আলুর উৎপাদন খরচ বেশি, দুশ্চিন্তায় চাষি
Published: 21st, February 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জে আলুচাষিদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। ঘাম ঝরিয়ে চাষ করা আলুর বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। বর্তমানে বাজারে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ১৮ টাকা। তার ওপর হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষকের দাবি, সস্তায় আলু কিনে এবার মধ্যস্বত্বভোগীরা হিমাগারভিত্তিক সিন্ডিকেট করে ফায়দা লোটার পরিকল্পনা করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর মুন্সীগঞ্জ জেলার ৩৪ হাজার ৭৫৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে আলু তোলা শুরু হয়েছে। তবে কৃষক আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখতে পারছেন না। পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ১২ থেকে সাড়ে ১৩ টাকা কেজি দরে জমিতে বিক্রি হচ্ছে আলু।
আলুচাষিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে উঁচু জমির আলু উত্তোলন চলছে। এক সপ্তাহ পর এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে পুরোদমে আলু উত্তোলন শুরু হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। তবে তাদের মুখে স্বস্তির হাসি নেই, দুশ্চিন্তার ছাপ।
কৃষকের দাবি, উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজিতে ১৮ টাকা। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ১৩ টাকায়। তাই মৌসুমের শুরুতেই লোকসানের মুখে তারা। এই লোকসান থেকে বাঁচতে আলু সাধারণত হিমাগারে রাখেন কৃষক। কিন্তু এবার হিমাগার ভাড়া কেজিতে ১ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ৮ টাকা নির্ধারণ করেছে হিমাগার সমিতি। গত বছরও ৫০ কেজির প্রতি বস্তার ভাড়া ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এবার তা ৪০০ টাকা ঘোষণা করেছে হিমাগার সমিতি। বাড়তি ভাড়া এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ কৃষক। এ অবস্থায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় হিমাগার চালুর দাবি তাদের।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার ধামারণ গ্রামের কৃষক শাহাব উদ্দিন হালদার বলেন, ‘আগে হিমাগারের ভাড়া ছিল ২০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা। আলু ১০-১২ টাকা কেজি। কৃষক কয় টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে, সরকার তা নির্ধারণ করে দিল না কেন? কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বেশি হয়ে গেছে।’
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘কোল্ড স্টোরেজের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ভাড়া রিভাইস (পুনর্মূল্যায়ন) করার আহ্বান জানিয়েছি।’
হিমাগার মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরও মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে।
কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের মালিক দুলাল মণ্ডলের ভাষ্য, খরচ বেশি। এ কারণে চলতি মৌসুমে ভাড়াটা বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ‘ভাড়াটা একটু বেশি হয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমাদের কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, চেষ্টা করে দেখব।’
মুন্সীগঞ্জে সচল ৫৮ হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ টন। আর এবার জেলায় আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১০ লাখ টন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল
এছাড়াও পড়ুন:
ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন
অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস
৩. সারভাইক্যাল রিবস
৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা
৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ
৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়
১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া
১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া
১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা
১৬. হাড়ের ইনফেকশন
১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)
১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।
উপসর্গ
ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।
কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।
বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।
সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।
ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।
হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।
ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।
চিকিৎসা
চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।
৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।
১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।
১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।
এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা
আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫