পাওনা টাকা চাওয়ার জের ধরে ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মেহেদী সিকদারকে কুপিয়ে এবং ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। পাল্টা হামলায় প্রতিপক্ষের সমর্থক বাদল খানকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে।

শনিবার (২২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই  ইউনিয়নের বুখাইনগর বাজারে সালিশ বৈঠক শেষে এ হামলা ও পাল্টা হামলা হয়। আহতদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বুখাইনগর বাজারের কনফেকশনারী ব্যবসায়ী রনির কাছ থেকে বাকিতে পণ্য নেয় স্থানীয় তুহিন খানের ছেলে তামিম। বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করলে রনি স্থানীয় বাজার কমিটির সেক্রেটারি এবং চরমোনাই ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মাসুম হাওলাদারের কাছে বিচার দেন। এ নিয়ে শনিবার (২২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে উভয়পক্ষ সালিশ বৈঠকে বসে। এ সময় সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা তুহিন খান তার ছেলে তামিমকে থাপ্পড় দিয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চাওয়ায়। ক্ষমা চাওয়ার সময় তামিম কানে কানে রনিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে সালিশ বৈঠকে হট্টোগোল শুরু হলে তুহিন খান ক্ষিপ্ত হয়ে ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব মেহেদী শিকদারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান। এ সময় তুহিনের পক্ষ নিয়ে বাদল খান মারধর শুরু করেন ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনকে। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মেহেদী সিকদারকে কুপিয়ে যখম করা হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজনও বাদল খানকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে জখম করেন।

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে থানার ভেতরে ছাত্রদল নেতার হামলায় আহত ২

মসজিদের ভেতরে কোপানের ঘটনায় আরেকজনের মৃত্যু, নিহত বেড়ে ৪ 

আহত মেহেদী সিকদার বলেন, ‘‘মাসুম মাস্টার বিএনপির নেতা হয়ে আওয়ামী লীগের লোকজনকে শেল্টার দেন। তার নেতৃত্বে তার দুই ছেলে রাফসান, সারাফাতসহ বাদল, তুহিন আমাকে মারধর করেন এবং বাসা থেকে দা এনে কুপিয়ে জখম করেন।’’ 

আহত বাদল খান বলেন, ‘‘তুহিন খান আমার আত্মীয়। এ জন্য আমাকে দেখেই মারধর করেন এবং কুপিয়ে জখম করেন মেহেদী সিকদার ও তার লোকজন।’’

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, এ ঘটনায় মেহেদী শিকদারের পরিবারের সবাই থানায় এসেছেন। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ঢাকা/পলাশ/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব দল খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ