কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সে পর্যন্ত অপেক্ষার প্রয়োজন পড়ছে না প্রার্থীদের। বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে সমিতির ১৫টি পদে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁরা সবাই বিএনপি–সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবী।

বুধবার বিকেলে যাচাই-বাছাইয়ে তাঁদের সবার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এখন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথম আলোকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একসঙ্গে সবাই বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। সর্বশেষ গত বছররে ৭ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২৫ সেশনের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ১৫টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০টিতে আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেন। বাকি পাঁচটিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা বিজয়ী হন। আওয়ামী লীগ–সমর্থিত আইনজীবীদের কেউই এ বছর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি।

আওয়ামীপন্থী আইনজীবীদের ভাষ্য, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন, এমন ৩২ আইনজীবীকে সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি মামলায় হয়রানিমূলকভাবে আসামি করা হয়েছে। যার কারণে আওয়ামী লীগপন্থী কোনো আইনজীবী মনোনয়ন ফরম কিনতে পারেননি।

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র জানায়, গত সোমবার ২০২৫-২৬ সেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র সংগ্রহের তারিখ। বুধবার জমা এবং একই দিন বিকেলে যাচাই-বাছাই। বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, ২৩ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও আগামী ৬ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

আরও পড়ুনকুমিল্লা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার লড়ছেন না আওয়ামী লীগপন্থীরা৭ ঘণ্টা আগে

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম বলেন, বুধবার বিকেলে যাচাই-বাছাইয়ে ১৫ জনের মনোনয়ন বৈধ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চারটি পদে দুজন করে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আইনজীবীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিটি পদে একজন করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের সময়। যেহেতু কোনো পদে একাধিক প্রার্থী নেই, তাই সেদিন তাঁদের বিজয়ী ঘোষণা করা হতে পারে।

আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি পদে ইসলামী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের মো.

শহিদুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের খন্দকার মিজানুর রহমান মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতির দুটি পদে বিএনপিপন্থী মো. নুরুল ইসলাম এবং জামায়াতপন্থী মো. এরশাদুর রহমান, সহসাধারণ সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থী নজরুল ইসলাম মানিক, ট্রেজারার পদে জামায়াতপন্থী মো. মুজিবুল ইসলাম, লাইব্রেরি সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থী মোশাররফ হোসেন, এনরোলমেন্ট সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থী মো. শফিউল্লাহ, রিক্রিয়েশন সম্পাদক বিএনপিপন্থী মো. জহিরুল ইসলাম এবং আইটি সম্পাদক পদে বিএনপিপন্থী মো. সাইফুল ইসলাম একক মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এ ছাড়া পাঁচটি সদস্যপদের মধ্যে মো. ওবায়েদ উল্লাহ সরকার, মো. শরিফ হোসেন, মো. কামরুল হাসান, মু. সলিমুল্লাহ খান ও মো. মাসুদ আলম একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম জমা দেন।

আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই আগাম মামলা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফাফিজুর রহমান ওরফে লিটন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৌশলে আমাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে এবারের তফসিল ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অমান্য করে মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমার তিন দিনের সময় দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে এক দিন। আমরা যেন মামলার কারণে আসতে না পারি, এ জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়ম করা হয়েছে, সশরীর হাজির হয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে হবে।’

তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী মফিজুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে যেই কমিটি নির্বাচন পরিচালনা করছি, তাদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগপন্থী। কুমিল্লায় কিন্তু অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়নি। তারা মামলার ভয়ে মনোনয়নপত্র না কিনলে আমাদের কী করার আছে? আমরা কোনো গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করিনি। আপনি যদি নির্বাচন করেন, আপনার ফরম অন্য কেউ নেবে কেন?’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম য় তপন থ ল ইসল ম আইনজ ব কর ছ ন আওয় ম হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আসামিপক্ষের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ৩ জনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার সময় তাঁদের মক্কেল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর কাছে তিন আসামির আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। এরপর এই মামলার বাকি আসামিদের বিষয়ে শোনার জন্য আগামীকাল বুধবার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-২।

বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এই মামলার ৩০ আসামির একজন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম। তাঁর আইনজীবী আমিনুল গণী। এই মামলা থেকে শরিফুলের অব্যাহতি চেয়ে আজ লিখিত কোনো আবেদন করেননি এই আইনজীবী। মৌখিকভাবে অব্যাহতির আবেদনে আমিনুল গণী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করার আগে আবু সাঈদের ভাই রংপুরে একটি মামলা করেছিলেন। সেখানে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করেন। সেই তালিকায় শরিফুল ইসলামের নাম ছিল না। এই আইনজীবী দাবি করেন, সাবেক এই প্রক্টরের বিরুদ্ধে যে অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সেসব (আদেশ/নির্দেশ) করার সুযোগ তাঁর ছিল না। তা ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক আইজিপি—কারও সঙ্গে তাঁর সংযোগ ছিল না। আর যখন আবু সাঈদ হত্যার শিকার হন, তখন তিনি (শরিফুল) ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনা ঘটার ২৩ মিনিট আগেই তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এসব কারণে এই মামলা থেকে তাঁর অব্যাহতি চান।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি এখনই এই মামলার চূড়ান্ত যুক্তি তুলে ধরা শুরু করে দিয়েছেন। মামলার এই পর্যায়ে এসব করার সুযোগ নেই। যদি প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

এই মামলার আরেক আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ। আজকের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী সালাহউদ্দিন দাবি করেন, আন্দোলনের সময় তাঁর মক্কেল ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ঘটনাস্থলে না থাকলে উসকানি ও সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। তা ছাড়া ইমরান চৌধুরীকে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সত্য নয়। আবু সাঈদের ঘটনায় রংপুরে যে মামলা করা হয়েছিল, সেসব আসামির মধ্যেও ইমরানের নাম নেই। এসব কারণে তিনি এই মামলা থেকে ইমরানের অব্যাহতি চান।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘আপনি প্রমাণ করেন যে ইমরান ঘটনাস্থলে ছিল না। যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। আর প্রসিকিউশনও যদি প্রমাণ না করতে পারে ইমরান ঘটনাস্থলে ছিল, তাহলেও অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়ের আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, কোনো সুযোগ ছিল না একজন কনস্টেবলের পক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সাবেক আইজিপির মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। প্রসিকিউশন যে অভিযোগ দাখিল করেছেন, তাতে এমন কোনো প্রমাণ নেই তাঁদের (সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও অন্য শীর্ষ ব্যক্তিরা) নির্দেশ সরাসরি পাওয়া বা সরাসরি যোগাযোগের। সে কারণে তাঁর অব্যাহতি চান।

আগামীকাল এই মামলায় অন্য আসামিদের বক্তব্য শোনা হবে। এই মামলার ২৪ জন আসামি পলাতক। তাঁদের পক্ষে চারজন রাষ্ট্র নিযুক্ত নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোন আইনজীবী কোন কোন পলাতক আসামির প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা আজ ট্রাইব্যুনাল উল্লেখ করে দেন।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার আরও দুই আসামির পক্ষে আইনজীবী না থাকায় তাঁদের জন্যও একজনকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আজ নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। গ্রেপ্তার সেই দুই আসামি যদি নিজেদের আইনজীবী নিয়োগ দেন, তাহলে সেই রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আর থাকবেন না।

আরও পড়ুনসাবেক উপাচার্য হাসিবুরসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন২৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ, প্রার্থী হলে করাতে হবে ডোপ টেস্ট
  • প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের বিধান রেখে রাকসুর আচরণবিধি প্রকাশ
  • সুরাইয়া মতিনের মৃত্যুতে ফতুল্লা প্রেসক্লাবের শোক
  • ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ
  • ‎আবু সাঈদ হত্যা: ৬ আগস্ট অভিযোগ গঠনের আদেশ 
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ৬ আগস্ট
  • শিক্ষকের মুক্তি চেয়ে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বরে অবস্থান, সড়ক অব
  • কিশোরগঞ্জে আইনজীবীর বাড়িতে ডাকাতি, ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট
  • আবু সাঈদ হত্যা: ‘ঘটনাস্থলে ছিলেন না’ দাবি করে দুই আসামির অব্যাহতির আবেদন
  • ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর