সন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’: সেই ‘ক্রিম আপা’ গ্রেপ্তার
Published: 10th, April 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিউ পেতে বা অনলাইনে টাকা আয়ের জন্য নিজের সন্তানকে ক্যামেরার সামনে এনে নানাভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ঢাকার সাভারের সেই ‘ক্রিম আপা’কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সাভার উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানার পুলিশ।
এর আগে গতকাল বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আশুলিয়া থানায় ‘ক্রিম আপা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া শারমিন শিলা নামের ওই নারীর বিরুদ্ধে শিশু আইনে মামলা করেন সাভার উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কাজী ইসরাত জামান।
শারমিন শিলাকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় বসবাসকারী শারমিন শিলা ওরফে ক্রিম আপা পেশায় একজন বিউটিশিয়ান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি ক্রিম আপা নামে পরিচিত। তিনি মেকআপের জন্য কাজ করাসহ বিভিন্ন ধরনের ক্রিম তৈরি করে বিক্রি করেন। তিনি নিজের ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরি করে পোস্ট দেন। গত ৩০ মার্চ নিজের ফেসবুক আইডিতে বিকেল চারটার দিকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যা ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শারমিন শিলা তাঁর মেয়েশিশুকে (আনুমানিক দুই বছর) জোর করে এক হাতে দিয়ে মুখে চাপ দিয়ে হাঁ করিয়ে মেয়ের অসম্মতিতে কেকজাতীয় কিছু খেতে বাধ্য করছেন। তিনি ভাইরাল হওয়ার জন্য এক বছর ধরে দুই শিশুসন্তানের প্রতি মাতৃসুলভ আচরণ না করে শিশুদের আঘাত, উৎপীড়ন, অবহেলাসহ তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ ধরনের আচরণের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনসন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’, ‘ক্রিম আপা’র ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রশাসন০৭ এপ্রিল ২০২৫গত রোববার ‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমানসহ অন্যরা ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তিন দিনের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্মারকলিপির অনুলিপি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া হয়।
সাভারের বাইপাইল এলাকায় ‘ক্রিম আপা বিউটি পারলার’ নামে শারমিন শিলার একটি বিউটি পারলার আছে। কয়েক দিন ধরে আলোচিত ক্রিম আপা ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেছেন, তিনি তাঁর সন্তানদের কখনোই নির্যাতন করেননি। নির্যাতন করলে তো ক্যামেরার সামনে করতেন না। তিনি ‘গুণী নারী’ তাই অন্যরা হিংসা করে এ ধরনের অভিযোগ দিচ্ছে। তিনি সন্তানদের নিয়ে ভালো আছেন, ছেলেকে দিয়ে বলানো এমন ভিডিও শেয়ার করেছেন। তবে শারমিন শিলা বা কিরিম আপা ভিডিও আপলোড করে আবার তা ডিলিট বা মুছেও ফেলছেন।
‘একাই একশো’ নামের শিশুদের সুরক্ষায় সামাজিক আন্দোলনের পক্ষে সাদাত রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্রিম আপা’ পরিবারসহ টিকটকে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তাঁর শিশু বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্থানীয় এক ব্যক্তির সহায়তায় তাঁকে বুঝিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাভার উপজেলায় সমাজসেবা কার্যালয়ে আনা হয়। পরে সবাই মিলে তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে বোঝানো হয়। সমাজসেবা কর্মকর্তার কাজ শেষে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আরও পড়ুনসন্তানকে ব্যবহার করে ‘ভিউ ব্যবসা’ : ‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে থানায় মামলা১০ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর স ভ র উপজ ল ক র ম আপ ব যবস ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক পানশালায় ‘অমর্যাদাকর’ আচরণের জেরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে হিব্রু সংবাদমাধ্যমের এক খবরে জানা গেছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আবুধাবি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর ওই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এরপরই তেল আবিব সরকার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়োসি আব্রাহাম শেলিকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে হিব্রু সংবাদমাধ্যম এন১২ বলেছে, শেলি কয়েকজন ইসরায়েলিকে নিয়ে আমিরাতের একটি বারে হাজির হন এবং এমন আচরণ করেন, যা আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ‘অগ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাহানিকর’ বলে ইসরায়েলকে জানান। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন।
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা চললেও আবুধাবি এখনো দেশটির ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে একমাত্র আরব দেশে সফর করতে পেরেছেন, তা হলো আরব আমিরাত। গত জানুয়ারিতে গাজায় এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার আমিরাত সফর করেন।
শেলির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ আমিরাতের নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই আমিরাতি নন। দেশটিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক, ব্রিটিশ অভিবাসী, রুশ ধনকুবের ও অন্য প্রভাবশালীদের উপস্থিতি রয়েছে। আর দুবাই উপসাগরীয় অঞ্চলের নৈশকালীন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
গত সপ্তাহে হিব্রু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে আবুধাবিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শেলি এমন ‘অমর্যাদাকর’ আচরণ করেন, যা ব্যক্তি পরিসরের সীমা অতিক্রম করে। এর আগে তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখানে দুটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এক ঘটনায় শেলি ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ডিনারের ছবিতে দেখা যায়, টেবিলে একটি লবস্টার কালো মার্কার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইহুদি খাদ্যবিধি অনুযায়ী ঝিনুক–জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ।
২০২৩ সালে হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এক ব্রাজিলীয় নারীর ভিসা–সংক্রান্ত আবেদনের জবাবে শেলি নিজে ই-মেইল ও ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের ভিসা পেতে হলে ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে। পরে ওই নারী বলেন, এক ভিডিও কলে তিনি দেখেন, শেলি বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন।
‘আমি যখন ক্যামেরা চালু করলাম, দেখি তিনি বিছানায় শুয়ে ঘামছেন। বললেন, তিনি হাঁটাহাঁটি করে ফিরেছেন। খুবই অনুচিত ছিল ব্যাপারটা। আমি বলি, পরে কথা বললে হয় না? উনি বলেন, ‘‘না, এখনই বলি।’’ এরপর ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার কথা বলেন ও ব্রাসিলিয়ায় রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। আমি ভীষণ চাপে ও অস্বস্তিতে পড়ে যাই’, বলেন ওই নারী।
পরে শেলিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইয়োসি ব্রাজিলে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই নন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন।’