বগুড়ার শিবগঞ্জে ‘ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি’র মুখে নাগরিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় শিবগঞ্জ উপজেলা সদরে এই সমাবেশের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্যের শিবগঞ্জ উপজেলা শাখা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান শিবগঞ্জ থানা–পুলিশের সমালোচনা করে বলেন, ‘উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহিদুলকে ছুরিকাহত করার ঘটনায় তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও দলের লোকজন শিবগঞ্জ থানায় গেছেন মামলা দিতে। থানার ওসি নাকি বলেছেন, এই কয়টা নাম কেটে দিতে হবে। আমার যাকে খুশি মামলায় তার নাম দেব। ওসি নাম কাটতে বলার কে? পুলিশ যদি তদন্তে দেখে, কেউ জড়িত নয়, তার নাম বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেবে। আসামির নাম কাটতে বলার ওসি কে?’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমার দলীয় নেতাদের মামলা নেওয়া হয়নি; অথচ দুই দিন পর আরেকটি বাড়িতে বোমা ফুটল, কিছু ঘটনা ঘটল, ২৪ ঘণ্টাও পেরোল না আমার দলীয় নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা দেওয়া হলো। পিয়াল আমার ছোট ভাই। রাজনীতি করে না। তাকেও আসামি করা হলো? ওসি গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন, আসামি গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে। অত লালি আধা সের না। গ্রেপ্তার করে দেখেন। মাহমুদুর রহমান মান্না যদি চায়, শিবগঞ্জে ভূমিকম্প হবে।’

২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে শিবগঞ্জে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে নাগরিক ঐক্যের উপজেলা শাখার আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিগত ৫৩ বছরে স্বাধীন বাংলাদেশে শিবগঞ্জ উপজেলায় এ রকম নৃশংস ঘটনা আর ঘটেনি। আমাদের মধ্যে মারামারি–কাটাকাটি হবে, এটা চাইনি, এখনো চাই না।’

আরও পড়ুনশিবগঞ্জে দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে নাগরিক ঐক্যের ৯ নেতাকে আসামি করে যুবদল নেতার মামলা২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

শিবগঞ্জে ঢুকতে না দেওয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের হুমকির প্রসঙ্গ তুলে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘শিবগঞ্জে আমার বাড়ি। এখানে আমার বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের জন্ম। এই শিবগঞ্জকে ভালোবাসি বলেই স্কুলজীবন থেকে বাইরে থাকলেও এখানে ছুটে আসি। যতটুকু যোগ্যতা আছে তা দিয়ে শিবগঞ্জের জন্য কাজ করি। ৭৫ বছর বয়সের মধ্যে ৬০ বছর ধরেই রাজনীতি করি। আমার ইমানের জোর আছে। অতীতে যা করেছি, তার প্রমাণ আছে। এ কারণে কারও হুমকিকে তোয়াক্কা না করে শিবগঞ্জের মাটিতে এসে আজ দাঁড়িয়েছি।’

শিবগঞ্জ কাউকে লিখে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এখানে কেউ আসতে পারবে না এটা বলার অধিকার কারও নেই। শেখ হাসিনা ২০ দিনে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করে পালানোর পথ খুঁজে পাননি। শেখ হাসিনার পরিণতি থেকে দেশের রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।’

উপজেলা নাগরিক ঐক্যর নেতা মো.

তোফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার। এ ছাড়া বক্তব্য দেন উপজেলা নাগরিক ঐক্যর সদস্যসচিব আবদুল বাসেত, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার, জেলা নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী মতিউর রহমান, জেলা নাগরিক যুব ঐক্যর আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

উল্লেখ্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে উপজেলা নাগরিক ঐক্যের নেতাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে ছুরিকাহত করা হয়। এ হামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে নাগরিক ঐক্য।

আরও পড়ুনবগুড়ায় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে নাগরিক ঐক্যের নেতাকে ছুরিকাঘাত২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এর মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আবদুল বাহাপুর গ্রামে যুবদল নেতা রনি মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উপজেলা নাগরিক ঐক্যের ৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করে বুধবার থানায় মামলা দায়ের হয়। হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াত–সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যানেরা গত মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বর্জন করেন। একই সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম।

মীর শাহে আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাহমুদুর রহমানকে শিবগঞ্জে ঢুকতে দেওয়া হবে না—এমন ঘোষণা কখনো দেওয়া হয়নি। তবে নাগরিক ঐক্য আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করলে শিবগঞ্জে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেওয়া হবে না এমনটা বলা হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির হস্তক্ষেপে সবকিছুর সমাধান হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ বগঞ জ উপজ ল র জন ত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ