বগুড়ায় এনসিপির নেতা-কর্মী পরিচয়ে মহাস্থান জাদুঘরের নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ, থানায় জিডি
Published: 26th, March 2025 GMT
সরকার নির্ধারিত সময়ের পর বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরে ঢুকতে দিতে দেরি করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা–কর্মী পরিচয়ে জাদুঘরের এক নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় এনসিপির নেতা পরিচয়ে জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মহাস্থান জাদুঘর–সংলগ্ন জাহাজঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ বুধবার মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা স্থানীয় শিবগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে অভিযোগের ব্যাপারে এনসিপির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
জাদুঘর সূত্রে জানা যায়, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পবিত্র রমজান মাসে মহাস্থান জাদুঘর ও মহাস্থান প্রত্নস্থল সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সেই অনুযায়ী গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় মহাস্থান জাদুঘরসহ জাহাজঘাটা ও গোবিন্দভিটা প্রত্নস্থল বন্ধ হয়ে যায়।
দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল বগুড়ার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এনসিপির পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ চার শতাধিক ব্যক্তি আমন্ত্রিত ছিলেন। ইফতার মাহফিলে এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা কয়েকজন তরুণের বিরুদ্ধে নির্ধারিত সময়ের পর মহাস্থান জাদুঘর ঘুরতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে।
জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, জাদুঘর ও প্রত্নস্থল বন্ধ হওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর বিকেল পাঁচটার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ নিজেদের এনসিপির নেতা–কর্মী পরিচয় দিয়ে জাহাজঘাটা প্রত্নস্থলে প্রবেশ করতে চান। জাদুঘর থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চাবি নিয়ে জাহাজঘাটা প্রত্নস্থলে গিয়ে খুলে দিতে পাঁচ মিনিটের মতো দেরি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জাদুঘরের কর্মচারী বাপ্পী মিয়ার ওপর হামলা করেন এবং এলোপাতারি মারধর করেন। এরপর হামলাকারীদের একজন মুঠোফোনে তাঁকে কল করে জাদুঘরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের বাড়ি বগুড়ায়। অভিযোগের বিষয়ে আজ বুধবার বিকেলে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। এ বিষয়ে জেলার দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ দ ঘর র ক স ট ড য় ন এনস প র ন ত কর মকর ত ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।