দখলদারদের তালিকা হলেও দুই যুগেও নেই উচ্ছেদ
Published: 10th, April 2025 GMT
দখল ও দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে কুমিল্লার শহরের পাশ দিয়ে এক সময়ের প্রবহমান গোমতী নদী। মরা নদী নামেই এই নদীটি এখন বেশি পরিচিত। যে নদী হতে পারত নগরবাসীর জন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র, সেখানে এখন পা ফেলার জায়গা নেই। সর্বত্র
উৎকট গন্ধ। মানচিত্রে নদীর আয়তন বিশাল থাকলেও দুই তীরের জলাধার দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনসহ নানা স্থাপনা। ২০০৩ সাল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ তালিকা করা হলেও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে আজও আলোর মুখ দেখেনি। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন দখলদার।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীপারের বাসিন্দাদের বাড়িঘরের ময়লা, শহরের ড্রেনের দূষিত আবর্জনা, মানববর্জ্য, কচুরিপানায় একাকার হয়ে নদীর পানি কালো-দুর্গন্ধময় ও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন মরা নদীর দুই পারের বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক সময় কুমিল্লা শহর ঘেঁষে প্রবহমান ছিল গোমতী নদী। তখন বর্ষাকালে বন্যায় নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করত। তাই শহর রক্ষার জন্য ষাটের দশকে এ নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। এর পর থেকে শহরের উত্তর প্রান্তের কাপ্তানবাজার থেকে পূর্ব প্রান্তের শুভপুর এলাকা পর্যন্ত নদীর প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ পুরাতন বা মরা গোমতী নদী নামে পরিচিতি লাভ করে। নদীর এপারের শহরের মানুষের সঙ্গে ওপারের যোগাযোগের জন্য কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, থানা রোড, হারুন স্কুল সড়ক ও চকবাজার এলাকায় পাঁচটি আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়। এই নদীর কূলে রয়েছে কুমিল্লা নগরীর ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয়দের অনেকে প্রভাব খাটিয়ে মরা নদীর বিভিন্ন স্থানের দুই পার ও পানির অংশ ধীরে ধীরে অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ভরাট করে বহুতল ভবন, আধাপাকা বাড়িঘর ও দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এতে মরা নদীর দুই পারে ঘনবসতি গড়ে উঠেছে এবং দখলযজ্ঞে নদীটি সরু খালের আকার ধারণ করেছে।
থানা রোডে পশ্চিমাংশে নদীতে বর্তমানে বেশির ভাগ অংশ কচুরিপানা ও আবর্জনায় ভরে আছে। অন্য অংশগুলো মাছ চাষ করতে কচুরিপানা পরিষ্কার করা হচ্ছে। গাংচরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, সরকারি একটি নদী শুধু দখলই নয়, নদীর পানিতে মরা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, কুকুর-বিড়াল, পশু-পাখি ছাড়াও কচুরিপানা ও আবর্জনা ফেলা হয়। এখন দূষিত কালো পানি থেকে অস্বাস্থ্যকর গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাউবো
কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। জেলা-পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে নদীর সম্পত্তি দখলমুক্ত করা হবে।
আদর্শ সদর উপজেলা ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানায়, ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুরাতন গোমতী নদীর দুই পারের ৭৭২ জন অবৈধ দখলদারের তালিকা করা হয়। তাদের উচ্ছেদের জন্য বিগত ২১ বছরে কয়েক দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নদীর মোট ২৫৮ একর জমি দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে তথ্য দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব) প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু উচ্ছেদ হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, গত ২১ বছরে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদীপারের চাঁনপুর এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, তাদের পূর্বপুরুষরা নদীপারে বসবাস করে আসছে। সরকার উচ্ছেদ করতে চাইলে আমাদের পুনর্বাসন করে উচ্ছেদ করলে আপত্তি থাকবে না। অন্যথায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা.
ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা গেলে এ মরা নদী পর্যটনের এক নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটাতে পারে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলম বলেন, পুরাতন গোমতী নদীসহ কুমিল্লা নগর এলাকার বহুমাত্রিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশ কিছু মেগা প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু নদী দখলমুক্ত না করে প্রকল্প শুরু করা যাচ্ছে না। নদীর জায়গা দখলমুক্ত করে সৌন্দর্য প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে প্রাচীন এ শহরের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দখল প রকল প র জন য র এল ক নদ র প শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
মতলবের দুই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-দখলদারির অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কার
চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপির দুই নেতাকে দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
চাঁদাবাজি, দখলদারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ওই দুজনের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বহিষ্কৃত নেতারা হলেন মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মান্নান লস্কর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া। এর মধ্যে মতলব উত্তরের আবদুল মান্নান লস্করকে চাঁদাবাজির মামলায় গত সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আবদুল মান্নান লস্কর ও আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার অভিযোগে দলের প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই একই অভিযোগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইমাম হোসেন গাজীকেও দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের (মানিক) মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই দুই নেতাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জেনেছেন। তবে এ ব্যাপারে চিঠি এখনো পাননি। যেকোনো বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটি অন্যান্য নেতার জন্যও একটি বার্তা ও শিক্ষা।