Samakal:
2025-07-31@21:50:08 GMT

নজর বিদ্যানন্দের স্টলে

Published: 16th, February 2025 GMT

নজর বিদ্যানন্দের স্টলে

‘প্রতি টন কাগজের জন্য ১৭টি গাছের মৃত্যু হয়। আমাদের জ্ঞানের ক্ষুধা মেটাতে যে গাছ আত্মত্যাগ করেছে; তার প্রতি সম্মান জানিয়ে আরেকটি গাছ রোপণ করি’– স্লোগানে চট্টগ্রামে অমর একুশে বইমেলায় স্টল তৈরি করেছে বিদ্যানন্দ। পাঠক-দর্শনার্থী ঘুরেফিরে ভিড় করছেন এই স্টলে।
চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম-সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল রোববার মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যানন্দের স্টলের চারপাশে নানান আকারের গাছের কাটা অংশ। সামনের অংশে ঝুলছে লম্বা আকৃতির গাছের অংশ। রশিতে ঝুলানো গাছের একটি অংশ আবার কাটা; যেখানে রয়েছে রক্তের রং। এর নিচে লম্বা লম্বা গাছের কাটা অংশ দেওয়া হয়েছে পুরো অংশজুড়ে। স্টলের সাইনবোর্ড গাছের তৈরি। সেখানেও রাখা হয়েছে গোল আকারের গাছের একাধিক টুকরো। নামফলকের ডান পাশে লেখা হয়েছে, ‘কাগজ রিসাইকেল করি/বৃক্ষের প্রাণ বাঁচাই।’

পুরো স্টল তৈরি করা হয়েছে গাছের টুকরো দিয়ে। গাছের প্রতি মানুষের নির্মমতা থেকে বৃক্ষনিধন রোধে সচেতনতার বার্তা দিতে এই স্টল। পড়ে থাকা ও অব্যবহৃত গাছ সংগ্রহ 
করে সেগুলোকে নানা আকারে কেটে আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে স্টলটি। এখানে ৫০০ টাকার বই কিনলে দেওয়া হচ্ছে গাছ উপহার। কাগজ রিসাইকেল করে তা দিয়ে গল্প ও কবিতার বই প্রকাশ করেছে একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগঠন।

এই স্টল নিয়ে কৌতূহল দেখা গেছে পাঠক ও দর্শনার্থীর মধ্যে। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন। কেউ আবার হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছেন। এর মধ্যে একজনকে দেখা গেল, কয়েকটি বই কিনে গাছের চারা উপহার পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তাদের একজন কলেজ পড়ুয়া শিমলা। চার বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বইমেলায়। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের পর থেকে মেলায় আসার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সবাইকে একসঙ্গে না পাওয়ায় আসা হয়নি। প্রথমবারের মতো এসে গাছ দিয়ে তৈরি স্টলটি নজর কেড়েছে। সত্যি, এক কথায় দারুণ হয়েছে স্টলটি। গাছের ওপর মানুষের যে নির্মমতা, তা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে।’
তাঁর বান্ধবী কানিজ বলেন, ‘পছন্দের তিনটি বই কিনেছি; সঙ্গে উপহার পেয়েছি গাছের চারা। সত্যি, এ এক অন্যরকম অনুভূতি।’ অনেকে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্টল তত্ত্বাবধায়ক ওমর ফারুক বলেন, ‘গাছের ওপর মানুষের নির্মমতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। আইন থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গাছের প্রতি মানুষের এমন নির্মমতা রোধ করতে ও গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ বাড়াতে এই স্টল তৈরি করা হয়েছে। এখানে ব্যবহৃত সব গাছ নষ্ট ও অব্যবহৃত।’
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা ও পুনর্ব্যবহৃত কাগজে ছাপানো ‘প্রতিধ্বনি’ বইয়ের লেখক কিশোর কুমার দাস বলেন, ‘নির্বিচারে গাছ ধ্বংস রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবাইকে গাছের প্রাণ বাঁচাতে কাগজ পুনর্ব্যবহার করতে হবে। আশা করছি, এটি অনুসরণ করবেন অন্যরাও।’
সংস্থার পরিচালনা পরিষদের সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ব্যবহৃত কাগজ না ফেলে ও না পুড়িয়ে পুনর্ব্যবহার করা হলে একদিকে বৃক্ষের প্রাণ বাঁচবে; অন্যদিকে পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে। আমরা চাই গাছ বাঁচাতে পুনর্ব্যবহৃত কাগজে নতুন বই প্রকাশ করতে এগিয়ে আসুক সবাই।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.

শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোবাইল ও মাদকে আসক্ত। এই আসক্তি থেকে মুক্তি দিতে পারে বই। সৃজনশীল মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতেও বড় ভূমিকা রাখবে বই। বইমেলা সৃজনশীল, মননশীল ও বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে ভূমিকা রাখবে।’
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি ও বইমেলা কমিটির সদস্য সচিব মো. সাহাব উদ্দীন হাসান বাবু বলেন, ‘এবারের মেলায় ১৪০টি স্টলে ভালো ভালো বই এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষ হলেও মলাটবদ্ধ বইয়ের কদর কখনও শেষ হবে না।’
শিশু প্রকাশের মালিক আরিফ রায়হান বলেন, মেলার শুরুর দিকে বই বেচার হার কম হলেও এখন বাড়ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল ব দ য নন দ ন র মমত ব যবহ ত বইম ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ