দিনাজপুরের দক্ষিণ-পূর্বাংশের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট এই পাঁচ উপজেলা মিলিয়ে একটিমাত্র হিমাগার রয়েছে। সেটি ফুলবাড়ীতে। মৌসুমের শুরু থেকে হিমাগারের সামনে আলু বোঝাই গাড়ির দীর্ঘ সারি। হিমাগারের ভেতরে শতাধিক ট্রাক্টর, ভটভটি ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানে ভর্তি আলু নিয়ে হিমাগারে ঢোকানোর অপেক্ষায় কৃষকেরা। হিমাগারের ভেতরের অংশের পাশাপাশি ঢোকার অপেক্ষায় বাইরেও অবস্থান করছে শতাধিক ট্রাক্টর ভর্তি আলু।

হাকিমপুর উপজেলার খট্রা-মাধবপাড়া গ্রামের আলু চাষি নাজমুল হক বলেন, “চলতি মৌসুমে আগাম জাতের দুই বিঘা আলু চাষ করেছিলাম। প্রথমে দাম অনেক ভাল পেয়েছি। পরে চার বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করি। হিমাগারে রাখার জন্য এক ট্রাক্টর আলু নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলার রাঙামাটির ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজে নিয়ে এসেছি। এখনও সিরিয়ালের কোনো স্লিপ পাইনি। আদৌ আলু হিমাগারে রাখতে পারবেন কি না, তা জানি না।” 

জায়গা না পেলে হয়তো ফিরে যেতে হবে এই কৃষককে। এতে একদিকে সময়ের অপচয়, অন্যদিকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি গাড়িভাড়া। একে তো আলুর দাম কম, আবার সংরক্ষণের জায়গার অভাবে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষক-ব্যবসায়ীদের।

এ উপজেলার মোমিনুল, এরশাদ সরকার, জাকিরুল ইসলাম, কবির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আলু চাষি একই অভিযোগ করে বলেন, “এমন ভোগান্তিতে পড়তে হবে আগে জানতাম না। এত কষ্ট করে আলু চাষ করে তা সংরক্ষণ করতে পারছি না।”

নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ গ্রামের আলু চাষি কৃষক রজব আলী বলেন, “আগামী বছরে আলু চাষের জন্য বীজের জন্য ৬০ কেজির তিন বস্তা আলু নিয়ে এসেছি হিমাগারে। সিরিয়াল এখনও পাইনি, জানি না পাব কি না।”

ফুলবাড়ী উপজেলার পাকাপান গ্রামের আলু চাষি লিয়াকত আলী বলেন, “৫৫ কেজির ২৫ বস্তা আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এখানে এনেছি। হিমাগারের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রাখার জায়গা পাব না। কৃষক আর ব্যবসায়ীদের যত আলুর গাড়ি ঠাসাঠাসি অবস্থায় আছে। তা দেখে মনে হচ্ছে আলু নিয়ে ফিরে যেতে হবে।”

ফুলবাড়ী কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক মাহমুদুল হাসান বলেন, “কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়েই আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোল্ডস্টোরেজের ধারণক্ষমতা ৬০ কেজির ১ লাখ ৬০ হাজার বস্তা। এরই মধ্যে আলু সংগ্রহ ধারণ ক্ষমতা পূরণ হয়ে গেছে। তবুও কৃষকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে হিমাগারের প্রাথমিক শীতলীকরণ (অতিরিক্ত) জায়গায় কিছু বস্তা রাখার চেষ্টা করছি। এরপরেও হাজার হাজার বস্তা আলু নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে। জায়গার অভাবে উপায় না পেয়ে কৃষকদের ফেরত দিতে হচ্ছে।”

ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, “গত বছর এই উপজেলায় আলুর আবাদ হয়েছিল ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর এবং এ বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। ৪৫ হাজার ৮১৫ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না আসায় আলুর আবাদ ও ফলন ভাল হয়েছে।”

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো.

আনিছুজ্জামান বলেন, “আলুর দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের পাশাপাশি আলু সংরক্ষণের দিকে ঝুঁকেছেন ব্যবসায়ীরাও। এতে প্রতিটি হিমাগারের ওপর চাপ বেড়েছে। আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে আলুর আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে, এতে কৃষকেরা লাভবান হবেন।”

ঢাকা/মোসলেম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ক ষকদ র র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত