ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। গতকাল সোমবার রাত দেড়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে যানজট শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তিন দিকে যানজট বাড়তে থাকে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর থেকে যানজট তুলনামূলকভাবে কমলেও ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

এর আগে আজ সকাল ছয়টার দিকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত এ জট ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহনের কয়েক হাজার যাত্রী, চালক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে তৃতীয় ধাপের বিশ্ব ইজতেমা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী যাত্রীবাহী একটি বাস গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ইসলামাবাদ এলাকায় কাত হয়ে মহাসড়কের ওপর আছড়ে পড়ে। এরপর ওই এলাকা থেকে যানজট শুরু হয়। ধীরে ধীরে যানজট ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ে।

সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। ভারতকে ট্রানজিট–সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ পাঁচ বছর ধরে চলছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানে ধীরগতিতে কাজ চলছে। এটিকেও যানজটের অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এর মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারদিকে আছে ছোট–বড় অসংখ্য গর্ত। এ গর্তের ওপর দিয়ে যানবাহন চলে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে। এতে একদিকে ঢাকা-সিলেট ও অন্যদিকে চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিন দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে এসে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকার ছোট-বড় গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে ৮ থেকে ১০ দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। হাইওয়ে পুলিশ ও সরাইল থানার পুলিশ যানজট নিরসনে তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে কিছুটা থেমে থেমে চলছে যানবাহন।

সকাল ৯টার দিকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক মোস্তফা (৩৩) বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় বলেন, বগুড়া থেকে আলু নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এসেছেন। ভোরবেলা সরাইল বাজারের দিকে যাচ্ছেন। এই সামান্য পথটুকুই এগোতে পারছেন না। সকাল নয়টার আগে মাল নামানোর করার কথা। কিন্তু কখন যেতে পরবেন, তা জানেন না।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একদিকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়কে অসংখ্য গর্ত, অন্যদিকে গোলচত্বরের আশপাশের ফুটপাত ও সড়কের অংশ আছে অবৈধ দখলে। এগুলো উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় এক নেতার বাধা আসে, তাই পারা যায়নি। অবৈধ দখল ও এসব গর্তের কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কে যানবাহন চলে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে, কিন্তু এই স্থানে এসে যানবাহনগুলোকে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে চলতে হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় দ র ঘ য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ