সমস্যার শুরুটা কোথায়?

এখন তো আমাদের চারপাশে ইনফরমেশনের বন্যা—ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি চ্যানেল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আরও কত কী! এত ইনফরমেশন নিয়ে আমরা ওভারলোড হয়ে যাচ্ছি। আজকের দিনে প্রত্যেকটা মানুষের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে? রাজনীতি নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে সবাই একটু চিন্তিত। ট্যাক্স যাচ্ছে বেড়ে প্রতিনিয়ত।

আমরা দেখছি ফেসবুকে কেউ একটা পোস্ট দিল, সঙ্গে সঙ্গে শত শত কমেন্ট। কেউ বলছে এটা ঠিক, কেউ বলছে ওটা ঠিক। টিভি চ্যানেলগুলোতে টক শো চলছে। এক এক্সপার্ট এক কথা বলছে, অন্য এক্সপার্ট অন্য কথা বলছে। ইউটিউবে লাইভ চলছে, সেখানেও শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। এই অবস্থায় একজন সাধারণ মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? কার কথা শুনবে? কীভাবে নিজের ‘ভয়েস’ বের করতে পারবে?

এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা। বাংলাদেশ এখন ডেভেলপমেন্টের পথে হাঁটছে। দেশ হিসেবে আমরা একা নই। আমাদের অর্থনীতি দিন দিন বাড়ছে। এই সময়ে আমাদের সবার দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা ভাবা। কীভাবে সেগুলোকে ঠিকভাবে চালানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন আমাদের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামিয়ে না দেয়। কারণ, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের পরের প্রজন্মের জন্যও।

তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ—প্রতিটা জিনিস নিয়ে মাথা গরম করবেন না। যেকোনো খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রশ্ন করুন—এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? এর উৎস কী? এটা শেয়ার করলে কার লাভ? দেশের ক্ষতি হবে কি?

নিজের ক্যারিয়ার, পড়াশোনা, ব্যবসা যেটাই করুন, সেটাতে মনোযোগ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকুন। নয়েজ ফিল্টার করার জন্য সময় দিন নিজেকে। আজকে যারা অস্থিরতা ছড়াচ্ছে, তারা কি দেশের ভালো চায়? তারা কি চায় আমাদের ডলারের মজুত কমুক? রপ্তানি কমুক? বিদেশি বিনিয়োগ কমুক? বিদেশি পর্যটকেরা না আসুক? এসব প্রশ্ন নিজেকে করুন।

মনে রাখবেন, আপনি যদি সফল হন, দেশও সফল হবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন—এটা কি দেশের জন্য ভালো হবে? আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কি ভালো হবে? এভাবে চিন্তা করলে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বাঁচা যাবে।

আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত কীভাবে আমরা সময়সীমার মধ্যে একটা উন্নত দেশ হতে পারি। কীভাবে আমরা জিডিপি বাড়াতে পারি। কীভাবে আরও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারি। কীভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে পারি। এগুলো নিয়ে চিন্তা করলে দেশ এগিয়ে যাবে, আমরাও এগিয়ে যাব।

নয়েজ ফিল্টার করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদের নিজেদের শিক্ষাকে নতুন করে ‘মূল্যায়ন’ করা। স্বশিক্ষিত হওয়া। বুঝতে পারা, কীভাবে সামগ্রিকভাবে দেশের ভালো হয়।

রকিবুল হাসান

টেলিকম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বইয়ের লেখক

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ফ ল ট র কর প রজন ম র আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিতে হলে বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া থাকতে হবে নিয়মিত আয়ের উৎস। আর বিনিয়োগের ৬ মাসের আগে ঋণ পাবে না কোনো বিনিয়োগকারী। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড এবং কোম্পানির হিসাবেও মার্জিন ঋণ দেওয়া হবে না। চূড়ান্ত মার্জিন ঋণ নীতিমালায় এসব সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ প্রসঙ্গে এসব তথ্য তুলে ধরেন পুঁজিবাজার টাস্কফোর্সের সদস্যরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন এবং পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।

টাস্কফোর্সের সদস্যরা বলেন, পুঁজিবাজার অংশীজনদের সাথে আলোচনা করেই সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে টাস্কফোর্স। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর ৩ মাসের আগে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে, মার্জিন নিয়ে শেয়ারবাজারে কারসাজি বন্ধ হবে। মার্জিন ঋণ নিয়ে সুশাসন না থাকায় বিপুল অংকের নেগেটিভ ইক্যুইটি সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীর পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পুঁজিবাজার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং মার্জিন খারাপ কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। যে কারণে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা টাস্কফোর্সের মূল্য উদ্দেশ্য।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন বলেন, অনেক স্টেকহোল্ডার দাবি করছেন তাদের সাথে বসা হয়নি। অথচ আমরা দেখলাম তাদের সাথে আমরা ৩ বারও বসে ফেলেছি। তবে কেন এরকম মিস কমিউনিকেশন। আমরা অংশীজনদের বাহিরেও যারা বাজার সম্পর্কে অভিজ্ঞ তাদের সাথেও আমরা বসেছি। এরপরেও যদি মনে হয় আমরা কিছু বাদ দিয়েছি বা গ্যাপ ছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানালে তা আমরা যুক্ত করে দিব। তবে অংশীজনদের থেকে বেশি আমরা সাধারণ মানুষদের থেকে অনেক কিছু পেয়েছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে নেগেটিভ ইক্যুইটি নিয়ে। যার কারণ বাজার অচল অবস্থায় চলে গেছে। সে অবস্থাটাকে মাথায় রেখে আমরা চিন্তা করেছি, এর অন্যতম কারণ হলো মার্জিন রুলস। কারণ মার্জিন রুলসটা যদি প্ল্যান করে দেওয়া হতো, গভর্নেন্সটা যদি সঠিক থাকতো, তাহলে এ ধরনের অবস্থা তৈরি নাও হতে পারতো। তাই মার্জিন রুলসকে আমরা টপ প্রায়োরিটি আইটেম ধরেছি। পৃথিবীতে মার্জিন রুলসকে শর্টটার্ম ওয়ে হিসেবে নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ১:৩/৪ রেশিওতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হচ্ছে৷ এগুলা কিভাবে হয়েছে? এরপর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি ক্রিয়েট হয়েছে। আমরা চাচ্ছি এই জিনিসগুলোর যেন পুনরাবৃত্তি বাজারে না হয়। মার্জিন নিয়ে আর গ্যামব্লিং করা যাবেনা। মার্জিন নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এতো পরিমাণ নেগেটিভ ইক্যুইটি না থাকলে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি হতো না।

হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন বলেন, আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে ফোকাস গ্রুপ। মূল কাজ করেছে টাস্কফোর্স। আমরা কাজ করতে যেয়ে পাবলিকের কাছ থেকে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকেও পেয়েছি, তবে পাবলিক থেকে পরামর্শ বেশি এসেছে। এটা খুব ভালো বিষয়। কারণ যত বেশি পরামর্শ আসবে, আমরা তত বেশি রিফাইন করার সুযোগ পাব।

সংবাদ সম্মেলনে একটি উপস্থাপনায় পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আজকে আমার খুবই ভালো লাগছে যে, এই প্রথম বাংলাদেশে আইনি ফরমেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে ব্রেইন স্টর্মিং ড্রাফটিং হয়েছে গ্রাউন্ড লেভেল থেকে। এ মার্কেটে যারা কাজ করেন, তাদের আইডিয়াগুলো নিয়েই ড্রাফট করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা বিএসইসির ওয়ার্কিং টিমের সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম। এছাড়া মার্কেটের বড় বড় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব নিয়ে মার্জিন রুলস- ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছি।

এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ স্বাক্ষরিত আদেশে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ গঠন করা হয়। গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং এর সিনিয়র পার্টনার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

ঢাকা/এনটি/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মার্জিন ঋণ নিতে বিনিয়োগ লাগবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা