প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা দিতে চান ব্যবসায়ীরা
Published: 9th, March 2025 GMT
দেশে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প ও ব্যবসায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। দেশে নতুন শিল্প যেন গড়ে না ওঠে এবং বর্তমান শিল্পও যেন চলতে না পারে তার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি ৩টি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা গ্যাসের দামের বিষয়ে এভাবেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দিয়েছেন।
শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে একলাফে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা ও উদ্যোক্তারা আজ রোববার বিইআরসি চেয়ারম্যানকে লিখিত মতামত দেন। এতে স্বাক্ষর করেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, চামড়া পণ্য ও জুতা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো.
ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব শিল্প ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম একতরফাভাবে বাড়ানোর সময় শিল্পের মালিকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অথচ শিল্পের মালিকেরা চাহিদার ৩০-৪০ শতাংশ কম গ্যাস পান। গ্যাসের কম চাপের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে শিল্পের মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ার কারণে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভালুকা ও নরসিংদী শিল্পকারখানার উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কমে গেছে। তাঁরা মনে করেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দক্ষতা বাড়িয়ে ও অপচয় কমিয়ে, বিশেষ করে তিতাস গ্যাসের বিপুল পরিমাণ সিস্টেম লস ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো উচিত। এ ছাড়া এলএনজি আমদানিতে দ্বৈত ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার এবং সরবরাহ পর্যায়ে কর ও পেট্রোবাংলার বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব।
ব্যবসায়ী নেতারা গত বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। সেই বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বিইআরসির চেয়ারম্যানের উদ্দেশে নেতারা বলেন, শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই যেখানে সমস্যা সেখানে গ্যাসের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব কীভাবে সরকার অনুমোদন করল, সেটি ব্যবসায়ীদের কাছে বোধগম্য নয়। গ্যাসের বর্তমান মূল্যহার কমিয়ে ব্লেন্ডেড মূল্যের সর্বোচ্চ ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করে শিল্প ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব যবস য় র ও ব যবস ব ইআরস সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।
অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।
দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন। ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’
যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’
যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।
পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।
আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪