নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মহা অষ্টমী পুণ্যস্নানে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ পুণ্যার্থীর পদচারণে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো লাঙ্গলবন্দ এলাকা।

আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্নানোৎসব শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ২টা ১১ মিনিট থেকে শুরু হয়েছে যা শনিবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টায় শেষ হবে। 

প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটানসহ দেশ ও  বিদেশ থেকে ব্যাপক পুণ্যার্থীরা এ স্নানোৎসবে অংশ নিয়েছেন। এদিকে লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পাদন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ।

এদিকে লাঙ্গলবন্দের স্নানে পুণ্যার্থীদের আসার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সকাল থেকে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মহা অষ্টমী স্নানোৎসবে অংশ নিতে লাঙ্গলবন্দের তিন কিলোমিটার এলাকায় ঘাটগুলোতে পুণ্যার্থীরা ভিড় করেন। নারী-পুরুষ পুণ্যার্থীরা সড়ক পথ ও নৌপথে স্নানে অংশ নিতে আসেন। পুণ্যার্থীরা ললিত সাধুর ঘাট, অন্নপূর্ণা মন্দিরঘাট, নাসিম ওসমানঘাট, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির রাজঘাট, কালীগঞ্জ ঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রমঘাট, মহাত্মা গান্ধীর শশ্মানঘাট, ভদ্রেশ্বরী কালীমন্দির ঘাট, জয়কালী মন্দিরঘাট, রক্ষাকালী মন্দিরঘাট, পাষাণকালী মন্দিরঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রহ্মচারীর আশ্রম, চর শ্রীরামপুর ব্রহ্মাঘাট, দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি ঘাট, মীরকুণ্ডি পরেশ সাধুঘাট, সাবদী রক্ষাকালী ঘাট, তাজপুর-জহরপুর মুনি ঋষিপাড়া ঘাট ও লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমঘাটে স্নানে আসেন। ঘাটগুলোতে পুরোহিতের কাছে মন্ত্রপাঠ করে স্নানে নেমে পড়েন তাঁরা। 

লাঙ্গলবন্দের মন্দিরগুলোতে চলছে পূজা-অর্চনা ও ভক্তিমূলক গান। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো থেকে পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে খিচুড়ি, দুধ, পানিসহ বিভিন্ন খাবার। অষ্টমীর স্নান উপলক্ষে লাঙ্গলবন্দ এলাকাজুড়ে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ।

কুমিল্লা থেকে এসেছেন অর্পিতা আচার্য্য। তিনি বলেন, ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে স্নান করতে এসেছি। পাপমোচনে ও আমরা সবাই যাতে ভালো থাকতে পারি, ব্রহ্মার কাছে সেই প্রার্থনা করেছি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্লান উৎসবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবার এক হাজার ৫০০ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি সদস্যরাও নিয়োজিত থাকবে। বসানো হয়েছে সাতটি ওয়াচ টাওয়ার ও ৭০টির অধিক সিসি টিভি ক্যামেরা। উৎসবে সাতটি মেডিকেল ক্যাম্প ও ১০টি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত থাকবে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য।

এছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ সব জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান স্লান উৎসব চলাকালীন সময় প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী কর্মীও রয়েছেন। ২০টি ঘাটে পূণ্যার্থীরা স্লান করবেন।

এবার পর্যাপ্ত পরিমানে স্নান ঘাট পুণ্যার্থীদের জন্য সংস্কার, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য নলকূপ স্থাপন, বিপুলসংখ্যক কাপড় পরিবর্তন কক্ষ ও বিপুল পরিমানে অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নিরাপত্তায় এবার আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনী রয়েছে। পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে ম্যাপ টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি এবার স্নানোৎসব আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপন করতে পারবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ল ঙ গলবন দ স ন ন ৎসব মন দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাণের গানে সালাহর উৎসব

শেষ বাঁশি বাজতেই নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতেন সালাহ-অ্যালিসন-এলিস্টাররা। তবে পর্বটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সবাইকে ডেকে মাঠের একটি গোলপোস্টের সামনে জড়ো করেন। আর্নে স্লটের নেতৃত্বে কোচিং স্টাফরাও যোগ দেন সেখানে। গ্যালারি সামনে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেইনের মতো করে সারিবদ্ধভাবে দেয়াল বানিয়ে দাঁড়ান সবাই। পুরো এনফিল্ড তখন সমবেত কণ্ঠে গাইতে শুরু করে– You’ll Never Walk Alone...। অলরেডদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এ গানেই পূর্ণতা পায় উৎসব।

এ গানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। বিশ্বের কোনো স্টেডিয়াম ছুঁতে পারবে না এনফিল্ডের এই আবহ। এই আবহ তৈরি অলরেডদের বিশ্বাসে, বছরের পর বছর যারা কেউ কাউকে একা হাঁটতে দেয়নি। রোববার সকাল থেকেই এনফিল্ডের চারপাশে তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। আতশবাজি ও লাল আবিরে রঙিন হয়ে উঠেছিল লিভারপুলের আকাশ-বাতাস। আগে থেকেই বন্দর শহরটির দেয়ালে দেয়ালে ঐতিহাসিক গানটির সঙ্গে ‘২০’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছিল। 

ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই এনফিল্ড চত্বর রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর্নে স্লট, সালাহদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। লাল জার্সি পরা কাতারে কাতারে সমর্থকদের মাঝখান দিয়ে লাল বাসে করে লিভারপুলের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করেন অন্যরকম এক পরিবেশে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর ৩০ বছর ট্রফি জেতেনি তারা। পাঁচ বছর আগে ট্রফি জিতলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদযাপন হয়েছিল দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। তাই এমন অনেক সমর্থক আছেন, যারা প্রিয় ক্লাবকে লিগ জিততে দেখেননি। সেই তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসটা ছিল বেশি। 

২০তম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আর্নে স্লট দিয়েছেন সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এমনকি তিনি সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পুরো গ্যালারিকে নিয়ে ক্লপের নামে গানও গেয়েছেন। ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ক্লাবটিকে। এর মধ্যে দুবার অবিশ্বাস্য লড়াই করেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যানসিটির কাছে শিরোপা হারাতে হয়েছিল তাদের। ২০২০ সালে জিতলেও সমর্থকদের নিয়ে উল্লাস করতে পারেননি।

ক্লপের লিগজয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এবার ভিন্ন স্বাদ পেয়েছেন মিসরীয় এ তারকা। শিরোপা জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শিরোপা জয়ের অনুভূতি অবিশ্বাস্য। গতবারের (২০২০) চেয়ে এবার শতভাগ ভালো ছিল। এটা অনেক বেশি আনন্দময়। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’ 

প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতা আর্জেন্টাইন তারকা এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টারের জন্যও এ শিরোপা বিশেষ কিছু, ‘বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এখন জিতেছি প্রিমিয়ার লিগ। আমার জন্য সত্যই এটা বিশেষ কিছু। সতীর্থদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমাদের দলটি সত্যিই অসাধারণ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোলের উৎসবের ম্যাচে বার্সা-ইন্টারের রুদ্ধশ্বাস ড্র
  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • সুইডেনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
  • চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না
  • বিশ্বের বড় বড় উৎসব কোথায় হয়
  • প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
  • প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
  • ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
  • কানে ‘আলী’, দায়িত্ব নিলো সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
  • এবার লন্ডনে পুরস্কার জিতল ‘প্রিয় মালতি’