ভয়েস অব আমেরিকার ১৩০০ কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি
Published: 16th, March 2025 GMT
ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি এশিয়া, রেডিও ফ্রি ইউরোপসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এসব গণমাধ্যমের হাজারও কর্মীদের ইমেইলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে- তারা তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে পারবেন না। কর্মীদের প্রেস পাস ও অফিসের কাছ থেকে পাওয়া উপকরণ ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে এসব গণমাধ্যমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল। খবর- রয়টার্স
এ ব্যাপারে ভয়েস অব আমেরিকার পরিচালক মাইকেল আব্রামোউইৎজ জানিয়েছেন, বিশ্বের ৪৮টি ভাষায় ভয়েস অব আমেরিকা সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। শনিবার এক হাজার ৩০০ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এ পদক্ষেপের কারণে ভয়েস অব আমেরিকার কার্যক্রম আর চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান দ্য ইউএস এজেন্সি ফর গ্লোবাল মিডিয়া (ইউএসএজিএম) তাদের আরও দুই সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি ও রেডিও ফ্রি এশিয়ার বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে রেডিও ফ্রি ইউরোপ সম্প্রচারিত হয়। এ ছাড়া ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেও এটি শোনা যায়। রেডিও ফ্রি এশিয়া চীন ও উত্তর কোরিয়ায় সম্প্রচারিত হয়।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি তহবিলে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার মূল প্রতিষ্ঠান এবং আরও ছয়টি ফেডারেল সংস্থাকে কর্মী হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এছাড়া ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ইউএসএইড ও দেশটির কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের কার্যক্রম প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন আরও আগে। তিনি শুক্রবার একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জানান, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংক্রান্ত মার্কিন এজেন্সি (ইউএসএজিএম) হচ্ছে এমন একটি সংস্থা যার মধ্যে ‘ফেডারেল আমলাতন্ত্রের আলামত রয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।’ বর্তমানে ইউএসএজিএমের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন কট্টর ট্রাম্পসমর্থক হিসেবে পরিচিত কারি লেইক। তিনি ওই গণমাধ্যমগুলোকে ইমেইল করে জানান, তারা আর কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে তহবিল পাবেন না।
রেডিও ফ্রি ইউরোপ ও রেডিও লিবার্টির প্রধান স্টিফেন কেইপাস তহবিল বাতিলের বিষয়টিকে ‘আমেরিকার শত্রুদের জন্য সুবিশাল উপহার’ মন্তব্য করে বলেন, ‘৭৫ বছর পর আরএফই/আরএল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ইরানের আয়াতোল্লাহ, চীনের কমিউনিস্ট নেতা এবং মস্কো ও মিনস্কের একনায়করা উদযাপন করবেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে এক পোস্টে আব্রামোভিচ লেখেন, ‘৮৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার বহু ভাষাভাষীর ভয়েস অব আমেরিকা নীরব হয়ে যাচ্ছে, এ জন্য আমি গভীরভাবে ব্যথিত। বিশ্বজুড়ে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াইয়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছিল।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’