ব্যাংক আল ফালাহর বাংলাদেশ শাখা কিনছে না হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক
Published: 6th, April 2025 GMT
পাকিস্তানি প্রতিষ্ঠান ব্যাংক আল ফালাহর বাংলাদেশ শাখা কিনতে চেয়েছিল শ্রীলঙ্কার হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক। এ লক্ষ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হাটন ন্যাশনাল ব্যাংককে আল ফালাহর বাংলাদেশ শাখা কার্যক্রম খতিয়ে দেখার অনুমোদন দিয়েছিল।
কিন্তু হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক শেষমেশ মতি পরিবর্তন করেছে। এখন আর তারা এই ব্যাংক অধিগ্রহণের পথে হাঁটছে না। হাটন ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২ এপ্রিলের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ব্যাংক আল ফালাহর বাংলাদেশ শাখা কেনা হবে না।
সংবাদে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হাটন ন্যাশনাল ব্যাংকের নিরীক্ষা কার্যক্রমে সহায়তা করতে ব্যাংক আল ফালাহকে নীতিগত অনুমোদন দেয়।
ব্যাংক আল ফালাহ অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, হাটন ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার অনুমোদন দেওয়ার আগে ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গেও আলোচনার অনুমিত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই আলোচনা চলমান থাকতেই হাটন ন্যাশনাল ব্যাংককেও অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক এই প্রক্রিয়া থেকে সরে যাওয়ায় এখন ব্যাংক এশিয়ার জন্য দ্বার খোলা আছে।
জানা যায়, ২০২৩ সাল থেকে ব্যাংক আলফালাহ তাদের বাংলাদেশের কার্যক্রম বিক্রির জন্য উপযুক্ত ক্রেতা খুঁজছিল। এ জন্য তারা অবশ্য টেন্ডার আহ্বান করেনি। ব্যাংক এশিয়ার সঙ্গে এ নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচন হয়েছে। বনিবনা হওয়ায় গত বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল ফালাহ পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশিত বার্তায় তাদের বাংলাদেশ কার্যক্রম ব্যাংক এশিয়ার কাছে বিক্রির ঘোষণা দেয়।
এরপর দুই দেশের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এতে সায় দেয়। ব্যাংক এশিয়ার প্রস্তাবের আলোকে পিডব্লিউসি বাংলাদেশকে দিয়ে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে আবার যুক্ত হয়ে যায় হাটন ন্যাশনাল ব্যাংক। এবার তারা সেই প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়াল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক আল ফ ল হ র অন ম
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’