যশোরে ঈদমেলায় ফুচকা খেয়ে ১০০ নারী-পুরুষ ও শিশু হাসপাতালে
Published: 1st, April 2025 GMT
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ঈদমেলায় ফুচকা খেয়ে প্রায় ১০০ নারী, পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল সোমবার ঈদের দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ফুচকা খেয়ে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ জনকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক হওয়ায় ১০ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ফুচকা দোকানি মনির হোসেন পলাতক আছেন।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, দেয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদ উপলক্ষে কয়েক বছর ধরে ঈদমেলা হয়। এ বছর ঈদের দিন বিকেল থেকে চার দিনব্যাপী ঈদমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় শত শত মানুষের আগমন ঘটে। সেখানে হরেকরকম খাবারের দোকানও বসে। যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকা থেকে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি মেলায় অস্থায়ী ফুচকার দোকান দিয়েছিলেন। মেলায় আসা অনেক মানুষ বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই দোকান থেকে ফুচকা খান। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে তাঁরা অসুস্থ হতে থাকেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি ও জ্বর দেখা দেয়।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ অনেকে সোমবার গভীর রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রঘুরাম চন্দ্র বলেন, খাবারে জীবাণু থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশির ভাগ রোগীর পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ও জ্বর দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার তপনবাগ গ্রামের ইব্রাহিম শেখের দুই মেয়ে রিমা খাতুন (২৮) ও আয়শা খাতুন (২৪) মেলায় এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আয়শা খাতুনের দুই ছেলে মোহাম্মদ আলী (৭) ও ওমর সরকার (৫) ছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা ওই দোকান থেকে ফুচকা খান। পরে রাতে বাড়ি ফিরে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। আয়শা খাতুন বলেন, ‘রাতে বাড়ি ফেরার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’
সাইফুল ইসলাম বাপ্পী নামের একজন বলেন, ‘পরিবারের সবাই সোমবার রাতে ঈদমেলায় গিয়ে ওই দোকান থেকে ফুচকা খান। রাতে বাড়ি আসার পর থেকে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি ফুচকা খাইনি। রাতে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছি।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আলিম বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। ফুচকা ব্যবসায়ীকে আমরা খুঁজছি। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলায় বলে জানা গেছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স অভয়নগর উপজ ল ঈদম ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বর্ষণে ভবদহের গ্রামে গ্রামে জলাবদ্ধতা
যশোরের মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চলের অনেক গ্রাম বছরে চার মাস জলাবদ্ধ থাকে। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ফলে, ভারী বৃষ্টির পানি সহজে ও দ্রুত নিষ্কাশন হচ্ছে না।
যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, যশোরে জুন মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২৯৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ৩০৪ দশমিক ১০ মিলিমিটার। গত জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার এবং চলতি জুলাই মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে, ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি ঢুকতে শুরু করেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।
সুন্দলী গ্রামের তন্ময় বিশ্বাস বলেছেন, “উঠোনে প্রায় হাঁটুজল। আরেকটু বাড়লে ঘরে জল উঠে যাবে। ঘরে জল উঠলে রাস্তায় ওঠা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেছেন, “ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরো বেশি জল নামত। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেছেন, “নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্টের ওপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে।”
তিনি বলেন, “ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে কাজ শুরু করবে। এছাড়া, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রফিক