Samakal:
2025-08-01@22:32:02 GMT

মার্কেজের লেখায় আড়ালের কৌশল

Published: 27th, February 2025 GMT

মার্কেজের লেখায় আড়ালের কৌশল

‘আমি লাইনোটাইপ মেশিনের গোলমেলে শব্দ পছন্দ করতাম, যেটার শব্দ বৃষ্টি ঝরার শব্দের মতো।’
মার্কেজ এভাবেই নিজের প্রথমদিকের লেখার পরিপ্রেক্ষিত খুলে ধরেছিলেন প্যারিস রিভিউর সাক্ষাৎকারে পিটার এইচ স্টোনের কাছে। ছন্দময় বাতাবরণে নিজেকে খুঁজে পেতেন পৃষ্ঠার কালো অক্ষরে। জয়েস ও ভার্জিনিয়া উলফের কাছ থেকে তিনি নিয়েছিলেন স্বগতোক্তি ও চেতনাপ্রবাহ রীতির কৌশল। মার্কেজের সেসব লেখাই সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছে যে কাজগুলো তাঁর কল্পনা থেকে এসেছে, যেখানে পুরো কাজের মধ্যে একটিমাত্র লাইনও সত্যি নয় বা সেটা কোনো বাস্তবতার ভিত্তিতে করা হয়নি। তবে মজার বিষয় হলো, মার্কেজের চোখে ক্যারিবিয়ান বাস্তবতা আসলে বন্যতম কল্পনার অনুরূপ।
রচনাকৌশল পরিণত ও আয়ত্তে এসে গেলেই যে কোনো লেখকের জন্য লেখালেখি সহজ হবে, মার্কেজ এমনটা মনে করতেন না। কারণ, একটা ফর্মে ফেলে একজাতীয় লেখার পুনরাবর্তন কোনো সৃষ্টিশীল লেখকের কাজ নয়। তাই তাঁর ভাষায়, ‘প্রতিটি শব্দ আগের চেয়ে দামি হয়ে ওঠে, তখন তা বহু লোককে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।’
মার্কেজ লেখার কৌশল হিসেবে সব সময়েই শুরুটা করতেন একটা কল্পনায় তৈরি করা চিত্র দিয়ে। এটা খুব সাহসী পদক্ষেপ। থিম কী হবে, ঘটনাপরম্পরা কী হবে, কাহিনিবিন্যাস কোথা থেকে কোথায় যাবে, গল্পের দুনিয়া কোন প্রেক্ষাপটে হবে– সেসব নিয়ে না এগিয়ে শুধু একটা চিত্রকল্প দিয়ে লেখা শুরু করে এগিয়ে যাওয়া একটা দৈবচয়নের মতোই বিষয়। মূলত, মনের গভীরে সব সময় মথিত হওয়া না বলা গল্পের আলোড়ন তাঁকে ঠেলে নিয়ে যেত গল্প বলার দিকে, কিন্তু সেই বলার ক্ষেত্রে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন সুনির্দিষ্ট চিত্রকল্প দিয়ে শুরু করে। এটাই ছিল তাঁর মোক্ষম কৌশল। প্লিনিও অপুলেইও মেনদোজার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। ‘মঙ্গলবারের দিবানিদ্রা যে গল্পটিকে আমি আমার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প হিসেবে মনে করি, সেটা লেখা হয়েছিল, কালো পোশাক ও কালো ছাতা মাথায় একজন নারী এবং একটি ছোট মেয়ে একটি নির্জন শহরে তীব্র রোদের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দেখে। পাতাঝড় উপন্যাসে যে চিত্রকল্পটি ছিল তা হচ্ছে, একজন বৃদ্ধ লোক তার নাতিকে একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছে। কর্নেলকে কেউ চিঠি লেখে না উপন্যাসের ক্ষেত্রে চিত্রকল্পটি ছিল ব্যারেনকুইলার বাজারে একটি লোক লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি একধরনের নীরব উদ্বিগ্নতা নিয়েই লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অনেক বছর পরে প্যারিসে একটা চিঠির জন্য প্রতীক্ষারত আমি, সেই একই রকম উদ্বিগ্নতা নিয়ে মূলত মানি অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আমি স্মৃতির মধ্য থেকে সেই বহুদিন আগের চিঠির জন্য অপেক্ষা করা মানুষটিকে চিনে নিতে পেরেছিলাম।’ 
মার্কেজের মনে তৈরি চিত্রকল্পের পাত্রপাত্রীরা এভাবেই সম্পূর্ণ চেহারা নিয়ে তাঁর গল্প ও উপন্যাসের শুরুতে আবির্ভূত হয়েছেন। 
কিন্তু এই চিত্রকল্প কেন তৈরি হয়েছিল তাঁর মনে? আসলে লেখকদের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির মিশেল, সঙ্গে সৃজনেচ্ছার নিবিড় বন্ধনে তৈরি হয় এসব চিত্রকল্প। মার্কেজের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বেশি পঠিত উপন্যাস সহস্র বছরের নিঃসঙ্গতা উপন্যাসের শুরুতে একজন বৃদ্ধলোক একটি শিশুকে সার্কাসে বরফ দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে কৌতূহলের বিষয় হিসেবে।
যারা কখনও বরফ দেখেনি, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটেও উনিশ শতকের অনেকেই বরফ দেখেনি, তখন এই বরফ দেখাটাই আশ্চর্যের বিষয় ছিল। নতুন কিছু অভূতপূর্ব অনাস্বাদিতপূর্ব কিছু। এই কৌতূহল, এই অজানার মধ্যে ক্রমশ ঢুকে পড়াই লেখালেখির চাবি পয়েন্ট। লেখক যত অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সংবেদনশীল হন, পাঠকের সঙ্গে তাঁর সংযোগ তত নিবিড় হয়; পাঠক নিজেকে লেখকের সঙ্গে একীভূত করে ফেলেন, এতই একাত্ম হয়ে ওঠেন যে, নিজেকে সে লেখকের সৃষ্ট চরিত্র ভাবতে পছন্দ করেন। এখানেই লেখকের সাফল্য। 
সহস্র বছরের নিঃসঙ্গতা উপন্যাসে শুরুর বর্ণনা সম্পর্কে লেখকের জবানিতে পাই, ‘বাস্তব কিছুর প্রেরণায়ই চিত্রকল্পটা সৃষ্টি হয়েছিল। মনে আছে যখন আরাকাটাকায় আমি ভীষণ ছোট একটা ছেলে, নানাজান সার্কাসে এক কুঁজবিশিষ্ট দ্রুতগামী উট দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আরেকদিন যখন আমি তাকে জানাই যে, ঐ সার্কাসে আমি বরফ দেখতে পাইনি, তখন তিনি আমাকে কলা কোম্পানির কলোনিতে নিয়ে যান, তাদের বরফায়িত সামুদ্রিক মাছের মোড়ক করা বেতের ঝুড়ি খুলতে বলেন এবং আমার হাত ওর মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। সহস্র বছরের নিঃসঙ্গতার সম্পূর্ণ উপন্যাসটি এই একটি চিত্রকল্প দিয়ে শুরু হয়েছে।’
তবে কি শুধু চমৎকার দৃশ্যকল্প দাঁড় করালেই ভালো সব ফিকশন তৈরি হয়ে যাবে আপনা-আপনি? মার্কেজ কথোপকথনের এই পর্বে সঙ্গে সঙ্গেই খোলাসা করে দিয়েছেন লেখার কৌশল। বহু বছর ধরে যে বাস্তব পৃথিবী তাঁর মনে অভিঘাত দিয়েছে। তাকেই কল্পনার দুনিয়ায় মার্কেজ সন্নিবেশিত করেছেন নিজের পছন্দমতো। বাস্তব ঘটনাগুলো হুবহু পাঠকের সামনে আনলে তা আসলে শুধু সংবাদমাত্র। অনেক বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত এই মহান লেখক খুব ভালোভাবেই তা জানতেন, তাই কৌশল হিসেবে তিনি বাস্তব-অবাস্তব-কল্পনা-পরাবাস্তব-জাদুবাস্তবতার সম্মিলনে তৈরি করে নিয়েছিলেন নিজস্ব দুনিয়া। সেখানে ‘অনেক বছর পরে, যখন সে ফায়ারিং স্কোয়াডের মুখোমুখি, কর্নেল অরনিয়েলো বুয়েন্দিয়া বহুদিন আগের ঐ বিকেলকে স্মরণ করলেন, যখন তাঁর বাবা তাঁকে বরফ দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।’ 
তবে কি বরফে জড়ানো মৃত মাছের শীতলতা কর্নেলের মধ্যে সংক্রমিত? তাই তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃতশীতল পরাবাস্তবকে অনুভব করছিলেন! নাকি মৃত্যুর মুখোমুখি হলে পুরোজীবনের যে খণ্ড খণ্ড ছবির কয়েক ঝলক ফ্ল্যাশব্যাকের মতো মানুষের স্মরণে ছায়া ফেলে যায় তারই সফল সৃজন এই উপন্যাসের শুরু? 
বইয়ের প্রথম বাক্যকে বেশি মনোযোগের সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী, এ প্রশ্নের উত্তরে মার্কেজ নির্দ্বিধায় বলেছিলেন, ‘প্রথম বাক্যটি বইটির স্টাইল, গঠন, এমনকি দৈর্ঘ্য কতটুকু হবে, তার পরীক্ষাগার হতে পারে।’ অর্থাৎ লেখার প্রথম বাক্যই তাঁর ক্ষেত্রে গল্পের পরবর্তী ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিত। নিয়তির মতো। এখানে টেনে লম্বা করা অথবা অকারণ সংক্ষেপ করার কোনো অবকাশ নেই। 
একটা লেখার আইডিয়া ঠিক কতদিন মনের মধ্যে জারিত করার জন্য ফেলে রাখা উচিত, হেমিংওয়ে যেমন বলেছেন– কোনো বিষয় নিয়ে খুব দ্রুত যেমন লিখে ফেলা উচিত নয়, তেমনি খুব দেরি করাও সংগত নয়। এ কথার উত্তরে মার্কেজ যা বলেছেন তাতে বোঝা যায়, এটা লেখক হিসেবে আপেক্ষিক। তাঁর মতে, ‘আইডিয়া যদি সহস্র বছরের নিঃসঙ্গতার মতো পনেরো বছর, গোত্রপতির শরৎকালের মতো সতেরো বছর এবং একটি পূর্বঘোষিত মৃত্যুর দিনপঞ্জির মতো ত্রিশ বছরও যথেষ্ট ভালোভাবে টিকে থাকে, তখন ওটা লিখে ফেলা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় থাকে না।’ যে লেখাটা রচিত হবে, কোনো কারণেই লেখকের মন থেকে মুছে যাবে না। হেমিংওয়ের কাছ থেকে লেখার কৌশল নিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ, ‘তাঁর উপদেশ ছিল যে একটি ছোটগল্প একটি হিমবাহের মতো, এর মধ্যে যেটুকু আপনি দেখতে পাচ্ছেন না, সেটুকু দ্বারাই সে আপনাকে ধারণ করছে– যে কোনো চিন্তা পঠন-পাঠন এবং উপাদান সংগ্রহ করছেন, কিন্তু সরাসরি গল্পে ব্যবহার করছেন না। হ্যাঁ, হেমিংওয়ে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। এমনকি একটি বিড়াল কীভাবে কোনার দিকে ঘুরে যায় তাকেও তিনি নির্ভুলভাবে নির্ধারণ করতে পারেন।’ তবে এ কথাও স্বীকার করেছেন, ‘একটি ছোটগল্পের বই লেখা একটা উপন্যাস লেখার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। প্রতিবার ছোটগল্প লেখার সময় আপনাকে আবারও পুরোটা বিষয় একেবারে প্রথম থেকে শুরু করতে হবে।’ তিনি একটি মনমতো নির্ভুল অনুচ্ছেদ লেখার জন্য বারবার পুনর্লিখন করে পঞ্চাশ পৃষ্ঠা নষ্ট করতেও দ্বিধা করতেন না। মার্কেজ গ্রাহাম গ্রিনের কাছ থেকে শিখেছেন কী করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অর্থ উদ্ধার করতে হয়। যে পরিবেশটিকে লেখক খুব ভালোরকম চেনেন, সেখান থেকে কাব্যিক উপাদানগুলো আলাদা করা ভীষণ কঠিন কাজ। আবার সেটাকে নিজের লেখায় যথাযথভাবে ব্যবহার করাও মুনশিয়ানার কাজ। এভাবেই লেখার প্রতিটি নৈপুণ্য কৌশল প্রকরণ মার্কেজকে বিশিষ্ট, স্বতন্ত্র, মনোগ্রাহী ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। v
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ত রকল প উপন য স র বরফ দ খ অন ক ব প রথম করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ