ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল ‘হার্থ সামিট বাংলাদেশ’
Published: 27th, February 2025 GMT
রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ফ্রান্সভিত্তিক ওয়েলবিং–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েলবিং প্রজেক্টের গ্লোবাল কোলাবোরেশনে ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো ‘হার্থ সামিট বাংলাদেশ (ঢাকা এডিশন)’।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের সহ-আয়োজক হিসেবে ছিল ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট, হিরোজ ফর অল এবং টিচ ফর বাংলাদেশ।
সম্মেলনে চার শতাধিক তরুণ, শিক্ষক, অভিভাবক, মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ এবং ওয়েলনেস পেশাজীবী অংশ নেন। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ওয়েলবিংকে মূলধারায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন।
উদ্যোগটির মাধ্যমে ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন পরোক্ষভাবে পাঁচ হাজারের বেশি তরুণ, শিক্ষক, অভিভাবক ও সোশ্যাল চেঞ্জমেকারদের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। সম্মেলনে ওয়েলবিং-বিষয়ক কয়েকটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। যার মধ্যে একটি পরিচালনা করেন হিরোজ ফর অলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি রেহনুমা করিম।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস। তিনি বলেন, আধুনিক জীবনের প্রভাব, বিশেষত তরুণ ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও ওয়েলবিং নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশন এবং ব্র্যাক আইইডি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
সম্মেলনের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে কানাডা হাইকমিশনের পলিটিক্যাল কাউন্সেলর মার্কাস ডেভিস বলেন, কানাডা ফান্ড ফর লোকাল ইনিশিয়েটিভসের সহায়তায় কানাডা হাইকমিশন, ব্র্যাক আইইডি এবং হার্থ সামিট বাংলাদেশ একত্রে এমন নিরাপদ জায়গা তৈরি করছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক চাপ তুলে ধরে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা পেতে পারে।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইনোভেশন ফর ওয়েলবিং ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মনিরা রহমান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো সমাজের প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও ভালো থাকার চর্চাকে মূলধারায় নিয়ে আসা, যাতে সব বয়সের মানুষ স্বীকৃত, সমর্থিত ও ক্ষমতায়িত অনুভব করেন।’
‘ভালো থাকি, প্রস্ফুটিত হই, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে’ শীর্ষক উদ্বোধনী আলোচনা পর্বে মানসিক স্বাস্থ্য ও ওয়েলবিং একাডেমিক ও বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদা বেগম, অধ্যাপক কামাল চৌধুরী ও তাবাসসুম আমিনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংযোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই সংযোগ মানসিক সুস্থতা, সহনশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহনশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণে সহায়ক হয়ে ওঠে বলে মত দেন তাঁরা।
এ ছাড়া ‘ডেল্টা আইডেনটিটি’বিষয়ক একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও রিচুয়াল আলকেমিস্ট আইরিন খান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজন ম
এছাড়াও পড়ুন:
মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে
চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব গত এক বছরে দ্বিগুণ হয়েছে, আর এর সরাসরি ফল ভোগ করছেন নগরবাসী। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, এবার ডেঙ্গুর চেয়েও চিকুনগুনিয়া ঘরে ঘরে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে, যা এক নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। মশা নিধনে কার্যকর ও সমন্বিত উদ্যোগের অভাবই এ রোগের দ্রুত বিস্তারের প্রধান কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চট্টগ্রামে এভাবে জনস্বাস্থ্য ভেঙে পড়ার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, চট্টগ্রাম নগর এডিস মশাবাহিত রোগের জন্য এখন অতি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ একই ধরনের জরিপ চালিয়েছিল। এই দুই জরিপের তুলনামূলক চিত্র আমাদের সামনে এক ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরে—এডিস মশার প্রজনন ও লার্ভার ঘনত্ব দুটিই আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।
২০২৪ সালে চট্টগ্রামে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ছিল ৩৬ শতাংশ, যা এবার আইইডিসিআরের গবেষণায় পৌঁছেছে ৭৫ দশমিক ২৯ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রামের এ চিত্র রীতিমতো ভয়াবহ। বাসাবাড়িতেও লার্ভার উপস্থিতি বেড়েছে। গত বছর ৩৭ শতাংশ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেলেও এবার তা প্রায় ৪৮ শতাংশে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবার ডেঙ্গুর চেয়ে চিকুনগুনিয়ার রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আবার অনেকের ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটিই হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। চলতি বছরেই ৭৬৪ জনের চিকুনগুনিয়া ও ৭৯৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জনই মারা গেছেন এই জুলাই মাসে।
সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আইইডিসিআরের সুপারিশগুলো সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। সিটি করপোরেশনের মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম দাবি করছেন যে মশকনিধনে ক্রাশ কর্মসূচি চলছে এবং নতুন জরিপ অনুযায়ী হটস্পট ধরে কাজ করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো এ উদ্যোগগুলো কি যথেষ্ট? লার্ভার ঘনত্ব যেখানে তিন-চার গুণ বেশি, সেখানে গতানুগতিক কর্মসূচির ওপর নির্ভর করলে চলবে না।
মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার কোনো বিকল্প নেই। এ কাজে সিটি করপোরেশনকে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বাসাবাড়িতে নানা জায়গায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানিও এডিস মশার প্রজননের জন্য যথেষ্ট। ফলে নাগরিকদের সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরকে মশাবাহিত রোগের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, নগর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে; নগরবাসীকে দ্রুত তৎপর হতে হবে।