ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভের কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের মুখে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
Published: 12th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ফিলিস্তিনপন্থি একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন একটি আদালত। তাকে একমাস আগেই আটক করা হয়েছিল। ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল যদিও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, অর্থাৎ তিনি আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার বিরুদ্ধে এর আগের কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।
কারাগার থেকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি অভিবাসন আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, খলিলের উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে।
তবে আদালতের রায়ের অর্থ এই নয় যে, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। বিচারক মাহমুদ খলিলের আইনজীবীদেরকে আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। মাহমুদ খলিল গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তারপর থেকে তার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ সবকিছুই হয়েছে।
গ্রেপ্তারের দিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্যই তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ খলিল। ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ সালের যে আইনে তাকে আটক করেছে, সেই আইনে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, আমেরিকায় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি যদি দেশটির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার তাকে আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিতে পারবে।
বিচারক জানিয়েছেন, মাহমুদ খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে কারণ দেখিয়েছে, তা যুক্তিসংগত। ফলে মাহমুদ খলিলকে বহিষ্কারের পথে হাঁটতে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও বাধা নেই।
আদালতের রায়ের পর এতদিন ধরে নীরব থেকে আসা মাহমুদ খলিল বলেন, আপনি নিজেই আগের শুনানিতে বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে মৌলিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। কিন্তু আজকে আমরা যা দেখলাম, তাতে স্পষ্টতই এই নীতিগুলির কোনওটিই আজ ছিল না। এমনকি, এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও এগুলো নেই। ঠিক এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন আমাকে আমার পরিবার থেকে এক হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ) আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে মন্তব্য করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ‘প্রমাণ’ হিসাবে আদালতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নথি জমা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই রায় আসলো। অথচ সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও'র পাঠানো একটি চিঠি ছাড়া আর কিছু ছিল না। এটাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, মি.
সরকার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র তরফ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- যদিও মাহমুদ খলিলের কর্মকাণ্ড ‘আইনসম্মত’ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম গতকাল শুক্রবার আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশুনার করার জন্য ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়া একপ্রকার সৌভাগ্য। কিন্তু যখন আপনি সহিংসতাকে উসকে দেবেন, সন্ত্রাসীদের প্রশংসা ও সমর্থন করবেন বা ইহুদিদের হয়রানির মুখে ফেলবেন- তখন আপনার আর এখানে থাকার কোনও অধিকার নেই। বিদায়!
মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বারবার বলছে, আদালতে মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষ বা সহিংসতা বিষয়ক কোনও প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। তার আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডের হাউট এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে যা চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মাহমুদ খলিলের অধিকারের পক্ষে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এই মামলাটির আবারও শুনানি হবে বলে তারা আশা করছেন।
হোয়াইট হাউজের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি টেইলর রজার্স এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ক্ষতিকর-তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পরর ষ ট র র র জন য আম র ক সরক র উপস থ
এছাড়াও পড়ুন:
বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।
এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।
পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।
অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।
একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।