এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে ফিরে বাবার লাশ কাঁধে নিল নাহিদ, এলাকায় শোক
Published: 10th, April 2025 GMT
বৃহস্পতিবার সকালে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় বসবে নাহিদ হোসেন। এর আগের রাতে বাবা আক্তার হোসেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাড়ির আঙিনায় বাবার লাশ রেখেই পরীক্ষায় অংশ নেয় নাহিদ। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে বাবার লাশ কাঁধে নিয়ে শেষবিদায়ে শামিল হয়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বড়হাড়গিলা গ্রামে। আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে গ্রামে নাহিদের বাবা আক্তার হোসেনের (৪৫) জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে বুধবার রাত দেড়টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার সকালে দাফনের কথা থাকলেও নাহিদের এসএসসি পরীক্ষার জন্য দাফনের সময় পিছিয়ে বেলা দুইটায় দেওয়া হয়।
নাহিদ এ বছর স্থানীয় মাতাইনকোট উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। উপজেলার হরিশ্চর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে সে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
পরীক্ষার্থী নাহিদ জানিয়েছে, তার বাবা চার মাস ধরে টিবি রোগে আক্রান্ত। ঋণ করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার চেষ্টা করেছে তার পরিবার। গত মঙ্গলবার বিকেলে তার বাবার নাকে–মুখে রক্ত বের হতে থাকলে তাঁকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার তিনি বাড়িতে থেকে এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে দিবাগত রাত দেড়টায় বাবার মৃত্যুর খবর পায় সে।
বৃহস্পতিবার সকালে বাবার নিথর দেহ বাড়ির আঙিনায় রেখে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল নাহিদ। নাহিদ প্রথম আলোকে বলে, ‘পরীক্ষার হলে বসেও বাবাকেই ভাবছিলাম। কিছু লিখলেই উত্তরপত্রে সবকিছু সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার লাশ চোখে ভাসছিল। তারপরও কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। পরিবারে আমার মা রয়েছে। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়েছে। আমার ছোট ভাইটি মাতাইনকোট উচ্চবিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। আমার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে পরীক্ষার হল থেকে ফিরে নাহিদ জোহরের নামাজ আদায় করে। এরপর বাবার লাশের খাটিয়া কাঁধে নিয়ে বাড়ি থেকে বড়হাড়গিলা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে যায়। জানাজা শেষে আবারও খাটিয়া কাঁধে নিয়ে ধর্মীয় নিয়ম মেনে নিজের বাবার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে।
মাতাইনকোট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নাহিদ এবার আমাদের স্কুলের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। ছেলের পরীক্ষার কারণে সকাল থেকে পিছিয়ে দুপুরে তার বাবা জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আমি তার বাবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ য় অ শ পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
ফুডপ্যান্ডার ডেলিভারি বয় থেকে সফল ফ্রিল্যান্সার আবু সালেহ, মাসে আয় কত জানেন
পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অভাবের সংসারে নিজেকে একরকমের বোঝাই মনে করতেন। কিছু একটা করা দরকার। পরিস্থিতি যেন আবু সালেহ আহমেদকে দিন দিন আরও বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অনেক স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্নে নিজেকে অটুট রেখেছেন। আর পাড়ি দিতে হয়েছে অনেকটা পথ। ধৈর্য নিয়ে নিজের স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে আজ সালেহ নিজেকে বলতেই পারেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। কেননা এখন তিনি মাসে আয় করেন তিন লাখ টাকা।
আবু সালেহ আহমেদ। ডাকনাম আফনান। বাবা মো. কুতুব উদ্দিন শেখ মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। মা সাজেদা খাতুন গৃহিণী। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামের আবু সালেহ আহমেদ এখন অবশ্য এলাকায় থাকেন না। থাকেন ঢাকার কাঁঠালবাগানে। এখান থেকেই আফনান গড়ে মাসিক তিন লাখ টাকা আয় করেন। ছোট্ট একটা অফিসও নিয়েছেন, যেখানে চারজন ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থান করেছেন।
২০১৬ সালে সেনগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাসের পর ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন আবু সালেহ আহমেদ। এখন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। ছাত্রাবস্থাতেও তাঁর মাসিক আয় কোনো কোনো মাসে পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। ২৭ বছর বয়সী আবু সালেহ আহমেদ বিয়ে করেছেন গত বছর। স্ত্রীর নাম ফাতেমা জোহরা।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াই ছিল কঠিন
আফনান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আসলে মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে বের হয়েছি। তখন ইচ্ছা থাকলেও আমাদের সামর্থ্য ছিল না ভালো জায়গায় পড়ার। আমার চার বছর যে সময়টা কেটেছে, আসলে খুব কষ্টে কেটেছে। কলেজে আমি এক্সট্রা কারিকুলামে ভালো ছিলাম, ডিবেটিং ক্লাবের সভাপতি ছিলাম, বেশ কিছু জায়গায় বিতর্ক করে চাম্পিয়নও হয়েছি। স্যারদের চোখে পড়েছি। একসময় আর পেরে উঠছিলাম না, তাই দুই বছর পড়তে পড়তেই টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) নিতে গিয়েছিলাম। লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকেরা আমার কথা শুনে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। যার ফলে আমি পড়াশোনাটা শেষ করেছি।’
আবু সালেহ আহমেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘দিনগুলো কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম। ১ হাজার ৫০০ টাকা পেতাম। ১ হাজার টাকা মেসভাড়া ও ৫০০ টাকায় খাওয়া। সকালে ও রাতে খেতাম। মাসে তা–ও খাওয়ার বিল আসত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা। মেসের বাকিরা সেটা দিয়ে দিত। তারপর একদিন ২ হাজার ৫০০ টাকার একটা টিউশনি পেয়ে একটু যেন শক্তি পেলাম। এভাবেই আমার ডিপ্লোমার চার বছর কেটেছে।’
একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায়
২০২০ সালে ডিপ্লোমা পড়া শেষ করেই একবুক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আবু সালেহ আহমেদ। এসেই শুরু করেন আবার জীবনসংগ্রাম। কোথাও কাজ পাচ্ছিলেন না। শেষমেশ ফুডপ্যান্ডায় রাইডার (ডেলিভারি বয়) হিসেবে কাজ নেন তিনি। কিন্তু শুধু ফুডপ্যান্ডায় কাজের আয় দিয়ে তাঁর চলছিল না। তখন থেকেই কাজের পাশাপাশি কিছু একটা করার চেষ্টা করছিলেন। কিছু জায়গায় খোঁজ নিয়ে ভর্তি হয়ে যান তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটিতে। খাবার ডেলিভারির পাশাপাশি কাজও শিখতেন।
আবু সালেহ আহমেদ