যশোরের অভয়নগরে ঈদমেলায় ফুচকা খেয়ে অসুস্থ হয়ে ২১৩ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আরও অনেকে হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত এই ২১৩ জনকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এর আগে সোমবার রাতে উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামে ভৈরব ব্রিজের পাড়ে ঈদমেলার একটি অস্থায়ী দোকানের ফুচকা খেয়ে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর থেকে ওই বিক্রেতা পলাতক রয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক আলীমুর রাজীব বলেন, “খাবারে জীবাণু থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ রোগীর পেটে ব্যাথা, বমি, পাতলা পায়খানা ও জ্বর দেখা দিয়েছে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ২১৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।”
জানা গেছে, প্রতিবছর ঈদের দিন ভৈরব নদের ব্রিজের পূর্ব পাশে হরেকরকম খাবারের দোকান বসে। গ্রামের আশপাশ ও দূর দুরান্ত থেকে শতশত মানুষ শিশুদের নিয়ে ভৈরব ব্রিজ দেখতে আসে। সোমবার ঈদের দিনও শতশত শিশু, নারী ও পুরুষ সেখানে এসেছিলো। রুপদিয়া এলাকা থেকে মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি মেলায় অস্থায়ী ফুচকার দোকান দিয়েছিল। মেলায় বেড়াতে আসা অনেকেই ওই দোকানের ফুচকা খেয়েছিলো। ফুচকা খাওয়ার পর প্রায় সবার পেটে যন্ত্রণা, পাতলা পায়খানা, বমি, জ্বর ও খিচুনি শুরু হয়। এরপর অনেকে গভীর রাতে আবার কেউকেউ সকালে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার পর থেকে রোগী আসা অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে দায়িত্বরত ডা.
অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, “আমরা ঘটনাটি শুনেছি। শোনার পর ফুসকা ব্যবসায়ীকে খুঁজছি। তার বাড়ি সদর উপজেলায় জেনেছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, “অভিযোগ পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। এঘটনা সত্যি দুঃখজনক। এবিষয়ে অভয়নগর উপজেলা প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছে, দোকানীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তর যশোর জেলায় দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “এ ঘটনার বিষয়ে নিউজ দেখেছি, আমাদের জনবল কম, পাশাপাশি ঈদের ছুটি থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে যাওয়া সম্ভব হয়নি, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক, আমি দ্রুতই অভয়নগরের বিষয়টি দেখছি।”
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/টিপু
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারী বর্ষণে ভবদহের গ্রামে গ্রামে জলাবদ্ধতা
যশোরের মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল গঠিত। এ অঞ্চলের অনেক গ্রাম বছরে চার মাস জলাবদ্ধ থাকে। সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে যশোরের মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারা।
ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদ-নদী দিয়ে। পলি পড়ে নদীগুলো নাব্য হারিয়েছে। ফলে, ভারী বৃষ্টির পানি সহজে ও দ্রুত নিষ্কাশন হচ্ছে না।
যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, যশোরে জুন মাসে স্বাভাবিক গড় বৃষ্টিপাত ধরা হয় ২৯৮ দশমিক ৭ মিলিমিটার এবং জুলাই মাসে ৩০৪ দশমিক ১০ মিলিমিটার। গত জুন মাসে যশোরে ২৯৯ মিলিমিটার এবং চলতি জুলাই মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে, ভবদহ অঞ্চলের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। বিল উপচে পানি ঢুকতে শুরু করেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।
সুন্দলী গ্রামের তন্ময় বিশ্বাস বলেছেন, “উঠোনে প্রায় হাঁটুজল। আরেকটু বাড়লে ঘরে জল উঠে যাবে। ঘরে জল উঠলে রাস্তায় ওঠা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।”
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেছেন, “ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। সবগুলো গেট খুলে দিলে আরো বেশি জল নামত। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জি বলেছেন, “নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ভেন্টের ওপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক যন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে।”
তিনি বলেন, “ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননে কাজ শুরু করবে। এছাড়া, আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/প্রিয়ব্রত/রফিক