বাসযোগ্য শহর গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য নগরবাসীর সচেতনতা প্রয়োজন। যাতে তাঁরা দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু সম্ভব কম কম জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করেন।

‘বাসযোগ্য শহর বিনির্মাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক নীতি সংলাপে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে দেশের বায়ুমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে এবং ক্রমেই এটি তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান সব সময়ই নিম্নমানের থাকে। সংস্থার মতে, বায়ুদূষণ প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটায়। পাশাপাশি স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস ক্যানসার এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান প্রবন্ধে ৯টি করণীয় ও সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালিসহ সব ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় কার্বন নিঃসরণের মান নির্ধারণ ও এর কঠোর প্রয়োগ; নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক তহবিলের ব্যবহার; বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি; নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার উপযোগী করে ভবনের নকশা প্রণয়ন এবং বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, অবশ্যই সাধ্যমতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। সবাইকে নিজেদের জায়গা থেকেই এই চর্চা শুরু করতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো.

জিয়াউল হক বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তদারকির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুনপ্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিটি দায়সারা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যৌথভাবে এ নীতি সংলাপের আয়োজন করে ক্যাপস, বিআইপি, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং জেট নেট বিডি।

আলোচনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, নেওয়াজ মোরশেদ, সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, বারসিকের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান, মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এবং সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) গবেষণা কর্মকর্তা ইলমি তাবাচ্ছুম অংশ নেন।

আরও পড়ুননবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি১৪ নভেম্বর ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ব ল ন র ব যবহ র স ন ট র ফর ব যবহ র ব পর ব শ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

ইরানে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন দল। অবিলম্বে এই হামলা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এ বিষয়ে দুনিয়ার শান্তিকামী দেশ ও বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তারা। গতকাল রোববার পৃথক বিবৃতিতে এসব দলের নেতারা এই দাবি জানান। তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ ও ইরানের জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদুল হাসান মানিক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নুর আহমদ বকুল এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তার নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে রেখেছে। একতরফা যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে ইরানের রাজনৈতিক সামরিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেষ্টা করছে। যুদ্ধবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে এখনই থামতে হবে। অন্যায়ভাবে ইরানের শিশু-নারী ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর বোমা ও মিসাইল হামলা বন্ধ করতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অঞ্চল লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা রাষ্ট্রীয় ভয়ানক সন্ত্রাসী তৎপরতা। পরিকল্পিত এই হামলা আন্তর্জাতিক সব ধরনের বিধিবিধানকে  বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর শামিল। জাতিসংঘকেও এরা পুরোপুরি ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ