মাত্র এক মাসের মধ্যে দেশে পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হলো। এর মধ্যে শুক্রবার দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে দেশে আবারও ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎস ছিল মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চল মান্দালয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উৎপত্তিস্থলে এর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ছিল ৭ দশমিক ৭। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর এ ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৩ ছিল বলে জানিয়েছে। উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ঢাকা থেকে ৫৯৭ কিলোমিটার। 

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, দুপুর ১২টা ২১ মিনিটে ভূকম্পনের পর ১২টা ৩২ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটার শক রেকর্ড করা হয়। সম্প্রতি এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পের উৎসস্থলে মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

এর আগে ৫ মার্চে বেলা সাড়ে ১১টায় অনুভূত হওয়া কম্পনের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৬। কম্পনের উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টা ৬ মিনিটে দেশে ভূকম্পন অনুভূত হয়। উৎপত্তিস্থল ছিল নেপালের কোদারি এলাকা। রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। এটি মাঝারি মাপের ভূমিকম্প। ২৬ ফেব্রুয়ারি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম রাজ্যের মরিগাঁও। মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। এর আগের দিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হওয়া ভূমিকম্পের উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে। মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১। এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে তিনবার ভূমিকম্প 
অনুভূত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আশপাশে ও দেশের ভেতরে ছোট বা মাঝারি আকারের ভূমিকম্প বেড়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও কাছাকাছি এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে এর সংখ্যা ছিল ৪১। গত বছর তা বেড়ে হয় ৫৪, যা আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

এভাবে ছোট বা মাঝারি ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বড় ভূমিকম্পের পূর্ব লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঐতিহাসিক ভূমিকম্পের পরম্পরা বিশ্লেষণ এবং দিন দিন সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এমনটা তারা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে গেলেও তা মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। এখনও ভূমিকম্পের প্রস্তুতি ভূমিকম্প-পরবর্তী সম্ভাব্য উদ্ধার প্রস্তুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  নাগরিক শিক্ষা ও মহড়া– উভয়েরই অভাব আছে।

ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর বলেন, আমাদের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ইউনিট বেড়েছে। আগে ছিল চারটি। ২০০৭ সাল থেকে ১৩টির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ হয়। 

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি বোঝাতে একখণ্ড কাঠের টুকরোর উদাহরণ তুলে ধরেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, কাঠের টুকরোর দু’পাশে যদি ক্রমাগত চাপ দেওয়া হয়, তবে এর ভেতরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে একসময় কাঠটি চিরে যেতে পারে। এক পর্যায়ে ফেটে যাবে। বাংলাদেশের আশপাশে যেসব ভূমিকম্প হচ্ছে, সেটা এখন কাঠের চিরে যাওয়ার মতো অবস্থায় আছে। 

সাধারণত দুই ধরনের ভূমিকম্পের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একটি হলো, রিখটার স্কেলে ৮ বা এর চেয়ে বেশি। আরেকটি হলো, ৭ বা এর চেয়ে বেশি। তারা বলছেন, বাংলাদেশের আশপাশে যেসব ভূমিকম্প হয়, তার মধ্যে সাধারণত ৮ বা এর চেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পর ফিরে আসে। ৭ বা এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প ১২৫ থেকে ১৫০ বছরের মধ্যে ফিরে আসে।

বাংলাদেশ বা এই ভূখণ্ডে বড় ভূমিকম্পের মধ্যে আছে ১৭৬২ সালেরটি। মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৫। এটি ‘গ্রেট আরাকান আর্থকোয়েক’ নামে পরিচিত। এতে চট্টগ্রাম, ফেনী এমনকি কুমিল্লা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর পর ১৮৯৭ সালে আসামে সংঘটিত ভূমিকম্প ছিল ৮ দশমিক ৭ মাত্রার। ১৯১৮ সালে সিলেটের বালিসিরা উপত্যকায় ৭ দশমিক ৬ মাত্রার এবং ১৯৩০ সালে আসামের ধুবড়িতে ৭ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প র র ভ ম কম প ৫ দশম ক ৭ দশম ক অন ভ ত

এছাড়াও পড়ুন:

পলিটিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার বা আর্কিটেক্টের চেয়ে দেশ অনেক বড়

ছবি: নাসির আলী মামুন, ফটোজিয়াম

সম্পর্কিত নিবন্ধ