গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচার আইসিসিতে করার দাবি
Published: 23rd, February 2025 GMT
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) করার দাবি উঠেছে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং প্রতিবেদন জুলাই হত্যাকাণ্ডের ব্যবচ্ছেদ, দায় ও বিচার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান। আজ রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সভার আয়োজন করে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে, জাতিসংঘ যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, দেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকায় সেসব (তথ্য-উপাত্ত) তারা বাংলাদেশকে দেবে না। আর বিচারের অগ্রগতি ছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে যে অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটেছে। তবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়নি।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের অনুসন্ধানের তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে দিতে রাজি আছে, যদি সেই (বিচার) প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয় বলে উল্লেখ করেন সারা হোসেন। তিনি বলেন, স্বচ্ছ কীভাবে হবে—আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য হতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের ব্যবস্থা থাকলে তারা (জাতিসংঘ) সহযোগিতা করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার বিচার এখনো ঠিকমতো হয়নি। এর বড় একটি কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার আইন অনুসরণ করেনি।
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনে করেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকতে হবে। সেই অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগ প্রশ্নে কোনো ধীরগতি বা নীরবতা অবলম্বন করে, তাহলে হয়তো জনগণ আবার রাজপথে নিজেদের হাতে আইন তুলে নিতে বাধ্য হবে। তিনি বলেন, ‘সেই পরিস্থিতির দিকে যদি বাংলাদেশ যায়, তাহলে আমরা মনে করি, এখানে একটা গৃহযুদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘চামড়া গন্ডারের মতো’ বলে মন্তব্য করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, ‘জনতা আপনাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করতে আপনারা বাধ্য। যদি মনে করেন অবাধ্য হবেন, কোনো কানাগলি পার পাওয়ার চেষ্টা করবেন, কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সমঝোতা করে পরের সরকারে আসার পথ পরিষ্কার করবেন—এই সুযোগ আপনাদের বাংলাদেশ আর দেবে না।’
আওয়ামী লীগের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে উল্লেখ করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, কারণ আওয়ামী লীগের বিষয়ে, হাসিনার বিষয়ে যদি কোনো সুরাহা বাংলাদেশে না হয়, তাহলে কোনো নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করলে তা সুষ্ঠুভাবে হবে না।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর দেশে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হওয়ার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো যতটা নির্বাচনমুখী আলাপে অভ্যস্ত, বিচার এবং সংস্কারের প্রশ্নে তাদের অবস্থান ততটা শক্ত নয়।
ভারত থেকে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে, এ আলাপের মধ্যেই এখন পর্যন্ত সরকার যেতে পারেনি মন্তব্য করে আখতার হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) গিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসরদের বিচার দাবি করতে হবে। সরকার অপারগতা প্রকাশ করলে জনতার মধ্য থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে নিতে হবে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় যারা বীভৎসতা ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি জেল-জরিমানার মধ্য দিয়ে হতে পারে না উল্লেখ করে আখতার বলেন, তাদের ফাঁসি হতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় জাতিসংঘ সহায়তা করতে পারবে না বা এভিডেন্স (তথ্যপ্রমাণ) শেয়ার করতে পারবে না, যত দিন পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ড আমাদের আইনে আছে।’ তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সময় মৃত্যুদণ্ডাদেশ অন্তত স্থগিত রাখার সুযোগ ছিল। তাতে দেশের লাভ হতো। বিচারিক প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো থেকে সহায়তা পাওয়া যেত।
রাশনা ইমাম বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ বিচারপ্রক্রিয়ায় অনেক ধরনের ঘাটতি আছে। তার জন্য গণ-অভ্যুত্থানের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্য ‘কংক্রিট এভিডেন্স’ হতে পারে না বলেও মনে করেন রাশনা ইমাম। তিনি বলেন, নিয়মিত আদালতে গণহারে মামলা হচ্ছে, গায়েবি মামলা হচ্ছে। এগুলোও বিচারপ্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, সরকার বিচার করতে আগ্রহী, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সক্ষমতা নিয়ে ভীষণ সন্দেহ আছে যে আদৌ তারা এই বিচার করতে পারবে কি না। গত চার-পাঁচ মাসে এমন কোনো কিছু তারা দৃশ্যমান করতে পারেনি যে তারা এই বিচার করতে পারবে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ থাকবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। এমন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ, জাতিসংঘ একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই। জাতিসংঘের সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে, যেখানে প্রতিবেদন কীভাবে করা হবে, কারা করবে ইত্যাদি বিষয়ে। এই প্রতিবেদনও সেভাবেই করা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলাদা উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল, তবে তা নেওয়া হয়নি। ট্রাইব্যুনালের তদন্তও আরও গতিশীল হওয়া উচিত ছিল। যাঁরা অপরাধের আলামত ধ্বংস করছেন, তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আইনজীবী হুমায়রা নূর, শহীদ মিরাজের বাবা আবদুর নূর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সেলের সম্পাদক মোশফিকুর রহমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ র কর আইনজ ব সদস য হওয় র র সময় সরক র র করত আওয় ম র আইন
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকারযুক্ত সংবিধানই জনগণ চায়
ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয়েছিল সংবিধানে, তা–ই জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে আপিল বিভাগে এ–সংক্রান্ত শুনানিতে বলেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল–পরবর্তী নির্বাচনগুলোর চিত্র দেখিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন এবং ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে—দেশের জনগণ এমন বিতর্কিত কোনো নির্বাচন হোক, তা চায় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ রোববার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে বিএনপি মহাসচিবের আপিল–সংক্রান্ত শুনানি করেন জয়নুল আবেদীন।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে মাঝে বিরতি দিয়ে ১টা পর্যন্ত শুনানি চলে। পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিন রাখা হয়েছে। এদিন বিরতির পর শুনানি শুরুর আগে প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের অপর বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে আসেন বাংলাদেশে সফররত নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত। বিচারপতিদের সঙ্গে এজলাসে বসে এই শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেই একটি আলোচিত বিষয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মুখে তৎকালীন বিএনপি সরকার সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকারব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে যুক্ত করেছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছর পর সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এনে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। তার আগে সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ওই রায়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও আপিল বিভাগের রুলসের ব্যত্যয় ঘটেছে দাবি করে শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘রায়ে সইয়ের আগেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে সংবিধান সংশোধন (পঞ্চদশ সংশোধনী) করে। পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা ও স্বাক্ষরের (বিচারপতিদের রায়ে সই করা) আগে সরকার সংসদ তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যের বলে তড়িঘড়ি করে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করে, যা দেশবাসীর জানা। দেশের বিবেকবান মানুষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এই সংবিধান সংশোধনকে সরকারের হীন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছিল। এটি জনগণের বিরুদ্ধে বড় ষড়যন্ত্র।’
বিএনপির একসময়ের আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন শুনানিতে বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করেছেন। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার লক্ষ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি (বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক) দেশের প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রুলস যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সর্বশেষ (পূর্ণাঙ্গ রায়) রায় দেন, যা প্রথমে দেওয়া রায়ের (শর্ট অর্ডার সংক্ষিপ্ত রায়) সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ।’
শুনানিতে অবসরের পর রায়ে সই প্রসঙ্গ
অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করলে তার আইনগত মূল্য কী হবে—এ প্রসঙ্গ ওঠে শুনানিতে। বিরতির পর শুনানিতে অংশ নিয়ে এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিবের অপর আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, রায় ঘোষণা ও রায়ে সই করা দুটি ভিন্ন বিষয়। রায় ঘোষণার সময় এ বি এম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতির পদে আসীন ছিলেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে যা ছিল, পূর্ণাঙ্গ রায়ে তা পরিবর্তন করা হয়েছে।
দেওয়ানি কার্যবিধি, আপিল বিভাগের রুলস ও সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘শর্ট অর্ডারের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ে যে পার্থক্য, তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেছেন একজন বিচারপতি। এই বিচারপতিও বলেননি অবসরের পরে বিচারপতি খায়রুল হকের লেখা রায়টি অবৈধ হয়েছে। স্বাক্ষর পরে করেছেন বলে রায় অবৈধ বলা যাবে না। কারণ, অবসরের পর কোনো বিচারপতি রায়ে সই করতে পারবেন না কিংবা কত দিনের মধ্যে সই না করলে সেটি অবৈধ হবে, এমন বাধ্যবাধকতা আইনে নেই।’
রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রকাশ্য আদালতে কোনো বিচারপতি যখন কোনো রায় দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে দিলে ছোটখাটো দাড়ি, কমা, শব্দ বাদ পড়েছে—এগুলো ছাড়া যেকোনো পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই সেটি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) ছাড়া হবে না, যার ওপর শুনানি চলছে।’
এ মামলায় সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়। ওই প্রসঙ্গে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক বলেন, ‘অবসরের পর রায়ে সই করলে তা বাতিল বা অকার্যকর হবে না। যেদিন প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করলেন, সেই তারিখ হচ্ছে মূল। এটি হচ্ছে রায়ের তারিখ। কবে সই করলেন, এটি প্রাসঙ্গিক নয়। আপিল বিভাগের রুলসে বলা আছে, এ ক্ষেত্রে দেওয়ানি কার্যবিধির (সিপিসি) বিধান কার্যকর হবে না। আপিল বিভাগের জন্য সিপিসি প্রযোজ্য নয়।’
মামলার পূর্বাপর
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আপিল বিভাগের ২০১১ সালের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।