আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের পর মা-বাবা জানলেন ভ্রূণটি অন্যের ছিল
Published: 11th, April 2025 GMT
অস্ট্রেলিয়ায় আইভিএফ (ইন–ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের আশায় এ–সংক্রান্ত একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন এক দম্পতি। এ পদ্ধতিতে তাঁদের সন্তানও জন্মগ্রহণ করে। তবে পরে তাঁরা জানতে পারেন বড় ভুল হয়ে গেছে। যে ভ্রূণটি থেকে সন্তানের জন্ম হয়েছে সেটি তাঁদের নয়, অন্য কোনো দম্পতির।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আইভিএফ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোনাশ আইভিএফের একটি ক্লিনিকে ভুল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রতিষ্ঠানটি একে মানুষের ভুল বলে উল্লেখ করেছেন।
আইভিএফ পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণের কাজ করা হয়। পরে এ ভ্রূণকে কোনো নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে জন্মগ্রহণ করা সন্তানকে চলতি কথায় বলা হয় টেস্টটিউব বেবি।
মোনাশ আইভিএফ কোম্পানি বলেছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারে যে তাদের ব্রিসবেন ক্লিনিকে একজন নারীর গর্ভে ভুল ভ্রূণ স্থানান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই নারী সন্তানও জন্ম দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির মা-বাবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।অস্ট্রেলিয়ায় যত আইভিএফ চিকিৎসা হয়, তার প্রায় এক–চতুর্থাংশই মোনাশ আইভিএফ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলছে, জন্মদানকারী মা-বাবা তাঁদের অবশিষ্ট হিমায়িত ভ্রূণ অন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করার পর তারা জানতে পারে, এ দম্পতির অতিরিক্ত একটি ভ্রূণ সংরক্ষিত আছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত হয়, ভুল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল নাপ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যারা মোনাশ আইভিএফের সঙ্গে যুক্ত, তারা সবাই এ ঘটনায় মর্মাহত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সবার কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির মা-বাবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে ভুল ভ্রূণ স্থানান্তরের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মোনাশ আইভিএফ কোম্পানির শেয়ারে ধস নেমেছে। মোনাশ আইভিএফের শেয়ারের দর ২৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালের পর এত বড় দরপতনের ঘটনা তাদের ঘটেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি এ ঘটনাকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে তারা মনে করে, এ ঘটনায় তাদের আর্থিক সক্ষমতার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
মোনাশ আইভিএফ বলেছে, একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য তারা একজন আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি অ্যাক্রেডিটেশন কমিটিকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছে। রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি হলো প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ফার্টিলিটি সোসাইটি অব অস্ট্রেলিয়ার অংশ।
ফার্টিলিটি সোসাইটি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বিরল। এতে আরও বলা হয়, প্রজনন পরিষেবার প্রতি রোগীদের যথেষ্ট আস্থা আছে। নিরাপদে ভ্রূণ সামলানো ও ভ্রূণের পরিচয় শনাক্ত করাটা একটি মৌলিক দায়িত্ব।
মোনাশ আইভিএফ সরকারি কর্তৃপক্ষ কুইন্সল্যান্ড হেলথকে ঘটনাটি অবহিত করেছে। কুইন্সল্যান্ড হেলথ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ শুরু করেছে। কুইন্সল্যান্ড হেলথের এক মুখপাত্র বলেন, ‘কুইন্সল্যান্ডে মোনাশ আইভিএফের ক্লিনিকগুলোতে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে এবং যেকোনো ঝুঁকি চিহ্নিত ও প্রশমিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একজন মার্করাম, একটি সেঞ্চুরি এবং ২৭ বছর পর একটি ট্রফি
কে বেশি ক্লান্ত—ক্রিকেট না দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্রিকেটের ক্লান্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছু দিতে না পারার আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লান্তি ক্রিকেটের কাছ থেকে বৈশ্বিক কোনো শিরোপা নিতে না পারার! অবশেষে ক্লান্তির সেই কবিতার ক্লাস শেষ হলো। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছু দিল অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট খেলাটিকে দায়মুক্ত করল তার কাছ থেকে একটি বিশ্বকাপ নিয়ে! ক্রিকেটকে দায়মুক্ত করা বা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতার একঘেয়ে ক্লান্তি ঘোচানোর নায়ক কে? লর্ডসে ২০২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচটি বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নটিকে অতীব সহজ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। উত্তরটাও সবার এখন জানা। একবাক্যে সবাই বলবেন, নায়কের নাম এইডেন মার্করাম।
টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি—ক্রিকেটের যে সংস্করণের কথাই বলুন, দক্ষিণ আফ্রিকা খেলাটির অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে হওয়া আইসিসি নকআউট ট্রফি (মিনি বিশ্বকাপ) ছাড়া আজকের আগপর্যন্ত কোনো বৈশ্বিক ট্রফি প্রোটিয়াদের ছিল না।
অবশেষে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মাথায় বিশ্বসেরার মুকুট উঠল, ক্রিকেট-তীর্থ নামে পরিচিত লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক মেইস বা গদা তুলে ধরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটির অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ২৭ বছর পর বড় কোনো টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা বলতে গেলে একা হাতে শিরোপা জিতিয়েছেন মার্করাম। আরও স্পষ্ট করে বললে আসলে প্রোটিয়াদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দিয়েছে মার্করামের ইতিবাচকতা, আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ব নিয়ে খেলার দৃঢ়তা।
ঠিক ১১ বছর আগে মার্করাম নিজেকে ঠিক এ রকম তিনটি শব্দেই বর্ণনা করেছিলেন। সালটা ২০১৪, সেবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিলেন মার্করাম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসির এক অনুষ্ঠানে মার্করামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—নিজেকে তিনটি মাত্র শব্দে কীভাবে বোঝাবেন। উত্তর যেন মুখস্থ, এমনভাবেই ১৯ বছর বয়সী তরুণ মার্করামের উত্তর ছিল—ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্ববান।
সেঞ্চুরির পর মার্করাম