জামিনের পর বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমের পদত্যাগ
Published: 10th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেছেন। আজ সোমবার তিনি বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন।
বিএসইসির শীর্ষ পর্যায়ের একটি সূত্র তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিএসইসির সূত্রটি জানায়, চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি চাকরিবিধি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগটি গ্রহণ করেছেন।
গত বুধবার সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরকে কেন্দ্র করে বিএসইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও তিন কমিশনারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এই দাবি আদায়ে বিএসইসির কার্যালয়ের বিদ্যুৎ-সংযোগ, সিসিটিভি-সংযোগ বিচ্ছিন্ন, মূল ভবনের ফটক বন্ধ করে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এরপর সেনাসদস্যরাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে ‘অবরুদ্ধ’ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন। এই উদ্ধার অভিযানকালে বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন। এর প্রতিবাদে চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কর্মবিরতির কারণে বৃহস্পতিবার বিএসইসিতে অচলাবস্থা ছিল। এই অচলাবস্থার মধ্যে ওই দিন বেলা তিনটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে কার্যালয়ে আসেন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা।
গত বুধবারের ঘটনায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। বিএসইসির চেয়ারম্যানের গানম্যান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার এ মামলা করেন। এই মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১ নম্বরে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম। গত রোববার এই মামলায় তিনি জামিন নেন। গত রোববার ও সোমবার দুদিনে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মাহবুবুল আলমসহ মোট ১৩ জন অভিযুক্ত জামিন নিয়েছেন। জামিনপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আজ সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে নিজ নিজ দপ্তরে কাজে যোগ দেন। তার আগে গত রোববার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফেরেন। তবে মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই ওই দিন কার্যালয়ে যাননি।
মাহবুবুল আলমের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএসইসির শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু তিনি মামলার অভিযুক্ত তাই তাঁর পদত্যাগপত্রটি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। আইনি মতামত নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আজ সোমবার বিএসইসির সব পর্যায়ের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার। এই বৈঠকে কর্মীদের উদ্দেশে লিখিত বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। পরে এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তাতে গত বুধবার বিএসইসি সংঘটিত ঘটনাকে চরম অনভিপ্রেত ও কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মচারীর প্ররোচনা এবং অংশগ্রহণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনা প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের পাশাপাশি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বুধবারের ঘটনা পুঁজিবাজারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে দেশে–বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। সারা পৃথিবীতে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে ভবিষ্যতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পরিপূর্ণ দায়িত্বশীলতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন বিএসইসির চেয়ারম্যান।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠক সব মিলিয়ে প্রায় ১০ মিনিটের মতো চলে। তাতে বক্তব্য দেন শুধু কমিশনের চেয়ারম্যান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পদত য গ কর মকর ত ব এসইস র র ব এসইস কর ছ ন স মব র র ঘটন গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল