এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক-নিন্দনীয়, কাজী হায়াৎ প্রসঙ্গে ডিপজল
Published: 27th, March 2025 GMT
“আমার সিনেমা জগতে আগমনের পেছনের পথপ্রদর্শক, এক অর্থে আমার সিনেমার জন্মদাতা কিংবদন্তি পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি শুধু একজন সফল নির্মাতাই নন, আমার জন্য পিতৃতুল্য একজন মানুষ, যার হাত ধরে আমি নতুনভাবে পথচলা শুরু করি। তার প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং কৃতজ্ঞতা চিরকাল থাকবে।”— বরেণ্য পরিচালক কাজী হায়াতের প্রতি এভাবেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জনপ্রিয় খলনায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে সিনেমা দেখে বের হওয়ার সময় নির্মাতা কাজী হায়াতের গাড়ি আটকে রাখেন শাকিব ভক্তরা। এরপর কাজী হায়াৎ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে ‘তুমি কে আমি কে, শাকিবিয়ান, শাকিবিয়ান’ বলে স্লোগান দিতে থাকে তারা। কেবল তাই নয়, এই পরিচালকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় শাকিব ভক্তদের। মূলত এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডিপজল।
কাজী হায়াতের সঙ্গে ঘটা ঘটনা ইচ্ছাকৃত বলে দাবি করেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তার মতে, “দুঃখজনকভাবে, এমন একজন গুণী ও বর্ষীয়ান ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়। আমার কাছে এটি ইচ্ছাকৃত বলেই মনে হয়েছে। একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে ছোট করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা। অথচ ইতিহাস সাক্ষী, সূর্যের আলো ঢেকে রাখা যায় না, কিংবদন্তির সম্মান কেড়ে নেওয়া যায় না।”
আরো পড়ুন:
কাজী হায়াতের সঙ্গে যে ব্যবহারটা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক: ওমর সানী
যে হোটেলে রুম সার্ভিসের কাজ করতেন, সেই হোটেলে অতিথি বোমান ইরানি
পুরো ঘটনাকে অন্যায় আচরণ বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তিনি বলেন, “আমরা সম্মানের সঙ্গে পথ চলতে শিখেছি, সম্মান দিতে জানি। তাই এমন অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমি, মনোয়ার হোসেন ডিপজল, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”
শাকিব খান অভিনীত আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। ঈদুল ফিতরে সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার সিনেমাটির প্রদর্শনী দেখতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডে যান নির্মাতা ও বোর্ড সদস্য কাজী হায়াৎ। আর সেদিন দুপুরে আনকাট সেন্সর সার্টিফিকেটের দাবিতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সামনে মানববন্ধন করেন শাকিবভক্তরা। সেখানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।