মোজাফ্‌ফর হোসেন কথাসাহিত্য চর্চা করেন। প্রথম উপন্যাস ‘তিমিরযাত্রা’র জন্য তিনি কালি ও কলম সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও ‘অতীত একটা ভিনদেশ’ গল্পগ্রন্থের জন্য পান এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ কথাসাহিত্য পুরস্কার, ‘পরাধীন দেশের স্বাধীন মানুষেরা’ গল্পগ্রন্থের জন্য আবুল হাসান সাহিত্য পুরস্কার, ‘পাঠে বিশ্লেষণে বিশ্বগল্প’ বইয়ের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার এবং ‘নো ওম্যান’স ল্যান্ড’ গল্পগ্রন্থের জন্য চ্যানেল আই-আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার। এরই মধ্যে তার গল্প ইংরেজিসহ হিন্দি, গুজরাটি, নেপালি, ইতালি, জার্মানি, আরবি, ফরাসি ও স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। চলতি বইলেমায় মোজাফ্‌ফর হোসেনের একাধিক নতুন বই প্রকাশ হয়েছে। নতুন বইয়ের প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন এই লেখক। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণে স্বরলিপি।

রাইজিংবিডি : আমরা জানি যে আপনার সদ্য প্রকাশিত ‘Between Two Lives’- বইতে এগারোটি ছোটগল্পের ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে। যে গল্পগুলো আগে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত। এবার ইংরেজিতে প্রকাশের কথা কেন ভাবলেন?
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
বাংলা ভাষায় বিশ্বসাহিত্যের অনুবাদ নতুন ঘটনা না। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে অনুবাদ সাহিত্যের কাছে দারুণভাবে ঋণী। এরপর অনুবাদ সাহিত্যের মাধ্যমে আমাদের সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। কিন্তু বিশ্বভাষায় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ খুব কম হয়েছে। ভাষাভাষীর বিচারে বাংলা ভাষা বিশ্বের ৭ম ভাষা হলেও এই কারণে সাহিত্যের ম্যাপিংয়ে বাংলা সাহিত্যের অবস্থান দৃশ্যত তৈরি হয়নি। আমার মনে হয়, আমাদের এখন বাংলা সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদে জোর দেওয়া উচিত। আমার গল্পের ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ Between Two Lives প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী। এর আগে আমার আরেকটি ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থ Meet Human Meat ইন্ডিয়ার অ্যান্টোনিম থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর সেটির দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হলো। এনিওয়ে, Between Two Lives গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে অধ্যাপক হারুনুজ্জামানের একক অনুবাদে। এটি অনুবাদকের গ্রন্থ বটে। হারুনুজ্জামান বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। তিনি এরইমধ্যে বাংলা ভাষার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট অনুবাদ করেছেন। নিজেও সৃজনশীল লেখক, কবি। তিনিই অনুবাদ করে পাণ্ডুলিপি পাঞ্জেরীতে জমা দেন। আমি মনে করি এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের অগ্রজ লেখকদের সাহিত্য নিয়ে আরো বেশি করে গ্রহণ করা উচিত। 

রাইজিংবিডি: এক্ষেত্রে, মানে বাংলা সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ কি হতে পারে বলে মনে করেন? 
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
অনেক কিছু করার আছে। তবে একটা উদ্যোগের কথা যদি বলতে হয়, তাহলে বলব বাংলা ভাষা জানা বিদেশি, বিশেষত ইউরোপীয় ও আমেরিকান অনুবাদকদের আমাদের সাহিত্যের ইংরেজি অনুবাদকর্মে আগ্রহী করে তুলতে হবে। সম্প্রতি কোরীয় লেখক হান কাংয়ের সাহিত্যে নোবেলজয়ের ঘটনাটি আমাদের জন্য ভালো একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। তার বই স্বদেশি কোনো অনুবাদক ইংরেজিতে অনুবাদ করেননি, স্বদেশ থেকেও প্রকাশিত হয়নি। কাংয়ের অনুবাদক ডেবোরাহ স্মিথ ব্রিটিশ অনুবাদক। বইটি প্রথমে ইংল্যান্ড, পরে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত হয়। সে—বছরই (২০১৬) দি ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ জিতে নেয়। এর মাত্র আট বছর পর তিনি পেয়ে গেলেন সাহিত্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, নোবেল পুরস্কার। অনুবাদের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হান কাং পারলে কেন বাংলাদেশের কোনো লেখক নন? এই প্রশ্নটা আমাদের করতে হবে। প্রশ্নটা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন নিয়ে নয়, প্রশ্নটা আন্তর্জাতিক মার্কেটে পৌঁছানো নিয়ে। বাংলা ভাষায়ও উৎকৃষ্ট মানের সাহিত্য সব সময় রচিত হয়ে আসছে, বিশ্বসাহিত্যের পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ ‘আনএক্সপ্লোর্ড’ থেকে গেছে সেটা। এই কারণেও আমাদের সাহিত্যের সম্ভাবনাও বেশি। যা কিছু নতুন তার প্রতি পাঠক সব সময় আকৃষ্ট হন।   

আরো পড়ুন:

কবি গালিব রিমান্ডে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি চান বিশিষ্টজনেরা

বইমেলায় আবু আককাসের দুই বই

রাইজিংবিডি:  আপনিতো বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগে কর্মরত।অনুবাদ সাহিত্য সম্প্রসারণে সম্প্রতি কি ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান?
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
একাডেমির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই যে দুটি বিভাগ সৃষ্টি হয়েছিল তার একটি ছিল অনুবাদ। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলা সরকার বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সেখানে বলা হয়েছিল: The Academy will in course of time not only grow into a centre for translation and publication of philosophical, technical, scientific and literary works from other languages, but will also be a centre for research and discussions among scholars of the Bengali Language.

ফলে ১৯৫৭ সালের ১৮ই মে বিভাগসমূহ নতুন করে সাজানো হয়। এবং ছয়টি বিভাগ করা হয়। সেখানেও স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে অনুবাদ বিভাগ ছিল। ফলে আমরা অনুমান করতে পারি, বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা কাল থেকে অনুবাদ খুব গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা যেটা দেখি, স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে অনুবাদ বিভাগ আর থাকেনি। ১৯৮২ সালে একাডেমির বিভাগসমূহ নতুনভাবে সাজানো হয়। সেখানে অনুবাদ বিভাগ উপ-বিভাগে পরিণত হয়। এবং এখন পর্যন্ত অনুবাদ উপ-বিভাগ হিসেবেই আছে৷ আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই উপবিভাগে কাজ করছি ২০১৬ সাল থেকে। অনুবাদ উপবিভাগ থেকে প্রতি বছর অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। অনুবাদবিষয়ক প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করা হয়। গত ছয় বছরে প্রায় ত্রিশটির মতো অনুবাদগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মীর মোশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু', নীলিমা ইব্রাহিমের ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি', সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি', হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’, রাবেয়া খাতুনের ‘মেঘের পর মেঘ’, রিজিয়া রহমানের ‘অলিখিত উপাখ্যান’, সুফিয়া কামালের ‘একাত্তরের ডায়েরী’, প্রভৃতি বাংলা গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদসহ বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

রাইজিংবিডি: বিশ্বসাহিত্যের অনেক বই বাংলায় অনুবাদ করা হচ্ছে। দেখা যায় যে একই লেখকের বই একাধিক প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হচ্ছে। অনুবাদ সাহিত্য প্রকাশের সঠিক প্রক্রিয়াটা আসলে কী?
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
আপনি যথার্থ বলেছেন। আমি এ বছর লক্ষ করলাম, হানং কাংয়ের ‘ভেজিটেরিয়ান’ উপন্যাসের প্রথম বাংলা অনুবাদ ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়। নোবেল পাওয়ার চার মাসের মধ্যে সেই উপন্যাসের আরো ৩টি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে এ বছর মেলায়। এ-মেলায় হান কাংয়ের ‘দ্য হোয়াইট বুক’ উপন্যাসের অনুবাদ বের হয়েছে ৫টি। ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’-এর ২টি। অর্থাৎ এক বইমেলাতেই হান কাংয়ের ৩টি উপন্যাসের ১১টি অনুবাদ পাওয়া যাচ্ছে। খুব ভালো কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পাঠক কোনটা পড়বেন? একজন পাঠকের জন্য তো বিরাট সমস্যা! আমার জানা মতে, এর কোনোটিই কপিরাইট নিয়ে অনুবাদ করা না। কেউ একটি উপন্যাসের কপিরাইট নিয়ে অনুবাদ করলে কিন্তু সেটার দ্বিতীয় অনুবাদ বের হতো না। 

রাইজিংবিডি:  কপিরাইট নিতে অসুবিধা কোথায়?
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কপিরাইট নেওয়া সহজ ব্যাপার না। অনেক বাধা আছে। প্রথমত, সময় সাপেক্ষ। কপিরাইট নিয়ে অনুবাদ করতে গেলে নোবেল পাওয়ার দু মাসের মধ্যে কোনো লেখকের বই অনুবাদ করে প্রকাশ করা সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, ব্যয় সাপেক্ষ। কপিরাইট কিনতে অনেক অর্থ ব্যয় হলে সেটা বইয়ের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। তৃতীয়ত, অনেক সময় তারপরও কপিরাইট পাওয়া যায় না। আমি নিজে আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে প্রিয় একটি উপন্যাস আর অনুবাদ করতে পারিনি। এই সমস্যাগুলো বলার পরও বলতে হচ্ছে, সমস্যা এড়াতে হলে আমাদের কপিরাইট নিয়ে অনুবাদ করতে হবে। অনূদিত বইয়ের মূল্য তাতে বাড়বে, বাড়ুক। এক্ষেত্রে প্রকাশকদের এগিয়ে আসতে হবে। কপিরাইটের জন্য আবেদন করা, তার অর্থ পরিশোধ করা প্রকাশকের কাজ কিন্তু। কপিরাইট গ্রহণ করার কথা বললে অনেক সময় অনুবাদকেরা বিরক্ত হন। আসলে কাজটি কিন্তু তাদের না। আমি কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে চিনি, এর মধ্যে তরুণ প্রকাশকও আছেন, যারা কপিরাইট গ্রহণ না করে কোনো বইয়ের অনুবাদ ছাপেন না। তার মানে, আমরা চেষ্টা করতে তো পারি। চেষ্টা না করে হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত না।   

রাইজিংবিডি: বাংলা সাহিত্য সম্প্রসারণে ‘বাংলা ট্রান্সেলেশন ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।
মোজাফ্‌ফর:
এই যে কপিরাইট নিয়ে কথা হচ্ছিল, এই বিষয়েও বাংলা ট্রান্সলেশন ফাউন্ডেশন কাজ করবে। প্রকাশকদের সহযোগিতা করবে। ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করেন অনুবাদক আনিসুজ্জামান ও গদ্যলেখক শাহাব আহমেদ। দুজনেই প্রবাসে থাকেন। তাদের স্বপ্ন বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিকতায় এবং অনুবাদকদের সাংগঠনিক ও টেকনিক্যাল কাজে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। আমিও প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তাঁদের এই মহান উদ্যোগের সুঙ্গী হই। ফাউন্ডেশনটি এরই মধ্যে অনুবাদপত্রিকা প্রকাশ করছে, অনুবাদ সাহিত্যে পুরস্কার দিচ্ছে। বিদেশি দুটি অনুবাদ সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশে পাঞ্জেরী পাবলিকেশনস-এর সঙ্গে যৌথভাবে অনেকগুলো কাজ করছে। এবার সেই চুক্তির আওতায় পাঞ্জেরী থেকে প্রায় দশটি অনূদিত বই প্রকাশিত হবে।    

রাইজিংবিডি: সামাজের কঠিন ও নৃশংস রূপ প্রকাশে জাদুবাস্তবতা এবং পরাবাস্তবতাকেই কি সবচেয়ে উপযুক্ত মনে করেন? কেন?
মোজাফ্‌ফর হোসেন:
এটা প্রথমত আমি ন্যাচারালি পেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এভাবে গল্প বলতে আমি আনন্দ পাচ্ছি। একজন মৃত মানুষ উঠে আসছে কবর থেকে তারপর কিছু অদ্ভূত ঘটনা ঘটছে, এর মধ্যে মজা আছে। কিংবা কারো মাথা নেই, মাথাবিহীন হেঁটে বেড়াচ্ছে একটা দেশের মানুষ, এই বলার মধ্যে উদ্দীপনা আছে। কিন্তু পরে মনে হলো, শুধু আনন্দই না, এভাবে গল্প বলা এক ধরনের রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে। আমি জাদুবাস্তব বা পরাবাস্তব এভাবে ভাবি না। আমি চাই অস্বভাবী চরিত্র কিংবা অবাস্তব ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতাকে দেখতে। রাজনৈতিক ঢাল বললাম এই কারণে যে, এতে বিপদ এড়ানো যায়। আমি নিজে একাধিকবার রক্ষা পেয়েছি। তাছাড়া, আমাদের নৃশংসতার একটা মিথিক ভার্সন তৈরি করতে পারলে সেটার একটা স্থায়ী ছাপ সাহিত্যের মাধ্যমে থেকে যেতে পারি। আপনি অ্যানিমাল ফার্ম কিংবা গ্যালিভার্স ট্রাভেলস উপন্যাসের কথা ভাবেন! মহৎ আর্ট আসলে সাধারণ বাস্তবতাকে অতিক্রম করে নানা সম্ভাবনা ও বহুকৌণিক এলিগরি হয়ে ওঠে। আমি নিশ্চিত করেই ততবড়ো আর্টিস্ট নই, কিন্তু আদর্শ হিসেবে এটা সামনে থাকে। 

রাইজিংবিডি:  আপনার আরেকটি বই ‘কল মি লাইকা’ সম্পর্কে জানতে চাই।
মোজাফ্‌ফর:
এটা আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। আগেরটা ছিল ‘তিমিরযাত্রা’। এই উপন্যাসের প্রটাগনিস্ট প্রকৃতি-অন্তপ্রাণ আলেক; সব সময় নিজের চিন্তাজগতে বসবাস করা এক কিশোর। কিন্তু একটা ‘বিশেষ’ কারণে সমাজে তার আশ্রয় হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে বাবা-মা। পরিত্যক্ত আলেকের আশ্রয়হীন নিঃসঙ্গ জীবন, ওর বেঁচে থাকার স্বপ্ন এটা নিয়েই এগিয়ে যায় গল্পটা। লোকায়ত প্রেক্ষাপট, অকৃত্রিম ভাষা ও ঘরোয়া শব্দে আত্মকথনের ঢঙে বলা ‘অস্পৃশ্য’, অনাশ্রিত জীবনের এই গল্প পাঠকদের নানাভাবে পীড়িত করবে, প্রশ্নবিদ্ধও করবে। এটা নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। বইটি প্রকাশ করেছে ক্রিয়েটিভ ঢাকা।  

রাইজিংবিডি:  আর কোনো বই প্রকাশিত হয়েছে?
মোজাফ্‌ফর:
একটা প্রবন্ধের বই, ‘ব্রাহ্মসমাজে ইসলাম, সাহিত্যে সক্রিয়তাবাদ ও অন্যান্য’ শিরোনামে। প্রকাশ করছে বিদ্যাপ্রকাশ। বইটির একটা অংশজুড়ে আছে উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে বাংলা গদ্যে ইসলামধর্ম চর্চার প্রসঙ্গ। তখনো বাংলা গদ্যে ইসলামচর্চা শুরু হয়নি, প্রকাশিত হয়নি কোরানশরিফের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ। খ্রিষ্টধর্ম প্রচারে নিয়োজিত খ্রিষ্টান মিশনারির উদ্যোগে হজরত মোহাম্মদ (সা)-এর জীবনী বিকৃতরূপে প্রকাশ করে ইসলাম সম্পর্কে অপপ্রচার করা হচ্ছে। সেই সময় হিন্দুসমাজ থেকে কয়েকজন পণ্ডিত ব্রাহ্মসমাজের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে আধুনিক বাংলা গদ্যে নবীজীবনী ও ইসলাম-সম্পর্কিত রচনায় হাত দিলেন। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো বাংলা ভাষায় কোরানের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ, মহানবীসহ গুরুত্বপূর্ণ চার নবী ও খলিফাদের প্রথম জীবনী, হাদিসগ্রন্থের অনুবাদ। এসব গ্রন্থ রচনার পেছনে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা কেমন ছিল, নন-মুসলিম হয়েও তাঁদের ইসলামধর্ম-চর্চার উদ্দেশ্যই-বা কী ছিল, তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি এই গ্রন্থে ইসলাম ও হজরত মোহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গি ও মুসলমান প্রজাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের চিত্রটা উঠে এসেছে সবিস্তারে। গ্রন্থে সাম্প্রতিক সময়ে চর্চিত বেশ কিছু বিতর্কের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। সমাজ বদলে সাহিত্যের ভূমিকা কী হতে পারে, লেখক কোন্ মানুষের জন্য লিখবেন, কার কথা লিখবেন, শিল্পের নন্দনতত্ত্বের সঙ্গে লেখকের সামাজিক অ্যাক্টিভিজমের কোনো দ্বন্দ্ব আছে কি না প্রভৃতি প্রসঙ্গ উঠে এসেছে অপরাপর প্রবন্ধে। বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে প্রতিবন্ধকতা ও সাহিত্যের রাজনীতি নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আমরা শুরুতে যে অনুবাদ সাহিত্যের প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম, সে প্রসঙ্গে এবং বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিকতা প্রসঙ্গেও আমি আমার চিন্তা ও অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার চেষ্ঠা করেছি। 

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন ব দ স হ ত য অন ব দ ব ভ গ উপন য স র র অন ব দ ফর হ স ন এক ড ম র প রসঙ গ ব স তবত আম দ র র জন য বইয় র ইসল ম র একট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

রাখাইনে করিডোর কি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশার আলো দেখাবে

রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে নতুন আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর সূত্রপাত হয় সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে হিউম্যানিটারিয়ান বা মানবিক করিডর গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

গত দুই মাসে রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে ক্রমাগত নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলমান। রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয় মার্চ মাসে, যখন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে পবিত্র রোজার মাসে তাদের সঙ্গে ইফতার করেন।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাদের মেহমান উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রত্যাশা করেন আগামী রোজা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে করতে পারবেন। 

পরবর্তী সময়ে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে একটি পার্শ্ব আলোচনার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে নীতিগতভাবে সম্মত।

এ নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে একধরনের ধোঁয়াশা কাজ করে। কেননা, আরাকান আর্মিকে উপেক্ষা করে এ ধরনের মন্তব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে খুব বেশি আশার আলো দেখাবে না। এর বেশ কিছুদিন পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে সহিংস দ্বন্দ্ব চলমান, সে প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনই সম্ভব নয়। 

এই চলমান আলোচনায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয় রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার আলোচনার মাধ্যমে, যদিও এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে তাঁদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এমন নানামুখী আলোচনায় জনমনে বিভ্রান্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার প্রধান যুক্তি হলো, এতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনের সামগ্রী পাঠানো সম্ভব হবে। 

মানবিক করিডর ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আলোচনার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক মানবিক করিডর বলতে আসলে কী বোঝায়। 

জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতির সাময়িক বিরতির জন্য অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার মধ্যে একটি হলো মানবিক করিডরের প্রস্তাব।

এই মানবিক করিডরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়, যেখানে সশস্ত্র সংঘাত যেন না ঘটে। সে বিষয়ে দুই পক্ষ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একমত হয়। মানবিক করিডরের পরবর্তী ধাপে সেই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের একটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা হয়। 

এ ধরনের মানবিক করিডরের উদাহরণ আমরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। এখানে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হবে, সেটাই প্রত্যাশা করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রেডক্রস এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদি শিশুদের যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর, নব্বইয়ের দশকে সারায়েভো সংকট, ২০১৮ সালে সিরিয়ার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা এবং সর্বশেষ দেখতে পাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে।

যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা। 

রাখাইনকে ঘিরে মানবিক করিডর গড়ে তোলার এই নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে গবেষক, রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন, আশঙ্কা ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তবে শঙ্কার পাশাপাশি কোনো কোনো গবেষক মনে করছেন, মানবিক করিডরের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার চলমান সংলাপ আরও জোরদার হবে, যা ভবিষ্যতে এই সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

তবে এই ইতিবাচক প্রত্যাশা ছাপিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে যে দ্বিধা রয়েছে, সেটি হলো এই মানবিক করিডরের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হবে, নাকি আরও বিলম্বিত হবে, নাকি আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পাবে। 

ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি, এক লাখের ওপরে রোহিঙ্গা শরণার্থী আবারও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ এই দায় যেমন এড়িয়ে যেতে পারছে না, তেমনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার ভারও বহন করতেও হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ তাদের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মানবিক করিডর কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কেননা, কোনো বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আমাদের সামনে নেই। 

অতীতের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, মানবিক করিডরের অন্যতম প্রধান ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিগোষ্ঠীকে সংঘাতপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে চলমান অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেখানে মানবিক করিডরের মাধ্যমে আরও বৃহৎ অংশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় শুরু অস্বাভাবিক নয়। 

এ প্রেক্ষাপটে যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা। 

এর বাইরে আরেকটি চিন্তার জায়গা হলো সীমান্ত এলাকা বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সেটি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখলে বোঝা যায়, সীমান্ত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা খুব যে সুখকর, সেটি বলা যাবে না।

এ ছাড়া এই অঞ্চল বিভিন্ন কারণে মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, সহিংসতা ও অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকির জন্য একটি অন্যতম হটস্পট, যা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের নানাভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মানবিক করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে, সে বিষয়েও যথাযথ পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থেই আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হবে। 

এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা, এর পরবর্তী পরিণতি ও ব্যবস্থাপনার দায়দায়িত্ব ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেই গ্রহণ ও বহন করতে হবে। যদিও জাতিসংঘের মানবিক করিডরের প্রস্তাব বেশ পুরোনো, কিন্তু তড়িঘড়ি করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। শরণার্থী বিষয়ে একটি টেকসই রূপরেখা এবং পরিকল্পনানীতি না থাকার কারণে সরকারকে অ্যাডহক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাজনক হয়। 

এসব বিবেচনায় নিয়ে একজন গবেষক হিসেবে আমি বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি জাতীয় রোডম্যাপ বা রূপরেখা এবং শরণার্থীবিষয়ক নীতি প্রণয়ন করার পক্ষে কথা বলে আসছি। আমাদের সে ধরনের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বিগত সময়ে ছিল না। বিশেষ করে যদি প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয় এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর আমাদের প্রত্যাশামতো কাজ না করে, তাহলে বিকল্প কী হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আমাদের থাকা উচিত। সেটি না হলে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে এবং তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন একটি ‘মিথ’ হিসেবে থেকে যাবে, যা আমাদের ও রোহিঙ্গা উভয়ের জন্যই হতাশার একটি বিষয় হবে। 

বুলবুল সিদ্দিকী সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ