কালাই পৌর শহরের সড়াইল মহল্লার বাসিন্দা আবু বক্কর। তিনি শিশুসন্তানকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন চিকিৎসকের কাছে। এসে দেখেন, শিশুবিশেষজ্ঞ নেই। কর্তব্যরত এক চিকিৎসক তাঁকে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন। তাঁর ভাষ্য, এখানে চিকিৎসক থাকলে আমার অর্থ ও সময় সাশ্রয় হতো। এ সময় রাব্বি হোসেন নামে একজন বলেন, ‘একজন রোগীরও চিকিৎসা করায় না। সব রোগীকে জয়পুরহাট সদরে পাঠায় (রেফার)। তাহলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাভ কী?’
প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস কালাই উপজেলায়। এলাকার বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসক, নার্স ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকটে দরিদ্র ও অসহায় মানুষ কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর বাড়তি চাপ থাকায় চিকিৎসকরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ছয়জন। গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। সার্জারি, শিশুস্বাস্থ্য, চক্ষু, কার্ডিওলজি, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিকস এবং ডেন্টাল সার্জনের দুটি পদের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এসব পদ পূরণে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন গেলে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫০-৩০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। ৫০টি শয্যা থাকলেও ৮০ থেকে ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এতে অনেক রোগীর বারান্দা, সিঁড়ি এবং মেঝেতে থাকতে হয়। চিকিৎসক সংকটে তাদের সময়মতো সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক রোগীকে বাড়তি অর্থ খরচ করে অন্যত্র সেবা নিতে হচ্ছে।
শুধু চিকিৎসক নয়, হাসপাতালের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ১৯৪ পদের মধ্যে ৯৩টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, মিডওয়াইফ, চালক থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ প্রতিটি বিভাগে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। সার্জারি বিভাগে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর থাকার পরও চলে না। ফলে রাতে অন্ধকারে থাকতে হয় রোগীদের।
ওয়ার্ডগুলোয় পানির সংকট ও টয়লেটের নোংরা অবস্থা রোগীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। জরুরি বিভাগের বেশির ভাগ পরীক্ষা বেসরকারি ক্লিনিক থেকে করাতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার বিনইল গ্রামের যমুনা বিবি বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমি খুবই অসুস্থ থাকায় চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম। গাইনি ডাক্তার না পাওয়ায় একজন দালালের সঙ্গে গিয়ে ক্লিনিকে চিকিৎসা নিই। এতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।’
অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসক সংকটের সুযোগ নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিজেদের ‘ডাক্তার’ পরিচয় দিয়ে রোগী দেখছেন। আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস ও বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ চিকিৎসক পরিচয় ব্যবহার করতে পারেন না। অন্যথায় রোগী ভুল চিকিৎসার শিকার হতে পারেন। দালাল চক্র এ সুযোগে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাচ্ছে। সানজিদা নামে এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠিকমতো ওষুধ দেয় না। নার্স ও অন্য কর্মচারীরা টিকিট কেটে আগে ওযুধ নিয়ে নেয়। সাধারণ রোগীরা ওষুধ পায় না।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স চ ক ৎসক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পেহেলগামে হামলার পর প্রতিশোধের আশঙ্কায় দিন কাটছে ভারতীয় মুসলিমদের
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর মুসলিমদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় ও তাঁদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। মানবাধিকারকর্মীদের আশঙ্কা, উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা পেহেলগামের হামলাকে ব্যবহার করে দেশের বৃহত্তম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন আরও বৃদ্ধি করছে।
কাশ্মীরের পেহেলগাম শহরের কাছে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে একজন বাদে বাকি প্রায় সবাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পর্যটক হিসেবে তাঁরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ জোরালোভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার জবাবে ভারত সামরিকভাবে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে তাদের ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে। পাকিস্তান সরকারের একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালাতে পারে।
এই মুহূর্তে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন আন্তসীমান্ত নদীগুলোর পানিপ্রবাহ বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বিজেপি সরকার ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমদের হয়রানি করছে। তারা এটিকে ‘অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান’ বলে দাবি করছে।
মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছেন। ‘পাকিস্তানি’ বা ‘বাংলাদেশি’ তকমা অনেক সময়েই হিন্দুত্ববাদীরা ভারতের অভ্যন্তরীণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে থাকে।
উত্তর প্রদেশ ও কর্ণাটক—এই দুই রাজ্যে মুসলিমদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমের খবরে সেগুলোকে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে ইতিমধ্যেই শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে যাঁদের সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক সরকারি কর্মকর্তার মতে, প্রায় দুই হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যা অনেকটা সমষ্টিগত শাস্তির মতো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি