চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ম্যাচ কোনটি? অবশ্যই ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ।

রোববার দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী। রাজনৈতিক ও ক্রিকেটীয় সম্পর্ক বৈরী হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারত ও পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ কমই দেখা যায়। ওয়াসিম আকরাম-শচীন টেন্ডুলকারদের সময়ে মাঠে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ ছিল, তা এখন যেন কিছুটা মিইয়ে গেছে। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে আগ্রাসন এখন খুব বেশি চোখে পড়ে না।

আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর দিনে র‌্যাঙ্কিংয়ে বড় পরিবর্তন২ ঘণ্টা আগে

ভারত-পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মধ্যে অবশ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আগেও ছিল, তবে সেটা এক পাশে সরিয়ে রেখেই মাঠের লড়াইয়ে আগ্রাসন দেখা যেত। জাভেদ মিঁয়াদাদ-কিরণ মোরে, ভেঙ্কটেশ প্রসাদ-আমির সোহেল, শহীদ আফ্রিদি-গৌতম গম্ভীর—এমন ছোট ছোট অনেক দ্বৈরথেরই নাম বলা যাবে, যেখানে তাঁরা মাঠের লড়াইয়ে একে-অপরকে চোখ রাঙিয়েছেন, জড়িয়েছেন বাগযুদ্ধে। সময় গড়িয়ে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই দ্বৈরথে এখন সেসব প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই বললেই চলে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে স্টার স্পোর্টসের অনুষ্ঠানে এ নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদির কাছে। মাঠে এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে কেন আগ্রাসন দেখা যায় না? এই প্রশ্নের উত্তরে আফ্রিদি মজা করে বলেছেন, ‘এখনকার খেলোয়াড়েরা তো সব ম্যাকডোনাল্ডস ও কেএফসি প্রজন্ম।’

আফ্রিদির এই কথার প্রতিক্রিয়ায় দর্শকসারি থেকে বলা হয়, ‘আগ্রাসন দেখানোর মতো ফিটনেসই তাঁদের নেই।’ এ সময় মঞ্চে অতিথির সারিতে আফ্রিদির সঙ্গে বসে থাকা ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান যুবরাজ সিং সেই মজা করে বলেন, ‘ফিটনেস নিয়ে আর কথা বলবেন না।’

আরও পড়ুনভারতীয়দের সব প্রশ্নেই নাহিদ রানা৪০ মিনিট আগে

খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ারে মাঠে অসাধারণ ফিল্ডার হলেও ফিটনেস ঠিক রাখতে একটা সময় স্ট্রেচিংয়ে তেমন আগ্রহী ছিলেন না যুবরাজ। ফিটনেসের প্রসঙ্গ তুলে সেসব স্মৃতি আর টেনে আনার দরকার নেই, মজার ছলে যেন এমনটাই বোঝালেন।

ভারতকে হারিয়ে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতে পাকিস্তান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টন স

এছাড়াও পড়ুন:

সমাজের মধ্যে আরেকটা সমাজ গড়ে তুলেছিল ‘বেগম’ 

দেশভাগের পর থেকে  এ জনপদের নারীদের সামাজিক ও মনস্তাত্বিক উন্নয়নে প্রভাব বিস্তার করেছিল ‘বেগম পত্রিকা’। শহুরে সংস্কৃতিতেই শুধু নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছে বেগমের আবেদন ছিল অনেক বেশি। গ্রামে  খোলা ডাকে পৌঁছাতো ‘বেগম’ বেগম পত্রিকা। ওই সময় যারা অল্পবিস্তর লেখাপড়া জানতেন তারা যেমন বেগম পত্রিকার পাঠক ছিলেন, তেমনি উচ্চশিক্ষিতরাও বেগম পড়তেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাকযোগে পত্রিকাটা যেত। মজার একটা ডাক ব্যবস্থা ছিল, ‘বুক পোস্ট’। এই মাধ্যমে স্বাভাবিক ডাক মাশুলের চেয়ে অনেক কম পয়সায় একটি ডকুমেন্ট এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো যেত। আমার মনে আছে পঁচিশ পয়সায় একটি পত্রিকা চলে যেত ঢাকা থেকে। একটু ফোল্ড করে ওপরে একটি কাগজে ঠিকানা আর পঁচিশ পয়সার একটা স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেওয়া হতো। তখনকার দিনে নিয়ম ছিল, আপনি কম টাকায় খোলা ডাকে ডকুমেন্ট পাঠাতে পারবেন। যেখানে একটি চিঠি পাঠাতে খরচ হতো আট আনা। 

যদিও বেগম মূলত নারীদের পত্রিকা। কিন্তু তখনতো খুব কম মেয়েই ছিল যে স্কুল কলেজে যেত। অনেক গ্রাম ছিল, যেখানে কোনো প্রাইমারি স্কুলই ছিল না। প্রাইমারি স্কুল খুঁজতে আবার আরেক গ্রামে যেতে হতো। আশির শুরুর দিক পর্যন্ত এই চিত্র ছিল। কিছু মানুষ ব্রিটিশ আমলে চাকরিসূত্রে পরিবারসহ শহরে থাকতেন। যখন দেশ ভাগ হয়ে গেলো তখন তাদের অনেকেই গ্রামে ফিরে আসলেন। এবং তাদের মনে ওই যে ‘শহর’ ছিলো, ওই যে শহুরে সংস্কৃতিতে জ্ঞান চর্চা, লাইব্রেরিতে যাওয়া— ওই সংস্কৃতি তারা গ্রামে পেলেন না। তখন এই অভাবটা পূরণ করতো বেগম, সওগাত, মোহাম্মদী পত্রিকাগুলো।  আমার নিজের দেখা যেটা, বেগম পত্রিকাটা পড়া হতো একেবারে সম্মিলিতভাবে। গ্রামে হয়তো একটা বাড়িতে বেগম রাখা হতো। সবাই ওই বাড়িতে যেতেন পত্রিকাটা পড়তে, কেউ কেউ যেতেন শুনতে। বেগম যে শুধু নারীর পত্রিকা তা কিন্তু নয়।মজার ব্যাপার হলো বেগম পুরুষেরাও পড়তেন।

আরো পড়ুন:

‘ব্লু লাইট’ যেভাবে ঘুমের ক্ষতি করে

কাজ নাকি কাজের ‘রেজাল্ট’কে প্রাধান্য দেবেন?

নিজের দেখা, আমার মায়ের দাদি, এবং আমার মায়ের মা অর্থাৎ আমার নানি ওনারা এই পত্রিকা পড়তেন। মায়ের দাদা ছিলেন তেজগাঁও থানার ওসি। তিনি যখন গ্রামে ফিরে গেলেন। তখন এই যে শহরকেন্দ্রিক তার যে পদচারণা ছিল, সেইটার ধারাবাহিকতা রক্ষা হলো বেগম পত্রিকার মাধ্যমে। কারণ তারা গ্রামে পর্যাপ্ত বই পায়নি, লাইব্রেরিতো ছিলোই না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তৎকালীন যে সমাজ কাঠামো, সেটা নারী শিক্ষাবান্ধব ছিল না। নারীদের পড়াশোনা করা সমাজ খুব একটা ভালো চোখে দেখতো না। আজকের নারী সমাজের যে অগ্রগতি দেখি তার ভিত্তিমূলে গেলে বেগমের একটা বিশাল ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যাবে। বেগমের নারী পাঠক যারা ছিলেন, তারা সচেতন মা হয়ে উঠেছিলেন। উনাদের সন্তানদের পরবর্তীতে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যায় পড়তে হয়নি। তারা শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে গেছে। আমার মা এবং নানিকে দেখেছি বাড়ির শিশুরা ও পুরুষেরা ঘুমিয়ে গেলে অল্প আলোতে বেগম পত্রিকা পড়তেন। দিনের বেলায় হয়তো কাজের জন্য পড়তেন না। রাতে নিজে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পত্রিকাটা পড়তেন তারা। এখনকার মতো ঝলমলে ছিল না বেগম। নিউজপ্রিন্টের কাগজে ছাপা হতো। দেখতে এখনকার ম্যাগাজিনের মতো ছিল না। বর্তমান একটি দৈনিক পত্রিকা ভাঁজ করলে যেমন দেখায়, অনেকটা ওই আকারে প্রকাশ হতো বেগম। সমাজপতিরা বলতেন, বেগম ‘মিস লিড’ করছে নারীদেরকে। নারীদের মাথা নষ্ট করে ফেলছে। আমার জানা মতে, বেগম পত্রিকা যারা পড়তেন তারা সামাজিকভাবে এগিয়ে থাকা মানুষ।

পশ্চাৎপদ একটি গোষ্ঠী যাদেরকে সমাজ সহযোগিতা করছে না, বরং সমাজ তাদেরকে আরও পেছনের দিকে ঠেলছে; যাতে তারা সামনে আসতে না পারে—সেই জায়গায় একটা আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করেছে বেগম পত্রিকা। কারণ সব রকম তথ্য, তত্ত্ব এক জায়গায় করে একটি মলাটের মধ্যে- এই ধরনের মন মানসিকতা যাদের ছিল তাদের কাছে উপস্থাপিত হতো। এবং সেই খানে তৎকালীন ফ্যাশন, সিনেমা, নাটক, সাহিত্য তুলে ধরা হতো। এই লেখাগুলো তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতো। 

‘বেগম’ পড়া আর না পড়া মানুষের মধ্যে পরিষ্কার পার্থক্য ছিল। চলাফেরা, বাচনভঙ্গিতে অনেক এগিয়ে থাকতেন বেগমের পাঠক। সেক্ষেত্রে বলা যায়, ৫০ থেকে ৮০- এর দশক বা তার পরেও নারীর সার্বিক মননশীলতা উন্নয়নে বেগমের ভূমিকা নিঃসন্দেহে অপরিসীম। অন্দরে থাকা নারীদের বিশ্বমুখী মনন গঠনে বেগম একটা দারুণ ভূমিকা পালন করেছে। সমাজের মধ্যে আরেকটা সমাজ গড়ে তুলেছে বেগম।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সমাজের মধ্যে আরেকটা সমাজ গড়ে তুলেছিল ‘বেগম’