দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কুমিল্লার শহরের পাশ দিয়ে এক সময়ের প্রবহমান গোমতী নদী। মরা নদী নামেই এই নদীটি এখন বেশি পরিচিত। যে নদী হতে পারত নগরবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র, সেখানে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। সর্বত্র 
উৎকট গন্ধ। মানচিত্রে নদীর আয়তন বিশাল থাকলেও দুই তীরের জলাধার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসহ নানা স্থাপনা। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ তালিকা করা হলেও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন দখলদার।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীপারের বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ময়লা, শহরের ড্রেনের দূষিত আবর্জনা, মানববর্জ্য, কচুরিপানায় একাকার হয়ে নদীর পানি কালো-দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন মরা নদীর দুই পারের বাসিন্দারা। 
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় কুমিল্লা শহর ঘেঁষে প্রবহমান ছিল গোমতী নদী। তখন বর্ষাকালে বন্যায় নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। তাই শহর রক্ষার জন্য ষাটের দশকে এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকে শহরের উত্তর প্রান্তের কাপ্তানবাজার থেকে পূর্ব প্রান্তের শুভপুর এলাকা পর্যন্ত নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পুরাতন বা মরা গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। নদীর এপারের শহরের মানুষের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগের জন্য কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, থানা রোড, হারুন স্কুল সড়ক ও চকবাজার এলাকায় পাঁচটি আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়। এই নদীর কূলে রয়েছে কুমিল্লা নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড। 
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয়দের অনেকে প্রভাব খাটিয়ে মরা নদীর বিভিন্ন স্থানের দুই পার ও পানির অংশ ধীরে ধীরে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন, আধাপাকা বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে মরা নদীর দুই পারে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এবং দখলযজ্ঞে নদীটি সরু খালের আকার ধারণ করেছে। 
থানা রোডে পশ্চিমাংশে নদীতে বর্তমানে বেশির ভাগ অংশ কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে আছে। অন্য অংশগুলো মাছ চাষ করতে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। গাংচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, সরকারি একটি নদী শুধু দখলই নয়, নদীর পানিতে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বিড়াল, পশু-পাখি ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনা ফেলা হয়। এখন দূষিত কালো পানি থেকে অস্বাস্থ্যকর গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাউবো 
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। জেলা-পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে নদীর সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হবে।
আদর্শ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুরাতন গোমতী নদীর দুই পারের ৭৭২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য বিগত ২১ বছরে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নদীর মোট ২৫৮ একর জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু উচ্ছেদ হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ২১ বছরে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীপারের চাঁনপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা নদীপারে বসবাস করে আসছে। সরকার উচ্ছেদ করতে চাইলে আমাদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করলে আপত্তি থাকবে না। অন্যথায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা.

মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই প্রাকৃতিক জলাধারটি দখল-দূষণে অনেকটা বিলীনের পথে। এর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সভা-সেমিনার ও নানা কর্মসূচি পালনসহ স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। তবে নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে 
ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা গেলে এ মরা নদী পর্যটনের এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে পারে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, পুরাতন গোমতী নদীসহ কুমিল্লা নগর এলাকার বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু নদী দখলমুক্ত না করে প্রকল্প শুরু করা যাচ্ছে না। নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাচীন এ শহরের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল প রকল প র জন য র এল ক নদ র প শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

সঞ্জয় তার বন্ধুদের সঙ্গে রাত কাটাতে আমাকে বাধ্য করেছিল: কারিশমা

নব্বই দশকের শুরুতে বলিউডে পা রাখেন অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর। ১৭ বছর বয়সে রুপালি জগতে পা রেখেই দর্শক হৃদয় হরণ করেন এই অভিনেত্রী। নব্বই দশকে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেত্রীও কারিশমা।

২০০৩ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন বলিউডের অন্যতম শীর্ষ নায়িকা কারিশমা কাপুর। শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। তবে ২০১৬ সালে চূড়ান্ত তিক্ততার মাধ্যমে এই সংসার জীবনের ইতি টানেন তারা।

গত বৃহস্পতিবার মারা গেছেন কারিশমা কাপুরের প্রাক্তন স্বামী সঞ্জয়। ফলে আবারো আলোচনায় সঞ্জয়-কারিশমার দাম্পত্য জীবন। কেন ভেঙেছিল এই জুটির সংসার, তা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

আরো পড়ুন:

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত অভিনেত্রী সানা

তারকাবহুল ‘হাউজফুল ৫’ কত টাকা আয় করল?

বলিউড লাইফ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সঞ্জয় কাপুর অভিনেত্রী কারিশমা কাপুরের খরচ নিয়ে তার ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করতেন। এরপর কারিশমা উপলদ্ধি করতে পারেন, ইন্ডাস্ট্রির শীর্ষ তারকা হওয়ার কারণে সঞ্জয় তাকে বিয়ে করেছেন; যাতে কারিশমার বদৌলতে আলোচনায় থাকতে পারেন তিনি। 

দিল্লিতে সঞ্জয়ের যে সার্কেল আছে, সেখানে কারিশমাকে ব্যবহার করাই সঞ্জয়ের গোপন লক্ষ্য ছিল। কারিশমাকে ব্যবহার করে খ্যাতি কুড়ানোরও চেষ্টা করেছিলেন সঞ্জয়। পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন কারিশমা। সর্বশেষ ১১ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন বলে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়। 

ভাইরাল এনা টক ডটকমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছিলেন কারিশমা কাপুর। এ অভিনেত্রী বলেছিলেন, “আমরা যখন হানিমুনে ছিলাম, তখন সঞ্জয় তার বন্ধুদের কাছে আমার দাম বলেছিল। এমনকি, সঞ্জয় আমাকে তার বন্ধুদের সঙ্গে রাত কাটাতে বাধ্য করেছিল। সঞ্জয় আমাকে অনেক মারধর করত, মুখে মেকআপ লাগিয়ে আঘাতের দাগ লুকাতাম। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন পুলিশে অভিযোগ করা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।”

সঞ্জয়ের সঙ্গে মেয়ে কারিশমার বিয়ে হোক তা চাননি অভিনেতা রণধীর কাপুর। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বরেণ্য এই অভিনেতা বলেছিলেন, “আমাদের পরিচয় সবাই জানেন। আমরা কাপুর পরিবার! টাকার জন্য কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন আমাদের নেই। আমরা কেবল টাকা নয়, মেধার আশীর্বাদে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারি। সঞ্জয় একজন থার্ড ক্লাস মানুষ।”

অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানার পর অর্থাৎ ২০০৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী সঞ্জয়কে বিয়ে করেন কারিশমা কাপুর। এ অভিনেত্রীর প্রথম হলেও সঞ্জয়ের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। ২০০৫ সালে তাদের সংসার আলো করে জন্ম নেয় কন্যা সামাইরা। ২০১১ সালে এ দম্পতির কোলজুড়ে আসে পুত্র কিয়ান।   

২০১৪ সালে সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়াছাড়ি জন্য মুম্বাই আদালতে আপিল করেন কারিশমা-সঞ্জয়। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের সুপ্রিম কোর্টের সামনে বিচ্ছেদ নিয়ে একটি চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন তারা। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, এ দম্পতির দুই সন্তান সামাইরা এবং কিয়ান তাদের মা কারিশমা কাপুরের সঙ্গেই থাকছেন। তবে বাবা সঞ্জয় ইচ্ছে করলেই সন্তানদের দেখতে যাওয়ার অনুমতি পান।

২০১৬ সালে দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা প্রিয়া সাচদেবকে বিয়ে করেন সঞ্জয় কাপুর। ইন্ডিয়ান-আমেরিকা হোটেল ব্যবসায়ী বিক্রম চাটওয়ালের প্রাক্তন স্ত্রী প্রিয়া। সঞ্জয় ও প্রিয়ার প্রথম দেখা হয় নিউ ইয়র্কে। পাঁচ বছর প্রেম করে ঘরোয়াভাবে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন তারা। তবে কারিশমা কাপুর আর বিয়ে করেননি। দুই সন্তান নিয়ে এখনো একা জীবনযাপন করছেন ৫০ বছরের এই অভিনেত্রী।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সঞ্জয় তার বন্ধুদের সঙ্গে রাত কাটাতে আমাকে বাধ্য করেছিল: কারিশমা
  • ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান