২৯৯ রোগীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ, ফ্রান্সে এক চিকিৎসকের বিচার শুরু
Published: 17th, February 2025 GMT
চিকিৎসা নিতে আসা অন্তত ২৯৯ রোগীকে ধর্ষণ অথবা যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে ফ্রান্সের একজন চিকিৎসকের বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব রোগীকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ উঠেছে, তাদের অনেকেই শিশু ছিল এবং বেশির ভাগ রোগীকে অচেতন অবস্থায় যৌন নিপীড়ন করা হতো বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠা ওই চিকিৎসকের নাম জো লু স্কোয়ারেনক। তাঁর বয়স এখন ৭৪ বছর। তিনি ২৫ বছরের বেশি সময় শল্যচিকিৎসক (সার্জন) হিসেবে কাজ করেছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি আদালতে তাঁর বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
জোয়েলের বিচার হবে উন্মুক্ত আদালতে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের (যাঁরা শিশু বয়সে জোয়েলের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন) সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বন্ধ দরজার ভেতর।
আঞ্চলিক প্রসিকিউটর বলেছেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই জো বেশ কয়েকটি ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন, সবার চোখের আড়ালে নিপীড়ন করতে তিনি যেসব কৌশল নিতেন, সে সম্পর্কেও মুখ খুলেছেন।’
জোর শিকার হওয়া রোগীদের গড় বয়স ১১ বছর। তবে তাঁর বিরুদ্ধে এক বছর বয়সী একটি শিশুকে ধর্ষণ এবং ৭০ বছর বয়সী একজনকে যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগও রয়েছে।
১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে জো যৌন নিপীড়নের এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সময় তিনি পশ্চিম ফ্রান্সের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কাজ করেছেন।
জোয়ের বিরুদ্ধে ১১১টি ধর্ষণ এবং ১৮৯টি যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিচার হবে। একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি নিজের পদের অপব্যবহার করেছেন এবং দিন দিন তাঁর কুকর্মের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুরাই মূলত তাঁর শিকার হয়েছে।
জোয়ের যৌন নিপীড়নের শিকার ২৯৯ জনের মধ্যে ২৫৬ জনই শিশু ছিল এবং তাদের বয়স ১৫ বছরের কম ছিল।
যদি জো দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
জো অবশ্য এখন কারাগারেই আছেন। চার শিশুকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। ওই চার শিশুর মধ্যে দুজন তাঁর ভাতিজি।
জোয়ের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমন অনেকে পরে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এমনকি কেউ কেউ কয়েক দশক পর তাঁর সঙ্গে ঘটা অপরাধ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
তাঁদের সবাই জোয়েরর বিচার কার্যক্রমের অংশ হতে চান না। তবে অনেকেই বলেছেন, এই বিচারপ্রক্রিয়ায় নিশ্চয়ই এসবের ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।
জোয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয় ২০১৭ সালে। সেবার তাঁর প্রতিবেশী একটি ছয় বছরের বালিকা তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে।
সেই অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জোয়ের কুকর্মের লোমহর্ষ চিত্র উঠে আসে। জানা যায়, জো ১৯৯০–এর দশকে তাঁর দুই ভাতিজি এবং চার বছরের এক রোগীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন।
জোয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পুলিশ অনেকগুলো পুতুল খুঁজে পায়। জো যৌনকর্মে ওই পুতুলগুলো ব্যবহার করতেন। এ ছাড়া পাওয়া যায় প্রায় তিন লাখ পর্নো ছবি।
২০০৫ সালের শেষ দিকে শিশুদের যৌন নিপীড়নের ছবি অনলাইন থেকে নামানোর (ডাউনলোড) অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন জো। সেবার আদালত তাঁকে চার মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়ার আগপর্যন্ত জো বেশ কয়েকটি হাসপাতালে কাজ করেছেন।
জো বিবাহিত ছিলেন এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে তাঁর তিন ছেলের জন্ম হয়। ২০০০ সালের শুরুর দিকে তাঁরা আলাদা হয়ে যান। যদিও ২০২৩ সালের আগপর্যন্ত বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে তাঁরা আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেননি।
২০১৯ সালে জোয়ের স্ত্রী (বর্তমানে সাবেক) এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, স্বামীকে কখনো তিনি সন্দেহ করেননি। যদিও তিনি জোয়েলকে প্রতিবেশী শিশুদের দিকে অস্বাভাবিকভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘জো শয়তানের কবলে পড়েছে.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক কর ছ ন ক জ কর বছর র র বয়স
এছাড়াও পড়ুন:
দশম শতকের অন্ধ আরব কবি আল-মা’আরির ‘লুজুমিয়্যাত’
ভূমিকা
আল-মা’আরি (৯৭৩-১০৫৭), পুরো নাম আবু ল’আলা আহমেদ ইবনে আবদুল্লাহ আল-মা’আরি। উত্তর আলিপ্পর মা’য়ারায় তাঁর জন্ম। তৎকালে আরবের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন তিনি। জন্মের মাত্র চার বছর বয়সে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারান। পরিণত বয়সে তিনি আলিপ্প, অ্যান্টিওকসহ সিরিয়ার অন্যান্য শহর ভ্রমণ করতে সক্ষম হন। এ সময় তিনি সেখানে সংরক্ষিত যাবতীয় হস্তলিখিত পাণ্ডুলিপি মুখস্থ করেন। সেই সময়ে কবিতার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত বাগদাদ শহরে আল-মা’আরি টানা দেড় বছর অবস্থান করেন। তারপর নিজ শহরে ফিরে এসে ‘লুজুমিয়্যাত’ (দার্শনিক ও নৈতিক কবিতার সংকলন) রচনা করেন। এই বিশাল সংগ্রহ এর নিয়মবিরুদ্ধ গঠন এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য সনাতন ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পর্যায়ে পৌঁছায়। যদিও সেই সময় তাঁর কাব্যময় বক্তৃতা শোনার আকর্ষণে হাজারো শ্রোতা মা’য়ারায় এসে একত্র হতেন।
মা’আরি লিখেছেন, ‘ধীশক্তিসম্পন্ন লোকেরা আমাকে বৈরাগী বলে অভিহিত করেন, কিন্তু তাঁদের এই চিন্তাভাবনা আসলে ভুল। আমি আমার কামনা–বাসনাকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। আমি জাগতিক সুখ থেকে পরিত্যক্ত হয়েছি। কেননা সেগুলোর শ্রেষ্ঠতমটিই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।’ অন্য আরও একটি মন্তব্যে তাঁর মানবসঙ্গবিদ্বেষী মনোভাবও প্রকাশ পায়, ‘আমার জ্ঞানের দ্বারা তৈরি সত্তা ধুলায় পরিণত হওয়ার পর থেকে মানুষের সঙ্গে পরিচিতি অনুসারে আমি তাদের সঙ্গ পরিহার করে চলছি।’
‘লুজুমিয়্যাত’–এর ধ্যানে এমন আবেগ রয়েছে, যা গতানুগতিক কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায়নি। বরং তাতে স্বকীয় এক বিশ্বাসেরই আরোপ ঘটেছে। আর এভাবেই তিনি করেছেন নিয়মের ব্যত্যয়। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি আমার ছত্রসমূহে কল্পনা, প্রেম, স্বপ্নের ঘটনা, যুদ্ধের দৃশ্য বা মদের আড্ডার মতো গল্পের বর্ণনা দিইনি। আমার উদ্দেশ্য সত্যকে তুলে ধরা। আজকাল আর কবিতায় সত্যকে তুলে ধরা হয় না। তার বদলে এতে মিথ্যার মাধ্যমে উৎকৃষ্টতাকে আরোপ করা হয়। আমি তাই আমার পাঠকদের সামনে নৈতিকতার কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছি।’
সব ধর্মের প্রতি আল-মা’আরির এই সন্দিগ্ধতা জেনোফেনিস, ক্যারাভেকা ও লুক্রিশাসের সঙ্গে তুলনীয়। অজ্ঞানতা বিদূরিত হওয়ার আগপর্যন্ত পশ্চিমে এমন চিন্তার সন্ধান মেলেনি। সমানভাবে তিনি সেমিটিক ধর্মের প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন। তাঁর মতে, নির্দিষ্ট ধর্মের সাধুরা অন্ধভাবে জন্মানুসারে তাঁদের বিশ্বাস আঁকড়ে আছেন। তাঁদের জন্ম অন্য কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর গণ্ডির ভেতরে হলে তাঁরা তখন সেই ধর্মেরই অনুসারী হতেন। তিনি এমন এক যুক্তিবাদী ছিলেন, যিনি সব ধরনের সনাতনতা ও প্রকাশভঙ্গির ওপর যুক্তির ঠাঁই দিতেন। ক্যারাভেকার মতো তিনিও ধর্মকে পুরোহিতজন আর ধর্মের স্থপতিদের আয় ও ক্ষমতার উৎসের এক মানবীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতেন। তিনি মনে করতেন, এই পুরোহিত ও ধর্মের স্থপতিরা জাল নথিতে স্বর্গের প্রেরণা আরোপ করে জাগতিক সুবিধা লাভে ব্যস্ত।
জৈন ও ব্রাহ্মণদের মতোই আল–মা’আরি জীবনযাপনের শুদ্ধাচারে বিশ্বাসী ছিলেন। একইসঙ্গে কোনো প্রাণীর ক্ষতিরও ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। একপর্যায়ে তিনি নিরামিষভোজীতে পরিণত হন এবং সব ধরনের প্রাণী বধের এবং এর চামড়া পোশাক হিসেবে ব্যবহারেরও বিরোধিতা শুরু করেন।
আল-মা’আরির এসব মতবাদ সমাজের সুবিধাভোগী গোষ্ঠীকে অসন্তুষ্ট করে।
আল-মা’আরির একগুচ্ছ লুজুমিয়্যাতযে বন্ধু সুন্দর করে কথা বলতে পারত
সুন্দর করে কথা বলতে পারে এমন বন্ধুর কথা শুনতে শুনতে
শান্ত নিরিবিলি যে সময়টা পেরিয়ে গেল, সেটাই ধরণীর শ্রেষ্ঠক্ষণ।
প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত জীবনটা কতই না মধুর!
কিন্তু প্রাচীন সময়টা মুখে আজও সেই তারুণ্যের দাঁত ধরে আছে:
তার ধ্বংসলীলায় ছারখার করেছে কতশত শ্রেষ্ঠ জাতি
সর্বত্রই সময় তাদের জন্য কী নিদারুণ কবর খুঁড়েছে—
কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউই সময়কে কবর দিতে পারেনি।
কথা বলা থেকে বিরত থাকা
মানুষ যখন কথা বলা থেকে বিরত থাকে, তখন তার শত্রুও খুব কমই থাকে,
এমনকি নিয়তির কশাঘাতে জর্জরিত হয়ে তার পতনের সময় এলেও।
মক্ষিকারা মানুষের রক্ত পান করে ফুলেফেঁপে ওঠে অতিসন্তর্পণে
এটা তার পাপকে জঘন্যতম থেকে আরও লঘু করে:
মশারা যে পথে গেছে, সেই পথ সে মাড়ায় না মোটেই,
তাদের দামামা শুনে সবাই আগেভাগেই সতর্ক হয়ে যায়।
যদি উদ্ধত কেউ ধারালো কথার তরবারি ছুড়ে দেয় তোমার পানে,
আপন ধৈর্যে তার মোকাবিলা কোরো, যাতে সেই ধার তুমি ভেঙে দিতে পারো।
জন্মান্তরে অবিশ্বাস
বলা হয়ে থাকে আত্মারা দেহান্তরে যায়
শোধনের আগপর্যন্ত তারা দেহ থেকে দেহে ঘোরেফেরে;
কিন্তু অবিশ্বাস কোন সে ভুল তাড়া করে ফেরে,
কারও মন সেই সত্য নিশ্চিত হবার আগপর্যন্ত।
তারপরও তালের মতো যে মাথাটাকে তারা ঊর্ধ্বে বয়ে বেড়ায়,
শরীর তো আগাছারই মতো বাড়তে বাড়তে একসময় মলিন হয়ে যায়।
পানদেয়া ফলা হতে বেরিয়ে থাকা ঝকঝকে পলিস করা পরিধান,
আর তোমার আত্মার কামনাকে লাঘব করে সুস্থির বেঁচে থাকো।
বিজয়ই প্রতিশোধ নেবে
সময় যদি তোমার সহায় হয়, সে তোমাকে
শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধে পুরোপুরি সহায়তা দেবে।
মধ্যাহ্নে দিনগুলো অকেজো হবার মতো এমনই তপ্ত থাকে
যে ভোরের আর্দ্রতার ছায়াও দূরে সরে যায়।
শরীরটা তোমার ফুলদানি
শরীরটা, যা তোমাকে যাপনের কালে একটি আকার দিয়েছে,
সে আর কিছু নয় তোমার ফুলদানি: নিজেকে দিয়ো না ধোঁকা, হে আমার আত্মা!
ভেতরে মধু সঞ্চয়ের জন্য সেই বাটির দাম খুবই কম,
কিন্তু বাটির ভেতরে রাখা সেই জিনিসগুলো অমূল্য ধন।
প্রকৃতি থেকে এখন আর আমি ধার করি না
বোধ আর ধর্মে তুমি জরাগ্রস্ত।
আমার কাছে এসো, তাহলে হয়তো সত্য কিছু শুনতেও পাবে।
জলের উতরে দেওয়া মাছকে অন্যায়ভাবে খেয়ো না,
এবং বধের শিকার প্রাণীর মাংসে লোভ কোরো না,
অথবা মায়ের শুভ্র দুগ্ধে যা সে তার শিশুকে ঢোক টেনে
খাওয়ার জন্য জমিয়ে রেখেছে, মহৎ কোনো নারীর জন্য নয়।
এবং ডিমগুলো কেড়ে নিয়ে আস্থাশীল কোনো পাখিকে দুঃখ দিয়ো না;
এমন অবিচার সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ।
এবং আপতকালের জন্য জমিয়ে রাখা যে মধুমক্ষিকারা বহুশ্রমে
পুষ্প আর সুবাসিত গাছে ঘুরে ঘুরে পেয়েছিল;
তাই সে জিনিস কখনো নিয়ো না যাতে থাকে অন্যের অধিকার,
এমনকি দান, ধ্যান বা উপহারের জন্যও নিয়ো না সেসব।
এত সবের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই; এবং আশা রাখি, আমি
আমার চুল পেকে ধূসর হবার আগেই নিজ পথের উপলব্ধিতে পৌঁছাতে পারব!
মিথ্যা এক চিরন্তন ক্ষতি
কারণ আমাকে তার অনেক কিছুতে বারণ করেছে,
সহজাতভাবে আমার স্বভাব তাতে সদাশয় মুগ্ধ হয়েছিল;
এবং এক অনিঃশেষ ক্ষতি আমি বুঝতে পারতাম যদি, জানতাম,
মিথ্যাভাষণে আমি বিশ্বাস করেছি অথবা সত্যকে করেছি অস্বীকার।
মানুষ কী বেছে নিতে পারে
লোকেরা কি আমাকে অনুসরণ করছে, বিভ্রান্ত করতে,
আমি কি তাদের বিবেচনার সঙ্গে সত্যের পথ দেখিয়েছি
অথবা এমন কোনো সমতল পথে
যেখান থেকে তারা দ্রুতই পৌঁছাতে পারে।
তাই আমি জেগে আছি ক্লান্ত হবার আগপর্যন্ত
সময়ের মাঝে এবং নিজের ভেতরে;
এবং আমার হৃদয় এক এক করে পান করে
জীবনের যাবতীয় অভিজ্ঞতার মাখন।
নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্ব ছাড়া মানুষের বেছে নেবার এমন কী আছে,
যখন নিয়তি তাকে তার ব্যগ্রতার কিছুই দেয় না?
তোমার কী চাওয়ার আছে, যুদ্ধ অথবা শান্তি এনে দেবে:
দিনে দিনে স্বেচ্ছাচারী হাতে এতসব আরোপ করবে
যোদ্ধা এবং শান্তি স্থাপনকারীর পানে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে।
মরণের উদার উপহার
শহরে বসবাস থেকে কে আমাকে উদ্ধার করবে
যেখানে আমি বেমানান গুণকীর্তনে ব্যস্ত থাকব?
ধনী, ধার্মিক, জ্ঞানী—এতসব আমার সুখ্যাতি,
কিন্তু এর ও আমার মাঝে অনেক প্রতিবন্ধকতা:
অজ্ঞানতাকে আমি গ্রহণ করতে পারি, যদিও চিন্তায় প্রাজ্ঞজন
কোন কোন দিক দিয়ে এবং সেটাই কি আমাদের বিস্ময়কর আবরণ?
তাই সত্যি বলতে আমরা কেউই কাজের কিছু নই:
আমিও মহান কেউ নই, তোমরাও আঁকড়ে ধরার মতো কেউ নও।
আমার শরীর জীবনের সংকীর্ণ ধারায় দুর্লভ ক্লান্তি আঁকড়ে আছে
কেমনে আমি সেই ক্ষয়কে দূরে ঠেলে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরি?
হায় মরণের মহান উপহার! ব্যথার চির উপশম
এবং চিৎকারের পর নীরবতা আমাদের দিয়ে যায় সে।