দেশে শিল্পকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলেছেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প ও ব্যবসায়ের মারাত্মক ক্ষতি হবে। দেশে নতুন শিল্প যেন গড়ে না ওঠে এবং বর্তমান শিল্পও যেন চলতে না পারে তার জন্যই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি ৩টি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা গ্যাসের দামের বিষয়ে এভাবেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে মতামত দিয়েছেন।

শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমলে নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানির আয়োজন করে বিইআরসি। এতে নতুন শিল্পকারখানার জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে একলাফে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সায় নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থান হবে না, রপ্তানি ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতি ধসে যাবে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা ও উদ্যোক্তারা আজ রোববার বিইআরসি চেয়ারম্যানকে লিখিত মতামত দেন। এতে স্বাক্ষর করেন মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, চামড়া পণ্য ও জুতা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো.

আনোয়ার হোসেন, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম, তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়কপণ্য সরবরাহকারী কারখানামালিকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার, প্লাস্টিক শিল্পের মালিকদের সমিতি বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ এবং মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হাসান ও উত্তর মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান।

ব্যবসায়ীরা বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব শিল্প ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ২০২৩ সালে গ্যাসের দাম একতরফাভাবে বাড়ানোর সময় শিল্পের মালিকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। অথচ শিল্পের মালিকেরা চাহিদার ৩০-৪০ শতাংশ কম গ্যাস পান। গ্যাসের কম চাপের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যার কারণে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে শিল্পের মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস না পাওয়ার কারণে গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ভালুকা ও নরসিংদী শিল্পকারখানার উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কমে গেছে। তাঁরা মনে করেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর দক্ষতা বাড়িয়ে ও অপচয় কমিয়ে, বিশেষ করে তিতাস গ্যাসের বিপুল পরিমাণ সিস্টেম লস ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো উচিত। এ ছাড়া এলএনজি আমদানিতে দ্বৈত ভ্যাট ও উৎসে কর প্রত্যাহার এবং সরবরাহ পর্যায়ে কর ও পেট্রোবাংলার বিভিন্ন চার্জ কমিয়ে গ্যাসের দাম কমানো সম্ভব।

ব্যবসায়ী নেতারা গত বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। সেই বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বিইআরসির চেয়ারম্যানের উদ্দেশে নেতারা বলেন, শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখাই যেখানে সমস্যা সেখানে গ্যাসের এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব কীভাবে সরকার অনুমোদন করল, সেটি ব্যবসায়ীদের কাছে বোধগম্য নয়। গ্যাসের বর্তমান মূল্যহার কমিয়ে ব্লেন্ডেড মূল্যের সর্বোচ্চ ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণ করে শিল্প ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব যবস য় র ও ব যবস ব ইআরস সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে

চীনা পণ্যের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করায় ভারত থেকে আইফোনের সরবরাহ জোরদার করেছে অ্যাপল। ফলে ভারতে আইফোনের উৎপাদন বেড়েছে। গত তিন মাসে (মার্চ থেকে মে) ভারতে তৈরি হওয়া প্রায় সব আইফোন ফক্সকনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। খবর রয়টার্সের

ভারতে তৈরি আইফোন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস, চেক প্রজাতন্ত্র, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। তবে এখন প্রায় একচেটিয়াভাবে যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে। অ্যাপলের ফোন তৈরির ঠিকাদার ফক্সকন গত মার্চ থেকে মে পর্যন্ত তিন মাসে ভারতে তৈরি ৩০২ কোটি ডলার মূল্যের আইফোন রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে ৯৭ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর ভারত থেকে আইফোন রপ্তানির প্রায় ৫০ শতাংশের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র।

ভারতের কাস্টমস বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে রয়টার্স জানায়, চলতি বছরের মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ফক্সকন ভারতে তৈরি ৪৪০ কোটি ডলারের আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। গত বছর ১২ মাসে মোট ৩৭০ কোটি ডলারের আইফোন পাঠানো হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে অ্যাপল কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। আর ফক্সকনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

অবশ্য ভারতে আইফোনের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে ট্রাম্প মে মাসে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। তিনি অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুককে বলেন, ‘আমরা চাই না আপনি ভারতে উৎপাদন করুন। ভারত নিজের খেয়াল রাখতে পারে, তারা ভালোই করছে। আমরা চাই আপনি এখানে (যুক্তরাষ্ট্রে) উৎপাদন করুন।’

যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজেদের বিপক্ষে থাকা বাণিজ্যঘাটতি কমাতে এই পদেক্ষপ নেন তিনি। বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক বসান ৫৭টি দেশের ওপর। ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। আর চীনের ওপর এই শুল্ক গিয়ে পৌঁছায় তিন অঙ্কের ঘরে। চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। যদিও উভয় দেশ বর্তমানে শুল্ক কমানোর আলোচনার মধ্যে রয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার বলেন, চীনের ওপর ৫৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যদিও এই পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হয়নি।

চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে ফোনের দাম অনেক বেড়ে যাবে—মূলত এ কারণেই ভারত থেকে উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে অ্যাপল। পাল্টা শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত পেয়ে গত মার্চ মাসে ভারত থেকে আইফোন ১৩, ১৪, ১৬ ও ১৬ই মডেলের প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের ফোন চার্টার্ড বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতে আগে ৩০ ঘণ্টা সময় লাগত, সেটি ৬ ঘণ্টায় নামিয়ে আনতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে অ্যাপল। এই বিমানবন্দরই হলো আইফোন রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র।

অ্যাপল প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ কোটিরও বেশি আইফোন বিক্রি করে, যার প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি হয় চীনে। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রচীর সিং বলেন, ‘চলতি বছর বিশ্বব্যাপী আইফোন সরবরাহের ২৫-৩০ শতাংশ ভারতে তৈরি হবে, যা ২০২৪ সালে ছিল ১৮ শতাংশ।

এদিকে ভারতের টাটা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান টাটা ইলেকট্রনিকস অ্যাপলের একটি ছোট আইফোন সরবরাহ করে থাকে। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে তাদের উৎপাদিত ৮৬ শতাংশ আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে। তবে মে মাসের তথ্য পাওয়া যায়নি। গত বছরের জুলাইয়ে আইফোন রপ্তানি শুরু করে টাটা। গত বছর তাদের ৫২ শতাংশ আইফোন রপ্তানি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে।

দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কারখানায় কেবলমাত্র আইফোনের চূড়ান্ত সংযোজন হয়। এটি কম মুনাফার ব্যবসা হলেও কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। চীনে প্রায় ৩ লাখ এবং ভারতে ৬০ হাজার কর্মী আইফোন সংযোজনের কাজ করছেন।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ হাজার ডলারের একটি আইফোন থেকে কোয়ালকম ও বোর্ডকমের মতো মার্কিন কোম্পানি ৮০ ডলার, তাইওয়ান চিপ উৎপাদনের জন্য ১৫০ ডলার, দক্ষিণ কোরিয়া ওএলইডি ও মেমোরির জন্য ৯০ ডলার এবং জাপান ক্যামেরার জন্য ৮৫ ডলার আয় করে। জার্মানি, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া পায় ৪৫ ডলার। ভারত ও চীন মাত্র ৩০ ডলার করে পায়, যা মোট মূল্যের ৩ শতাংশেরও কম। তবে মূল্য সংযোজন কম হলেও বিষয়টি ভারতে কর্মসংস্থানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুপারম্যানের কাছে আছে পৃথিবীর শক্তি সংকটের সমাধান
  • দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায় 
  • ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে?
  • ইরান–ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে
  • বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান
  • বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সহসভাপতি হলেন যাঁরা
  • ইরানে হামলার আগে গোপনে ইসরায়েলে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
  • টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিবকে শেষ বিদায় জানালেন সহকর্মীরা
  • ভারত থেকে আইফোন রপ্তানি কেন বাড়ছে
  • দেশে ফিরেছে ব্যবসায়ী রাকিব ও পাইলট সাইফুজ্জামানের মরদেহ