চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের স্বজনদের বিনা মূল্যে ইফতারি ও রাতের খাবার দিচ্ছে ‘মেহমান’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। প্রতিদিন প্রায় ১৫০ জনের মেহমানদারি করা হয়। ছয় বছর ধরে চলছে এ কার্যক্রম। কার্যক্রমটি চলছে কয়েকজন সুহৃদের সহায়তায়।

‘মেহমান’-এর কর্মসূচির সমন্বয় ও বিতরণকাজের মূল দায়িত্ব পালন করেন পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট জহিরুল ইসলাম। বিতরণকাজে তাঁকে সহয়তা করেন গিয়াসুর রহমান, আমিনুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন।

জহিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও খাবার দেওয়া হয় ১০০ শয্যার হিসাবে। হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ১০০ জনের অনেক বেশি। রোগীদের দেখাশোনার জন্য থাকা স্বজন ও হাসপাতাল থেকে খাবার না পাওয়া রোগী ও স্বজনদের রাতের খাবার ও ইফতারি দিয়ে আসছে ‘মেহমান’।

‘মেহমান’ গঠনের বিষয়ে জহিরুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে হাসপাতালের পাশে পরিবার পরিকল্পপনা বিভাগের মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের তখনকার চিকিৎসা কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদের উদ্যোগে গঠিত হয় এটি। ওই বছর পাঁচ টাকা মূল্যে রাতের খাবার খিচুড়ি দেওয়া হতো। খিচুড়িতে চাল-ডাল-সবজির সঙ্গে থাকত মুরগির মাংস। পরের বছর করোনাকালে মানুষ আর্থিক সংকটে পড়েন। তখন থেকে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। রাতের খাবারের সঙ্গে ইফতারিও দেওয়া শুরু হয় ওই বছর থেকে। এ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার জন্য কারও কাছে সহায়তা চাইতে হয় না। মানুষ নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেন। কেউ কেউ এক দিনের পুরো খরচ দিয়ে দেন। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী হুমায়ন কবীর ও তাঁর ছোট ভাই প্রতিবছরই টাকা দেন।

সম্প্রতি হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা যায়, জহিরুল ইসলাম, গিয়াসুর রহমান ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক তরিকুল ইসলাম ইফতারি কাগজের ঠোঙায় ভরছেন। ঘণ্টাখানেক ধরে এই কাজে ব্যস্ত তাঁরা। হাসপাতালের রান্নাঘরেই তৈরি হয় ইফতারের ঘুগনি, বেগুনি ও রাতের খাবারের খিচুড়ি। বিকেল পৌনে পাঁচটা থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ইফতারি ও রাতের খাবার নিতে আসা শুরু হয়ে যায়।

খাবার নিতে আসা পানতারা বেগম (৫০) বলেন, ‘বাড়ি ম্যালা দূর (শিবগঞ্জ উপজেলার গোপাল নগরে)। মাসের ছয়-সাত থ্যাকা ১০ মাসের লাতিন (নাতনি) আর বেটিক লিয়া হাসপাতালে আছি। আইজ লিয়া চাইর দিন থ্যাকা আসছি ইফতারি আর খিচুড় লিতে। বিহ্যান ইফতারির ল্যাগা ছাতু বাইন্ধা দিয়াছিল। ছাতু দিয়া কি ইফতারি ভাল্লাগে? এ্যারঘে (এদের) ইফতারি পায়্যা খুব উপকার। ইফতার কইর‍্যা নামাজের দোয়া করি ওরঘে লাইগ্যা।’

গোমস্তাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের চেরাডাঙ্গার খায়রুন নেসাও একই ধরনের কথা বললেন। তিনি স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন আট দিন ধরে। এই খাবারটুকু পেয়ে তাঁর বড় উপকার হয়।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মাসুদ পারভেজ বলেন, তিন বছর ধরে তিনি ‘মেহমান’–এর কার্যক্রম দেখছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর বেশির ভাগই দরিদ্র। হাসপাতালে ১০০ জনের খাবার বরাদ্দ থাকে। রোগী থাকে এর দ্বিগুণের বেশি। এ উদ্যোগের কারণে তাঁদের ও স্বজনদের অনেক উপকার হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বজনদ র ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ