যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুরে পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার তিনটি পৃথক স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।

অভয়নগর উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আরিয়ান নামের দেড় বছর বয়সী এক শিশু পুকুরে ডুবে মারা যায়। পরে দুপুর পৌনে ২টার দিকে নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকরা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে রুকসানা (১১) নামের আরেক শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়। 

জানা গেছে, প্রেমবাগ ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের শামীম হোসেন ও রুবিনা বেগমের ছেলে আরিয়ান। বুধবার সকালে আরিয়ানকে রেখে তার মা রুবিনা বড় মেয়ে হুমায়রাকে নিয়ে স্কুলে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পরিবারের লোকজন আরিয়ানকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে কোথাও না পেয়ে বাড়ির পাশের পুকুরে খুঁজতে গেলে তাকে পানিতে ভাসতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নওয়াপাড়া পৌরসভার বুইকরা গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়ে রুকসানা (১১) দুপুরে বাড়ির পাশে পুকুরে গোসল করতে যায়। পরে তাকে খুঁজে না পেয়ে পুকুরে খুঁজতে থাকেন পরিবারের লোকজন। স্থানীয়রা পরে তাকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়। রুকসানার পরিবারের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলায় রুকসানার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অভয়নগরের ইউএনও পুলিশসহ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা আলিমুর রাজিব বলেন, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলিম বলেন, দুই শিশু মারা যাওয়ার বিষয়ে থানায় দুটি পৃথক অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

মনিরামপুরে টিউবওয়েলের পাশে খেলার সময় পানিভর্তি বালতির মধ্যে পড়ে ১৮ মাস বয়সী আরশি খাতুনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার শ্যামকুড় ইউনিয়নের ধলিগাতী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আরশি ওই গ্রামের ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী ইকবাল হোসেনের মেয়ে।

এলাকাবাসী জানান, বুধবার দুপুরে বাড়ির টিউবওয়েলের পাশে আরশিকে মাটিতে রেখে মা সুমাইয়া খাতুন গৃহস্থালির কাজ করছিলেন। আরশি খেলা করতে করতে এক পর্যায়ে সবার অজান্তে টিউবওয়েলের পাশে পানিভর্তি বালতির মধ্যে পড়ে যায়। পরে বালতির ভেতর থেকে তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরশির মৃত্যু হয়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আরশির বাবা-মা শোকে পাথর। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মনিরামপুর থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী জানান, এ ব্যাপারে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স আর য় ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ বছর ধরে নলকূপ থেকে গড়গড়িয়ে পড়ছে পানি, জন্মাচ্ছে কৌতূহল

ভবেরমুড়া। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই গ্রামটির অবস্থান বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্ত এলাকায়। এই গ্রামেরই একটি নলকূপকে ঘিরে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। নলকূপটিতে নেই কোনো হাতল বা বৈদ্যুতিক মোটরের সংযোগ। এরপরও দিনরাত নির্গত হচ্ছে সুপেয় পানি।

নলকূপটি যেখানে স্থাপন করা হয়েছে, সেটি ‘ভবেরমুড়া পাক দরবার শরীফ’ নামে একটি মাজার প্রাঙ্গণ। স্থানীয় ও মাজার কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই নলকূপটি প্রায় ১৭ বছর আগে স্থাপন করা হয়েছিল। স্থাপনের দিন থেকেই টানা ১৭ বছর ধরে সেটি থেকে অনবরত পানি বের হচ্ছে। এই পানি এলাকার লোকজন পান করছেন, যাচ্ছে কৃষিজমিতেও। এরই মধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে নলকূপ নিয়ে বিভিন্ন বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করেছে। তাঁরা বলছেন, বিশেষ কোনো ‘কুদরতে’ গড়গড়িয়ে এই পানি পড়ছে। এ ছাড়া এই পানি পান করলে ‘মনের আশা পূরণ’ হয় ভেবেও অনেকে সেটি পান করছেন।

কুমিল্লা নগর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে ভবেরমুড়া গ্রামটির অবস্থান। সোমবার দুপুরে সরেজমিনে ওই নলকূপ থেকে গড়গড়িয়ে পানি পড়তে দেখা গেছে। নলকূপটি থেকে পানি তুলতে চাপ দেওয়ার জন্য কোনো হাতলও নেই। নিজ থেকেই সেটির মুখ দিয়ে পানি পড়ছে। বের হওয়া পানির চাপও অনেক। আধা লিটারের একটি মগ ভরতে সময় লেগেছে মাত্র দুই সেকেন্ড। সে হিসাবে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার, এক ঘণ্টায় ৯০০ লিটার এবং দিন ও রাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় বের হচ্ছে ২১ হাজার ৬০০ লিটার পানি।

মূল কারণটা হচ্ছে ভূগর্ভে পাহাড়ি এলাকায় পানির স্তর অনেক ওপরে চলে আসে। যার কারণে কোনো নলকূপ স্থাপন করলে ওই সব লেয়ারে সংযোগ পেলেই পানির অধিক চাপে এভাবে অনবরত পানি নির্গত হয়। যেটির পানির চাপও ভালোই থাকে।মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, কুমিল্লা

স্থানীয় বাসিন্দা শিউলি বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘গ্রামে ও মাজারের পাশে বর্তমানে অনেক টিউবওয়েল আছে। কিন্তু কোথাও থেকে এভাবে পানি পড়ে না। অন্য টিউবওয়েলে এক কলস পানি ভরতে অনেক সময় লাগে। আর এখানে এক মিনিটও লাগে না। এই পানি অনেক পরিষ্কার। আমরা এটি দিয়ে রান্না করি, নিজেরাও পান করি।’

সরেজমিনে দেখা দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন ওই নলকূপের পানি পান করছেন। কেউ হাত-মুখ ধুচ্ছেন, আবার কেউ গোসল করছেন। দূর থেকে আসা মানুষজন এই পানি কেউ জগ বা বোতলে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন। নলকূপ থেকে অনবরত বের হওয়া এই পানি পাইপ ও নালার মাধ্যমে চলে যাচ্ছে আশপাশের কৃষিজমিতে।

‘ভবেরমুড়া পাক দরবার শরীফ’ নামে ওই মাজারের বর্তমান পীর মাওলানা কাজী রফিকুল ইসলাম হক শাহ্। প্রথম আলোকে তিনি জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে এই টিউবওয়েল তিনি নিজ উদ্যোগ নিয়ে স্থাপন করেন। এটির গভীরতা প্রায় ৬০০ ফুট। এই দরবার শরীফের (মাজার) বয়স প্রায় ১০০ বছর। এখানে তাঁর দাদা ও বাবাও এই মাজারের পীর ছিলেন। প্রতিবছর এতে বাংলাদেশ ও ভারতের অসংখ্য ভক্তের আগমন ঘটে। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে এই দরবারের লক্ষাধিক ভক্ত রয়েছেন। মাজারে একসময় সুপেয় পানির অভাব ছিল। আশপাশেও পানির তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভক্তরা পুকুর থেকে পানি পান করতেন। সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে এই নলকূপ বসানো হয়।

নলকূপটি থেকে নির্গত সুপেয় পানি সাধারণ মানুষ পান করার পাশাপাশি নানা কাজে ব্যবহার করান। অনেকে নিয়েও যান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ বছর ধরে নলকূপ থেকে গড়গড়িয়ে পড়ছে পানি, জন্মাচ্ছে কৌতূহল