এখন থেকে স্টার্টআপ উদ্যোক্তারা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসাকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে পারবেন। একজন উদ্যোক্তা বিদেশে আইনগত কোনো সত্তায় বিনিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার বিদেশে নিতে পারবেন। এর জন্য আর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে না। তবে বৈদেশিক মুদ্রা নিজস্ব উৎস থেকে নিতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ করে বা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধার মাধ্যমে নেওয়া যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের কোম্পানি বিদেশি কোনো কোম্পানির সঙ্গে সোয়াপ পদ্ধতিতে শেয়ার বিনিময় করতে পারবে। 
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি না লাগলেও কোন কোন শর্তে ব্যাংকগুলো গ্রাহকের পক্ষে বিদেশে তহবিল পাঠাবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করে অনুমোদনের ভিত্তিতে দেশের বাইরে বিনিয়োগ করা যায়। শুধু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করতে পারে। বিনিয়োগ করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান মাত্র ২৩টি।
স্টার্টআপ হলো নতুন এমন ব্যবসায়িক উদ্ভাবন, যেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ স্টার্টআপ উদ্যোগ উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, দেশের স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তাদের মাধ্যমে দেশে বিদেশিদের বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক মুদ্রা আসতে পারে। বিনিয়োগ সম্মেলনের ঠিক আগে এ কারণে এই উদ্যোগ নিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বিদেশি স্টার্টআপে ক্ষুদ্র বিনিয়োগের পাশাপাশি নিজস্ব শেয়ার বা সিকিউরিটিজের সঙ্গে বিদেশি কোম্পানির শেয়ার ‘সোয়াপ’ পদ্ধতির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সোয়াপ বা অদলবদল পদ্ধতির মাধ্যমে শেয়ার বিনিময় হবে। এতে দেশের বাইরে কোনো অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। বরং বিদেশিরা বাংলাদেশি কোম্পানির শেয়ার পাবেন। আর বাংলাদেশি উদ্যোক্তা পাবেন বিদেশি কোম্পানির শেয়ার। এভাবে পাওয়া শেয়ারও বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, অল্প কিছু ডলার বিনিয়োগ করে বিদেশে কোম্পানির অংশীদার হওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের মূলধনি হিসাব নিয়ন্ত্রিত থাকায় এ ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। যে কারণে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর কার্যকারিতা ও সফলতার ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পালনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো বাইরে বিনিয়োগের অর্থ পাঠাতে পারবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে না। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রাপ্রবাহ বাড়বে। কেউ অপব্যবহার করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদেশে কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনকারীর উদ্ভাবনী ধারণা থাকতে হবে, যা বিদেশে ব্যবসা সম্প্রসারণসহ পরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও আয় নিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ব্যাংকগুলোকে উদ্ভাবন, বাণিজ্যিক সম্ভাবনা, বিজনেস মডেল, দেশের সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা ইত্যাদি বিবেচনা করে তহবিল পাঠাতে হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ন য় গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে