সিলেটে বাড়িতে হামলার জন্য বিএনপি-ছাত্রদলকে দুষলেন আনোয়ারুজ্জামান, বিস্মিত নগর বিএনপি সভাপতি
Published: 3rd, April 2025 GMT
সিলেটে আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগ নেতাদের বাসায় হামলার ঘটনার জন্য মহানগর বিএনপির সভাপতি ও ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের অভিযুক্ত করেছেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। লন্ডনে অবস্থানরত আনোয়ারুজ্জামানের এ–সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও আজ বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর বিকেলে অভিযোগটি ভিত্তিহীন দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
এর আগে গতকাল বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেট নগরে আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের অন্তত চারজনের বাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের ভাই লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম এবং ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা-ভাঙচুর হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করেছে, বুধবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের চারজন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান। ছাত্রলীগের মিছিলের ঘটনায় পরবর্তী সময়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায় হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি।’
আরও পড়ুনসিলেটের সাবেক মেয়রসহ আওয়ামী লীগ–ছাত্রলীগের তিন নেতার বাসায় হামলা, ভাঙচুর২১ ঘণ্টা আগেহামলার ঘটনার পর করা সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গত ৫ আগস্ট একটি দুর্বৃত্ত চক্র তাঁর বাসভবনে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল। ৮ মাস পর বুধবার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রায় ২০০ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছে। এতে প্রকাশ্য মদদ দেন মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি কিংবা বিরোধীদলীয় কোনো নেতা-কর্মীর বাড়িতে কখনো হামলা-লুটপাট হয়নি উল্লেখ করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিএনপি-ছাত্রদলের এমন হামলা-ভাঙচুর সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতিকে কলুষিত করেছে।
ভাঙচুর হওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসভবন। বুধবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের পাঠানটুলা এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর ব এনপ ল র ঘটন ছ ত রদল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।