দ্রুত নির্বাচন দিন, প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার: রুহুল কুদ্দুস তালুকদার
Published: 16th, March 2025 GMT
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু) দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনীয় সব সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে। আজ রোববার সন্ধ্যায় নাটোর সদর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া বিদ্যালয় মাঠে দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন বিএনপি আয়োজিত ইফতারপূর্ব বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, দেশে আইনের শাসন বাস্তবায়িত না হলে স্থিতিশীলতা আসবে না। নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনোভাবেই স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, রাষ্ট্র সংস্কার হবে, সরকারি অফিস–আদালতে ঘুষ–দুর্নীতি কমবে। কিন্তু হয়েছে তার উল্টো। দেশে ঘুষ–দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এখনো রাষ্ট্রের দৃশ্যমান কোনো সংস্কার করতে পারেনি। তাই দেশের প্রয়োজনীয় সব সংস্কার দ্রুত করার জন্যই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে মন্তব্য করে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করছে। দেশের মানুষের জীবন মান রক্ষার জন্য দ্রুত নির্বাচন দেওয়া জরুরি।
দিঘাপাতিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ইফতার মাহফিলে আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান আসাদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, জিল্লুর রহমান খান চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম, সদর থানা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সানোয়ার হোসেন প্রমুখ।
ইফতার মাহফিলে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে–বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর থেকে তাদের নেতা-কর্মীদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। যেকোনোভাবেই হোক তারা বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা যেকোনো মূল্যে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে এ সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে সুবিধা নিতে চায়। আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের সব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। তাদের ১৬ বছরের জুলুম–দুঃশাসন ভুলে গেলে চলবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে গ্রেপ্তার করেছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নে পীর কাশিমপুর গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শাহ আলম একই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ওই তিন খুনের মামলায় এজাহারনামীয় আসামি।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’০৬ জুলাই ২০২৫তবে শাহ আলম ওই মামলার প্রকৃত আসামি নন বলে দাবি করেছেন তাঁর ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার। তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ বলছে, আমার বাবাকে ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তিনি এজাহারনামীয় আসামি। তবে এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা শাহ আলম নামের আসামির বয়স ৪০ বছর। আর আমার বাবার বয়স ৭০ বছরের বেশি। এ ছাড়া আমার দাদার নাম জানেন না, এলাকায় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে আসামির পিতার নাম অজ্ঞাত রাখা হলো কেন? এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার বাবাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এই মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।’
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনও বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে শুনিনি তিনি (শাহ আলম) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ঘটনার সময় বা আগে-পরের কোনো সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। আমার মনে হয়, কোথাও ভুল হচ্ছে। তাঁকে অযথা গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে হয়রানি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার০৫ জুলাই ২০২৫ঘটনার সময় শাহ আলম ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পীর কাশিমপুরের শাহ আলম নামের একজন জড়িত বলে যখন জানতে পেরেছি, তখন মামলায় নামটি উল্লেখ করেছি। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি বলে আমি মামলাতে আসামির বাবার নাম অজ্ঞাত রেখেছি। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। আমি কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করতে চাই না। ডিবি পুলিশের তদন্তে যদি তিনি ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে গ্রেপ্তার করুক; না হলে, আমি চাই না কোনো নিরীহ মানুষের হয়রানি হোক।’
ঘটনার প্রায় এক মাস পার হলেও প্রধান আসামি শিমুল বিল্লাহ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিক্তা। তিনি বলেন, ‘শিমুল গ্রেপ্তার না হলে যেকোনো সময় আমার ওপর হামলা হতে পারে, আমাকে হত্যাও করতে পারে। আমি দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার ৩৯ ঘণ্টা পর মামলা, আটক ২০৫ জুলাই ২০২৫সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে শাহ আলমের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলাটির মোট ১০ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯ আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। নতুন করে গ্রেপ্তার শাহ আলমকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের রোকসানা বেগম (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আকুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। তিনি পলাতক আছেন।
আরও পড়ুনমুঠোফোন চুরিকে কেন্দ্র করে খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীকে০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনকুমিল্লায় মাদক বেচাকেনার অভিযোগে মা ও দুই সন্তানকে গণপিটুনি, কুপিয়ে হত্যা০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫