চিকিৎসকের অভাবে অলস পড়ে আছে দামি সব যন্ত্রপাতি, সেবাবঞ্চিত রোগীরা
Published: 1st, March 2025 GMT
সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য প্রায় চার কোটি টাকা দামের চারটি উন্নত আইসিইউ শয্যা আছে। ভেঙে যাওয়া হাত-পায়ে কৃত্রিমভাবে অস্ত্রোপচার করে রড সংযোজনের জন্য রয়েছে আধুনিক সিআরএম যন্ত্র। চোখের চিকিৎসার জন্য রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক ল্যাসিকস যন্ত্র। কিন্তু এসব চালানোর মতো দক্ষ জনবল নেই। ফলে এমন নানা মূল্যবান যন্ত্রপাতি পড়ে থেকেই নষ্ট হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে অবস্থিত শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। আধুনিক এই সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সক ও দক্ষ জনবলের অভাবে এখনো কয়েকটি বিভাগে যন্ত্রপাতি সচল করা সম্ভব হয়নি। কিছু বিভাগের যন্ত্রপাতি ধার করা জনবল দিয়ে ‘বিকল্প উপায়ে’ চালু রাখা হলেও লেগে থাকে রোগীদের চাপ। ফলে নতুন এই প্রতিষ্ঠানে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
২০১৪ সালে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। অবশ্য এখনো হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিদিন এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে ২ হাজার ৫০০ জন ও অন্তর্বিভাগে ৫৫০ জন রোগী সেবা নিতে আসেন। ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য করা অর্গানোগ্রাম (জনবলকাঠামো) এখনো মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়নি। যে কারণে পুরোনো জনবলকাঠামোর ৪৮ জন চিকিৎসক (সহকারী রেজিস্ট্রার) দিয়ে কোনোমতে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম।
পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রপাতিহৃদ্রোগের সমস্যা নিয়ে উল্লাপাড়া উপজেলার লাহিড়ী মোহনপুর গ্রামের বৃদ্ধ রাজিয়া বেগম (৬৫) সম্প্রতি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি হয়েছিলেন। এই বৃদ্ধার বড় মেয়ে নাজমা আক্তার বলেন, চিকিত্সক তাঁর মায়ের উন্নত চিকিত্সার জন্য এনজিওগ্রাম করাতে বলেছেন। শুনেছেন এই হাসপাতালে এনজিওগ্রাম যন্ত্র আছে, কিন্তু বন্ধ। এই পরীক্ষা বাইরে করাতে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাগবে। এত টাকা ব্যবস্থা করা তাঁদের জন্য চরম সমস্যার।
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, দক্ষ জনবলের অভাবে পড়ে আছে প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের আধুনিক এনজিওগ্রাম যন্ত্রটি। পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক প্রয়োজন থাকলেও একজনও নেই।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য চার শয্যার আইসিইউ ভেন্টিলেটর প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবে সেগুলো এখনো চালু করা যায়নি। এ কারণে প্রায় চার কোটি টাকা দামের আইসিইউ ভেন্টিলেটরের পাশাপাশি প্রিন্টার, কম্পিউটারসহ অন্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশগুলোও নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের মেমোগ্রাফি যন্ত্র এখনো বন্ধ পড়ে রয়েছে। আইসিইউ সচল রাখতে অন্তত পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
হাসপাতালে রোগীর চাপ লেগেই থাকে। সম্প্রতি সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউ ওয়ার্ডে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা
‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।