ভারতের মুম্বাইয়ে প্রথম বিক্রয়কেন্দ্র খুলবে ইলন মাস্কের টেসলা, করবে কারখানাও
Published: 3rd, March 2025 GMT
ভারতে আসতে যাচ্ছে ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলা, এ খবর এখন অনেকেরই জানা। এবার জানা গেল, ভারতের কোন শহরে টেসলার প্রথম বিক্রয় কেন্দ্র হতে যাচ্ছে, তা–ও একরকম ঠিক হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে খুলতে চলেছে ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার প্রথম বিক্রয়কেন্দ্র। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রেই প্রথম কারখানা করতে চায় টেসলা।
মুম্বাইয়ের বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সের মতো অভিজাত এলাকায় খোলা হবে টেসলার এই বিক্রয়কেন্দ্র। ইতিমধ্যে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ–সংক্রান্ত চুক্তিও চূড়ান্ত হয়ে গেছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। মুম্বাইয়ের পর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দ্বিতীয় বিক্রয়কেন্দ্র খুলবে টেসলা। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
মুম্বাইয়ের বান্দ্রা কুরলা কমপ্লেক্সের একটি বাণিজ্যিক ভবনে চার হাজার বর্গফুটের জায়গা নিচ্ছে টেসলা। সেখানেই হবে টেসলার প্রথম বিক্রয়কেন্দ্র। এই বিক্রয়কেন্দ্রের ভাড়া হতে পারে মাসে ৩৫ লাখ রুপি। ওই জায়গা পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়েছে টেসলা। লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে বলে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। দিল্লির এরোসিটি কমপ্লেক্সে হবে টেসলার দ্বিতীয় বিক্রয়কেন্দ্র।
অনেক দিন ধরেই ভারতে আসি আসি করছিল টেসলা। এর আগে একাধিকবার ভারতে আসার পরিকল্পনা বাতিলও করেছেন ইলন মাস্ক। অভিযোগ, ভারতের বাজারে শুল্ক বেশি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর বরফ গলতে শুরু করেছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর ইলন মাস্কের কোম্পানি টেসলার ভারতে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। ২০২৪ সালেই ভারতে টেসলা বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে পারে বলে জানা গিয়েছিল, কিন্তু আমদানি শুল্ক–সংক্রান্ত জটিলতার জেরে তা থমকে যায়। এমনকি ভারত সফরও বাতিল করেছিলেন মাস্ক। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে শুরু করে। ট্রাম্পের চাপের মুখে মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে মোদি সরকার। এরপরই ভারতে বিক্রয়কেন্দ্র খোলার পদক্ষেপ নিতে শুরু করে মাস্কের সংস্থা টেসলা। প্রাথমিকভাবে জার্মানির কারখানায় তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি ভারতে বিক্রি হবে। এর মধ্যে টেসলা ভারতে কারখানা খুলবে বলেও আলোচনা চলছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির কারখানা তৈরির জন্য টেসলার পছন্দের তালিকায় প্রথমে আছে মহারাষ্ট্র। এর পাশাপাশি টাটা মোটরসের সঙ্গেও যৌথভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির জন্য আলোচনা করছে টেসলা। টেসলা যে ভারতে নিজেদের কার্যক্রম বিস্তৃত করতে চাইছে, সেটা তাদের একাধিক কার্যক্রম থেকেই স্পষ্ট। ভারতে নিয়োগের জন্য লিঙ্কডইনে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে টেসলা।
২০২১ সালে মুম্বাইয়ের লোয়ার প্যারেলে টেসলার বিক্রয়কেন্দ্র খোলার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছিল। ২০২৩ সালেও ভারতে আগমন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টেসলা কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়েছিল। ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভারতে আসার কথা ছিল মাস্কের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারত সফর বাতিল করেন বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি। আমদানি শুল্ক নিয়ে জটিলতার কারণেই টেসলার ভারতে আগমন বারবার ভেস্তে গেছে বলে জানা গেছে। নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক মার্কিন সফরের পর উচ্চ মূল্যের গাড়িতে আমদানি শুল্ক কমানোর কথা ঘোষণা করেছে সরকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক রয়ক ন দ র খ ল ইলন ম স ক র প রথম ব ক র জন য আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গান-কবিতায় ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যান এলাকায় সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা ব্যাপি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে গান, কবিতা ও কথায় এ কর্মসূচি পালিত হয়।
প্রায় চার দশক আগে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গতকাল বুধবার দুপুরে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান চালায়।
এর প্রতিবাদে আজ ‘ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক ও শিল্পী সমাজ’–এর ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়। বেলা ১১টার দিকে প্রতিবাদী কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল এসে মাইকবিহীন কর্মসূচি করতে বলেন আন্দোলনকর্মীদের। কিন্তু প্রতিবাদী কর্মসূচি চলতে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে ডিবি পুলিশের দল। প্রতিবাদী কথা, গান ও কবিতা পড়তে থাকেন কবি ও সংস্কৃতিকর্মীরা। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ পুনর্নির্মাণের দাবি জানান তাঁরা।
বীক্ষণ আসরের প্রথম আহ্বায়ক কথাশিল্পী সালিম হাসান বলেন, ‘ফ্যাসিস্টের অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে মানুষের কথা বলার মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া। বিগত সরকার আমলে দীর্ঘ সময় আমাদের বুকে জগদ্দল পাথর চাপিয়ে আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে গতকাল প্রশাসনের ভূমিকা আমাদের আশাহত করেছে এবং প্রতিবাদে উজ্জীবিত করেছে। দম্ভের কারণে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনে যাঁরা আছেন, তাঁরাও দাম্ভিকতা দেখালে পরিণাম ভালো হবে না।’
প্রতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে চলে প্রতিবাদী গান। শিল্পী হিরক সিঙ্গার, মিজান বাউলা, শাহনাজ সাথী বিদ্রোহী গান পরিবেশন করেন। কবি সাঈদ ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কবি শামসুল ফয়েজ, নাফিসা মাহজাবিন, কামরুল হাসান ও শরৎ সেলিম, সংস্কৃতিকর্মী মাহমুদুল হাসান, সংগীতশিল্পী অঞ্জনা সরকার, আবুল কালাম আল আজাদ, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক, নাগরিক নেতা তৌহিদুজ্জামান ছোটন, আন্দোলনকর্মী আরিফুল হাসান, আজিত দাস, আবদুল্লাহ আল নাকীব প্রমুখ।
আশরাফ মীর বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বিনা নোটিশে আমাদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আমারের অন্তরে আঘাত দিয়েছে। কেন মুক্তমঞ্চ বিনা নোটিশে ভেঙে দেওয়া হলো? যার ইঙ্গিতে এই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলো, তিনি অনুতপ্ত হবেন এবং মঞ্চটি পুনরায় নির্মাণ করে দেবেন, এই আশা করি। আমরা জীবন ও বেদনার কথা বলি কবিতায়। আমরা শান্তি চাই, কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না।’
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, ১৯৮০ সালের ২১ মে ময়মনসিংহে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের সমন্বয়ে সাহিত্য সংসদ গঠিত হয়। ১৯৮৩ সাল থেকে নিয়মিত পাঠচক্র বীক্ষণ আসর শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার ছিল বীক্ষণের ২১৪৬তম আসর। শুরু থেকে বিরতিহীন প্রতি শুক্রবার আসরটি বসে, যা বাংলা সাহিত্যের দীর্ঘতম পাঠচক্রের আসর। একটি মুক্তমঞ্চে কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিকর্মীরা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কবিতা, গান, আলোচনা করে থাকেন। দেশের বিখ্যাত কবি–সাহিত্যিক এখানের মুক্তমঞ্চে সাহিত্যায়োজনে কবিতা পড়েছেন, সাহিত্য আলোচনা করে গেছেন।
পুনরায় মুক্তমঞ্চ নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেন সাঈদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল গুঁড়িয়ে দেওয়া মঞ্চের সামনে বীক্ষণের নিয়মিত আসর পালন করা হবে। এরপর শনি ও রোববার প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না করলে সোমবার ময়মনসিংহসহ সারা দেশে কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
সাহিত্য সংসদের সভাপতি কবি ফরিদ আহমদ দুলাল প্রথম আলোকে বলেন, নগরের জয়নাল আবেদিন উদ্যান এলাকায় ১৯৯৩ সালের দিকে তৎকালীন জেলা প্রশাসন সাড়ে ৬ শতক জমি সাহিত্য সংসদকে বরাদ্দ দেয়। সেই জমিতেই প্রশাসনই মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখন সেই মুক্তমঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ গতকাল জানিয়েছিলেন, ‘কাগজপত্রে সাহিত্য সংসদ বলতে সেখানে কিছু নেই। অবৈধভাবে কোনো জায়গা দখল করলে তো হবে না। সাহিত্য সংসদ আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেব।’
আরও পড়ুনময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের মুক্তমঞ্চ গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন, সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদ১৫ ঘণ্টা আগে