পানির বোতলে প্রতি চুমুক পানি খাওয়ার মানে হলো, প্রতিবারই বোতলের ভেতর ব্যাকটেরিয়া জমা করা। আর এভাবে সারা দিন চলতে থাকলে লাখ লাখ ব্যাকটেরিয়া জমা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী, সে ব্যাপারে হয়েছে নানা গবেষণা।

তেমনই একটি গবেষণা করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যনিরাপত্তা–বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কার্ল বেহেনকে। নিজের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলটি কতটা পরিষ্কার, তা নিয়ে ভাবনা থেকেই গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। শুরুতে বোতলের ভেতরে কিছু টিস্যু পেপার ঢুকিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখেছিলেন বেহেনকে। এর পর যা দেখলেন, তাতে তিনি হতভম্ব হয়ে যান।

বেহেনকে বলেন, টিস্যুগুলো বের করে আনার আগপর্যন্ত এগুলো সাদা ছিল। তিনি বুঝতে পারেন, বোতলের ভেতরের গায়ে যে পিচ্ছিল ভাব মনে হচ্ছিল, তা বোতলের ধরনের কারণে নয়। বরং সেখানে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর কারণে এমন হয়েছে।

এরপর গবেষণার পরিকল্পনা তৈরি করেন বেহেনকে। এর অংশ হিসেবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি করিডরে পথচারীদের থামাতে থাকেন এবং তাঁদের কাছ থেকে পানির বোতলগুলো চেয়ে নেন। বোতলগুলো কতটা পরিষ্কার, সেটা পরীক্ষা করে দেখার জন্য এগুলো সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা যায় যে বোতলগুলো ব্যাকটেরিয়ায় ভরপুর।

২০২৪ সালের হিসাব অনুসারে, বিশ্বব্যাপী পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলের বাজারের আকার প্রায় এক হাজার কোটি ডলার। ইতালীয় স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, তাঁদের অর্ধেকই পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহার করেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ৫০ থেকে ৮১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বোতল ব্যবহার করেন।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানির বোতলে আসলে কী থাকে

যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক প্রিমরোজ ফ্রিস্টোন বলেন, রান্নাঘরের কল থেকে বোতলে পানি ভরে কয়েক দিন রেখে দিলে তাতে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়। তিনি বলেন, ঘরের তাপমাত্রায় (প্রায় ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) যতক্ষণ পর্যন্ত একটি পানিভর্তি বোতলকে ফেলে রাখা হবে, তত বেশি ব্যাকটেরিয়া জন্মাবে।

সিঙ্গাপুরে ফোটানো পানি নিয়েও একটি গবেষণা হয়েছিল। পানি ফোটানোর সময় বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মরে যাওয়ার কথা। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, দিনভর ব্যবহারের পর বোতলের ভেতর ফোটানো পানিতেও দ্রুত ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।

গবেষকেরা দেখেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বোতলের ভেতরের পানিতে সকালের দিকে গড়ে প্রতি মিলিলিটারে প্রায় ৭৫ হাজার ব্যাকটেরিয়া ছিল, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতি মিলিলিটারে ১০ থেকে ২০ লাখের বেশি হয়ে গেছে।

ফ্রিস্টোনের মতে, ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমানোর একটি উপায় হলো, বোতল থেকে পানি পানের মধ্যবর্তী বিরতিতে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা। তবে এতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হবে না।

পানির বোতলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর পেছনে ওই পানির কিছু দায় থাকলেও বেশির ভাগ দূষণ তৈরি হয় ব্যবহারকারীর মাধ্যমেই। ফ্রিস্টোন বলেন, কর্মস্থলে, ব্যায়ামাগারে, এমনকি বাড়িতে যেখানেই পানির বোতল নিয়ে যাওয়া হোক না কেন, বোতলের বাইরের অংশে অনেক জীবাণু থাকে। এসব জীবাণু সহজেই বোতলের ভেতরে স্থানান্তরিত হয়। এ ছাড়া প্রতিবার চুমুক দিয়ে পানি পানের সময় ব্যবহারকারীর মুখ থেকে বোতলের পানিতে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

পানির বোতল ব্যবহারকারীদের যাঁরা নিয়মিত হাত পরিষ্কার করেন না, তাঁদের বোতলে ই.

কোলাই ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে বলেও মত দিয়েছেন এ বিশেষজ্ঞ।

ব্যাকটেরিয়া কী প্রভাব ফেলে?

মাটি, বায়ু বা দেহ—আমাদের চারপাশেই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। তবে বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়াই ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। যে পানিতে ই. কোলাই–এর মতো ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে, তা পান করলে ডায়রিয়া বা বমি হতে পারে। তবে সব সময়ই যে এমনটা ঘটবে, তা নয়। ই. কোলাই হলো এমন এক ব্যাকটেরিয়া, যা প্রাকৃতিকভাবে পরিবেশে বিরাজমান। তবে মানুষের অন্ত্রেও এ ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি থাকে। এটি কেবল তখনই ঘটে, যখন ব্যাকটেরিয়া রোগজীবাণুতে পরিণত হয়।

ফ্রিস্টোন বলেন, বেশির ভাগ অণুজীবই মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি হতে পারে। এ ছাড়া পেটে জীবাণুর সংক্রমণের কারণে অসুস্থ হলে কিছু ক্ষেত্রে অন্ত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন হতে পারে। তবে ফ্রিস্টোন মনে করেন যে পানির বোতলে থাকা ব্যাকটেরিয়া থেকে খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে শরীরে কখনোই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না।

এ ছাড়া যেসব মানুষ সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেছেন এবং যা তাদের পেটের অণুজীবের ওপর প্রভাব ফেলেছে, তাদের শরীরেও বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। তারা অন্য সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

কীভাবে বোতল পরিষ্কার করতে হবে

পানি পানের সঙ্গে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীরে যেন প্রবেশ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত ও যথাযথভাবে বোতল পরিষ্কার করতে হবে।

ফ্রিস্টোন মনে করেন, ঠান্ডা পানি দিয়ে বোতল ধোয়াটা যথেষ্ট নয়। কারণ, এতে বোতলের ভেতরে থাকা ব্যাকটেরিয়া দূর হয় না।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতলগুলো গরম পানি (৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি) দিয়ে পরিষ্কার করার সুপারিশ করেছেন ফ্রিস্টোন। তাঁর মতে, বোতলগুলো তরল ডিশওয়াশার দিয়ে নাড়াচাড়া করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর বোতলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ঠেকাতে এটিকে বাতাসে শুকিয়ে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। কারণ, অণুজীবগুলো আর্দ্র পরিবেশ পছন্দ করে।

ফ্রিস্টোন মনে করেন, প্রতিবার ব্যবহারের পরই এ প্রক্রিয়ায় বোতল পরিষ্কার করা উচিত। অন্ততপক্ষে সপ্তাহে কয়েকবার বোতল পরিষ্কার করতে হবে। বোতল থেকে দুর্গন্ধ বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ বিশেষজ্ঞের মতে, বোতল থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে শুরু করার মানে হলো, এটি ফেলে দেওয়ার সময় এসে গেছে।

বোতল ধোয়া হলে এটি ধরার আগে হাত পরিষ্কার করার বিষয়টিও মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার