জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে ঢাকার নবাবগঞ্জে মো. মফজেল (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে নবাবগঞ্জ ও পাশের কেরানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুরচর গ্রামে হত্যার শিকার হন তিনি। এ ঘটনায় মফজেলের পরিবারের পক্ষ থেকে আজ রোববার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। 

নিহত মফজেল নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নে দড়িকান্দা গ্রামের মো.

সোবান শেখের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, একই এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের কেনা জমির সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী খালাসি পরিবারের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত বছরের ৪ আগস্ট সালিশ বসে। সেখানে খালাসি পরিবারের লোকজন জাহাঙ্গীরের পক্ষের কয়েকজনকে মারধর করে। এ সময় জাহাঙ্গীরের পক্ষে ছিলেন মফজেল। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করে। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বের হলে পালিয়ে যান মফজেল। 

মফজেলের আত্মীয় কালাম মোল্লার ভাষ্য, শনিবার মফজেল মধুরচরের চঞ্চলের বাড়িতে ছিলেন। রাত ৯টার দিকে চঞ্চল তাকে কল করে জানান, খালাসির লোকজন মফজেলকে ধাওয়া করে বাঁশবাগানের দিকে নিয়ে গেছে। তার খোঁজ পাচ্ছেন না। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই এলাকায় খোঁজ করে মানিক সরকারের বাড়ির পাশে গুরুতর অবস্থায় পাওয়া যায় মফজেলকে। তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানেই মারা যান। 

খবর পেয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা লাশ উদ্ধার করে। মফজেলের বাবা সোবান শেখ বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী খালাসিরা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব আল-হাসান বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ