প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। এবার ঈদের ছুটি বেশি দিন হওয়ায় বেশি মানুষ বাড়ি যাচ্ছে। তবে গত সপ্তাহের শেষদিন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় যানজট ও গাড়ির চাপ তুলনামূলকভাবে কম। ফলে এবার অনেকটাই স্বস্তির ঈদযাত্রা হচ্ছে। ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরছে মানুষ।
শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল ৮টায় সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি। কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের বৃহস্পতিবার ছুটি হলেও চাপ এড়িয়ে যাত্রা করতে চেয়েছেন। এ কারণে আজ সকাল সকাল বাড়ি ফিরছেন তারা। বাস কাউন্টারগুলোতে অপেক্ষমান যাত্রী দেখা গেলেও, টিকিট কাটার কোনো চাপ দেখা যায়নি।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অনলাইনে টিকিট কেনার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাস কাউন্টারগুলোতে আগের মতো ভিড় নেই। তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে আগামীকাল রবিবার যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে তারা মনে করছেন। টার্মিনালে সকালে যাত্রী কম থাকলেও দুপুরের পর তা বাড়বে বলেও মনে করেন তারা।
শ্যামলী এনআর পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার কিশোর কুমার বলেন, “এবার যাত্রীদের মধ্যে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে। ঈদে ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় যাত্রীরা ধাপে ধাপে বাড়ি ফিরছেন। বুধবার থেকেই লোকজন বাড়ি ফেরা শুরু করেছেন। ফলে বাস টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড় হয়নি। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে যাত্রীদের চাপ ছিল। এছাড়া, এবার সবকিছু সুন্দরভাবেই হচ্ছে।”
বাস ভাড়া সরকার নির্ধারিত হারেই রাখা হয়েছে বলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে বকশিশ উল্লেখ করে কিছু লোকাল বাস কোম্পানি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৩০-৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, আজ বেলা ১১টায় এই বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করতে আসার কথা রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো.
মন্ত্রণালয় জানায়, টানা ৯ দিনের ছুটিতে এবারের ঈদযাত্রায় এখনও পর্যন্ত স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছে মানুষ। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। ড্রোন পর্যবেক্ষণ, মোটরসাইকেল পেট্রলিং, কুইক রেসপন্স টিম ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে পুলিশ কাজ করছে। একইসঙ্গে যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কয়েকশ ভলেন্টিয়ার কাজ করছে মহাসড়কে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ এলাকায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাক উল্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সেনাবাহিনী, হাইওয়ে পুলিশ ও রোভার স্কাউট সদস্যরা। কুমিল্লার অংশের যানজট প্রবণ ১২টি হটস্পটে যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তির।
ঢাকা/হাসান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ঈদয ত র পর বহন য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক
রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।
গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।