নয়েজ ফিল্টার করতে পারছে কি নতুন প্রজন্ম
Published: 14th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ নিয়ে ভাবলেই নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে থাকি। ওদের মাথায় কী ঘুরছে, এবং সেটাই বা কীভাবে কাজ করছে—এসব নিয়ে ভাবি। ওরা ঠিকমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে কি না বোঝার জন্য আমি ওদের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট দেখি, নিউজ মিডিয়ার কমেন্টগুলো পড়ি, তাদের কথাবার্তা শুনি।
চেষ্টা করি বুঝতে, কী কথা তারা বলতে চাইছে, যেটা আমরা বুঝতে পারছি না। অথবা, কী বলতে পারছে না, যেটা তাদের আসল ভয়েস। যেটা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে তা হলো, নতুন প্রজন্ম অনেক জায়গায় ‘নয়েজ ফিল্টার’ করতে পারছে না। তাদের বন্ধুদের কথাবার্তা, মা–বাবার শাসন, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ, অন্যের চাপে পড়ে নিজে কিছু করে দেখানোর ইচ্ছা তাদের নিজেদের ভয়েসকে হারিয়ে দিচ্ছে।
আমার বন্ধুদের সঙ্গে যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করি, তখন বুঝতে পারি যে নতুন প্রজন্ম প্রতিদিন যে হাজারও ইনফরমেশন পাচ্ছে, সেগুলোকে তারা ঠিকমতো প্রসেস করতে পারছে না। আমি যখন দেখি আমার পঞ্চাশোর্ধ্ব বন্ধুরাই এই নয়েজ ফিল্টার করতে পারছে না, সেখানে নতুন প্রজন্মের জন্য এটা আরও অনেক গভীরের সমস্যা। তো, সমস্যার শুরুটা কোথায়?
এখন তো আমাদের চারপাশে ইনফরমেশনের বন্যা—ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি চ্যানেল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ আরও কত কী! এত ইনফরমেশন নিয়ে আমরা ওভারলোড হয়ে যাচ্ছি। আজকের দিনে প্রত্যেকটা মানুষের মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—দেশের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে? রাজনীতি নিয়ে যে টানাপোড়েন চলছে, তাতে সবাই একটু চিন্তিত। ট্যাক্স যাচ্ছে বেড়ে প্রতিনিয়ত।
আমরা দেখছি ফেসবুকে কেউ একটা পোস্ট দিল, সঙ্গে সঙ্গে শত শত কমেন্ট। কেউ বলছে এটা ঠিক, কেউ বলছে ওটা ঠিক। টিভি চ্যানেলগুলোতে টক শো চলছে। এক এক্সপার্ট এক কথা বলছে, অন্য এক্সপার্ট অন্য কথা বলছে। ইউটিউবে লাইভ চলছে, সেখানেও শুরু হয়েছে তর্ক-বিতর্ক। এই অবস্থায় একজন সাধারণ মানুষ কাকে বিশ্বাস করবে? কার কথা শুনবে? কীভাবে নিজের ‘ভয়েস’ বের করতে পারবে?
এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করা। বাংলাদেশ এখন ডেভেলপমেন্টের পথে হাঁটছে। দেশ হিসেবে আমরা একা নই। আমাদের অর্থনীতি দিন দিন বাড়ছে। এই সময়ে আমাদের সবার দায়িত্ব হলো দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা ভাবা। কীভাবে সেগুলোকে ঠিকভাবে চালানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা। এর পাশাপাশি, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন আমাদের এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থামিয়ে না দেয়। কারণ, এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উন্নয়ন শুধু আমাদের জন্য নয়, আমাদের পরের প্রজন্মের জন্যও।
তাই তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ—প্রতিটা জিনিস নিয়ে মাথা গরম করবেন না। যেকোনো খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে প্রশ্ন করুন—এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? এর উৎস কী? এটা শেয়ার করলে কার লাভ? দেশের ক্ষতি হবে কি?
নিজের ক্যারিয়ার, পড়াশোনা, ব্যবসা যেটাই করুন, সেটাতে মনোযোগ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকুন। নয়েজ ফিল্টার করার জন্য সময় দিন নিজেকে। আজকে যারা অস্থিরতা ছড়াচ্ছে, তারা কি দেশের ভালো চায়? তারা কি চায় আমাদের ডলারের মজুত কমুক? রপ্তানি কমুক? বিদেশি বিনিয়োগ কমুক? বিদেশি পর্যটকেরা না আসুক? এসব প্রশ্ন নিজেকে করুন।
মনে রাখবেন, আপনি যদি সফল হন, দেশও সফল হবে। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন—এটা কি দেশের জন্য ভালো হবে? আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কি ভালো হবে? এভাবে চিন্তা করলে অনেক ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বাঁচা যাবে।
আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত কীভাবে আমরা সময়সীমার মধ্যে একটা উন্নত দেশ হতে পারি। কীভাবে আমরা জিডিপি বাড়াতে পারি। কীভাবে আরও বেশি রেমিট্যান্স আনতে পারি। কীভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে পারি। এগুলো নিয়ে চিন্তা করলে দেশ এগিয়ে যাবে, আমরাও এগিয়ে যাব।
নয়েজ ফিল্টার করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদের নিজেদের শিক্ষাকে নতুন করে ‘মূল্যায়ন’ করা। স্বশিক্ষিত হওয়া। বুঝতে পারা, কীভাবে সামগ্রিকভাবে দেশের ভালো হয়।
রকিবুল হাসান
টেলিকম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বইয়ের লেখক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ফ ল ট র কর প রজন ম র আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার আশঙ্কা, সতর্কতা থাকার নির্দেশ
দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার শিকার হতে পারে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেছে। তাই ছোট বা মাঝারি ধরনের সাইবার হামলা ঠেকানোর জন্য ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্বপ্রস্তুতিসহ সতর্ক থাকার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, আগামী দিনগুলোতে সাইবার হামলায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (সিআইআই), ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ ব্যাহত হতে পারে। দেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলার শিকার হতে পারে বলে বিভিন্ন উৎস থেকে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
মুদ্রানীতি ঘোষণা বৃহস্পতিবার
জুলাইয়ের ২৭ দিনে ৯ ব্যাংকে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো-সার্ভার, ডাটাবেইস ও সিস্টেমগুলোর প্রয়োজনীয় প্যাচ আপডেট নিশ্চিত করা। অপ্রয়োজনীয় পোর্টগুলো বন্ধ রাখা এবং কম লিস্ট প্যাভিলাইজড অ্যাকসেস নিশ্চিত করা। সংরক্ষিত ডাটার গুরুত্ব ও শ্রেণি অনুযায়ী নিয়মিত ডাটা ব্যাকআপ ও রিস্টোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, প্রয়োজনে ৩-২-১ ব্যাকআপ কৌশল অনুসরণ করা। সব ক্ষেত্রে ট্রান্সজিট, রেস্ট প্রসেস ডাটার এনক্রিপশন নিশ্চিত করা। সব গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমে (ক্রিটিক্যাল সিস্টেমস) মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করা।আইটি সিস্টেমে যেকোনো এবনরমাল বিহেবিয়ার দ্রুত শনাক্ত করার জন্য সিকিউরিটি ইনফরমেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং নেটওয়ার্ক ইনস্টেশন ডিটেকশন সিস্টেমসহ প্রয়োজনীয় সিকিউরিটি সলিউশন টুলসের বাস্তবায়ন করা।
সাইবার হুমকি শনাক্তকরণ এবং প্রতিরোধে ইন্ডপয়েন্ট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স, অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা। কার্যকর সুরক্ষার জন্য এই সিস্টেমগুলোর থ্রেড সিগনেচারস নিয়মিতভাবে আপডেট করা। যেকোন ইনসিডেন্ট হলে ন্যূনতম ইমপেক্টের মাধ্যমে সিস্টেম পুনরায় চলমান করার জন্য প্রয়োজনীয় ইনসিডেন্ট রেসপন্স প্ল্যান প্রস্তুত করা ও ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমের প্রত্যেক সদস্যকে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।
সিস্টেমে সন্দেহজনক লগইন, যেকোন প্রকার অননুমোদিত ফাইল/ডাটা পরিবর্তন এবং এক্সটারনাল সংযোগসমূহ বিশেষভাবে মনিটরিং করা ও প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।রিমোট এক্সেস, ভিপিএনএস এবং প্রিভিলেন্ড অ্যাকাউন্ট রিভিউ করা এবং প্রয়োজনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।
যেকোনো সাইবার আক্রমণের ইন্ডিকেটর অব কম্প্রোমাইজ দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা। পর্যাপ্ত জনবলের মাধ্যমে ২৪/৭ বেসিসে সিকিউরিটি অপরেশন সেন্টার মনিটরিং করা।
সিস্টেমের হাই এভেইলেবিলিটি নিশ্চিত করার নিমিত্তে প্রয়োজন অনুসারে লোড ব্যালেন্সার সলিউশনস স্থাপন করা।সিস্টেম এবং ইনফ্রাস্টাকচার চলমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ফলব্যাক প্ল্যান প্রস্তুত করা।ডিজাস্টার রিকভারি প্ল্যান হালনাগাদ করে কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ