বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যে শুধু বাংলা ভাষা নয়, সব জাতিসত্তার ভাষার অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি উচ্চারিত হয়। সে লক্ষ্যে বাংলা ভাষাভাষী ছাড়াও দেশের অন্যান্য কিছু জাতিসত্তার ভাষাতেও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ওঁরাও, মুন্ডা, রাজোয়ারসহ কয়েকটি জাতিসত্তার মানুষের সাদরি ভাষা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সাদরি ভাষার বই পড়ানোর মতো কোনো শিক্ষক নেই। ফলে সাদরিভাষী শিশুরা সেসব বই পড়তে পারছে না। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগের।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিতভাবে সাদরি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করে আসছে এনসিটিবি। সেসব বই পাঠানোও হচ্ছে সাদরিভাষী বিভিন্ন জাতিসত্তার বসবাসের জেলাগুলোতে। ওঁরাও, মুন্ডা, মাহাতো, রাজোয়ারসহ কয়েকটি জাতিসত্তার মানুষ এ সাদরি ভাষায় কথা বলে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল ও সদর উপজেলায় সাদরিভাষী জাতিসত্তাগুলোর প্রায় ১০০টি গ্রাম আছে। বই গেলেও শিক্ষক না থাকায় এসব গ্রামের শিশুরা মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাতৃভাষার অনেক শব্দ, সংস্কৃতি কিংবা পালাপার্বণ তাদের কাছে অজানা।
নাচোলের স্থানীয় দুই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, সাদরিভাষী শিশুরা ওই ভাষায় বই পড়তে চায় না। তাই তাঁরা সাদরি ভাষার বইয়ের চাহিদাও পাঠাননি। কিন্তু বিষয় হচ্ছে এ ভাষায় যে বই প্রকাশিত হয়েছে, সেটিই জানে না সাদরিভাষী অনেক শিক্ষার্থী। অথচ মাতৃভাষায় পড়তে তারা আগ্রহী। আবার অনেকগুলো বিদ্যালয়ে ঠিকই সাদরি ভাষার বই গেছে। সেসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, তঁাদের বিদ্যালয়গুলোর মোট শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। সাদরি ভাষার বই পেলেও তাদের শিক্ষকের সংখ্যা কম এবং প্রশিক্ষণও নেই। ফলে সে ভাষায় পাঠদানের বিষয়টি নিয়ে একপ্রকার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ওঁরাওদের সামাজিক সংগঠন দিঘরী পরিষদ গোমস্তাপুর উপজেলা শাখার নেতারা বলেন, ‘দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবি সরকার ২০১৫ সালেই মেনে নেয়। কিন্তু আজও সেটা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আসলে আমরা চরম অবহেলার শিকার।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.
আমরা আশা করব, সাদরি ভাষার শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সাদরিভাষী এতগুলো জাতিসত্তার শিশুরা মাতৃভাষায় পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হবে, তা কোনোভাবে মানা যায় না। দেশের সব জাতিসত্তার শিশুরা নিজ নিজ মাতৃভাষায় পড়াশোনা করবে, নিজের মাতৃভাষা জানবে ও শিখবে—এটিই তো আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ ষ র বই স দর ভ ষ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।