যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ফিলিস্তিনপন্থি একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারে সম্মতি দিয়েছে মার্কিন একটি আদালত। তাকে একমাস আগেই আটক করা হয়েছিল। ৩০ বছর বয়সী মাহমুদ খলিল যদিও যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা, অর্থাৎ তিনি আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার বিরুদ্ধে এর আগের কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

কারাগার থেকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে কথা বলার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি অভিবাসন আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, খলিলের উপস্থিতি আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে।

তবে আদালতের রায়ের অর্থ এই নয় যে, তাকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হবে। বিচারক মাহমুদ খলিলের আইনজীবীদেরকে আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। মাহমুদ খলিল গত ৮ মার্চ থেকে লুইজিয়ানা ডিটেনশন সেন্টারে আটক রয়েছেন। তারপর থেকে তার মুক্তির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ, মিছিল, সমাবেশ সবকিছুই হয়েছে।

গ্রেপ্তারের দিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করার জন্যই তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের অন্যতম পরিচিত মুখ খলিল। ট্রাম্প প্রশাসন ১৯৫২ সালের যে আইনে তাকে আটক করেছে, সেই আইনে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, আমেরিকায় কোন ব্যক্তির উপস্থিতি যদি দেশটির পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হয়, তাহলে সরকার তাকে আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার আদেশ দিতে পারবে।

বিচারক জানিয়েছেন, মাহমুদ খলিলের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে কারণ দেখিয়েছে, তা যুক্তিসংগত। ফলে মাহমুদ খলিলকে বহিষ্কারের পথে হাঁটতে ট্রাম্প প্রশাসনের কোনও বাধা নেই।

আদালতের রায়ের পর এতদিন ধরে নীরব থেকে আসা মাহমুদ খলিল বলেন, আপনি নিজেই আগের শুনানিতে বলেছিলেন, এই আদালতের কাছে মৌলিক সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। কিন্তু আজকে আমরা যা দেখলাম, তাতে স্পষ্টতই এই নীতিগুলির কোনওটিই আজ ছিল না। এমনকি, এই পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও এগুলো নেই। ঠিক এই কারণেই ট্রাম্প প্রশাসন আমাকে আমার পরিবার থেকে এক হাজার মাইল দূরের এই আদালতে পাঠিয়েছে। 

মানবাধিকার সংগঠন ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ (এসিএলইউ) আদালতের এই সিদ্ধান্তকে ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে মন্তব্য করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ‘প্রমাণ’ হিসাবে আদালতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি নথি জমা দেয়ার ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এই রায় আসলো। অথচ সেখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও'র পাঠানো একটি চিঠি ছাড়া আর কিছু ছিল না। এটাই পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, মি.

খলিল কোনও অপরাধ করেননি, বরং তার বক্তব্যের কারণেই এককভাবে তাকে নিশানা করা হয়েছে।

সরকার, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও’র তরফ থেকে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষা করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- যদিও মাহমুদ খলিলের কর্মকাণ্ড ‘আইনসম্মত’ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম গতকাল শুক্রবার আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও পড়াশুনার করার জন্য ভিসা বা গ্রিন কার্ড পাওয়া একপ্রকার সৌভাগ্য। কিন্তু যখন আপনি সহিংসতাকে উসকে দেবেন, সন্ত্রাসীদের প্রশংসা ও সমর্থন করবেন বা ইহুদিদের হয়রানির মুখে ফেলবেন- তখন আপনার আর এখানে থাকার কোনও অধিকার নেই। বিদায়!

মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বারবার বলছে, আদালতে মাহমুদ খলিলের বিরুদ্ধে ধর্মবিদ্বেষ বা সহিংসতা বিষয়ক কোনও প্রমাণ এখনও উপস্থাপন করা হয়নি। তার আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডের হাউট এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই মুহূর্তে যা চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য মাহমুদ খলিলের অধিকারের পক্ষে তারা লড়াই চালিয়ে যাবে। এই মামলাটির আবারও শুনানি হবে বলে তারা আশা করছেন।

হোয়াইট হাউজের সহকারী প্রেস সেক্রেটারি টেইলর রজার্স এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং যারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ক্ষতিকর-তাদেরকে দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র পরর ষ ট র র র জন য আম র ক সরক র উপস থ

এছাড়াও পড়ুন:

মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না: হাইকোর্ট

আসন্ন কোরবানির ঈদে রাজধানীর বনশ্রীর মেরাদিয়ায় গরুর হাট বসানো যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২৮ এপ্রিল) এ আদেশ দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রিটকারীর আইনজীবীর জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গত ২১ এপ্রিল রাজধানীর বনশ্রীর মেরাদিয়ায় পশুট হাট বসানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এ বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন সরকার। রিটের শুনানি নিয়ে গতকাল হাইকোর্ট মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানোর ইজারা বিজ্ঞপ্তি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন।

আরেক আইনজীবী খুররম শাহ মুরাদ বলেছেন, বনশ্রী আবাসিক এলাকা। বনশ্রীর মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসলে এ হাট পুরো আবাসিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। এ কারণে এলাকাবাসীর পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছিল।

ঢাকা/এম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের
  • শ্রম আদালতে ঝুলছে ২২ হাজার মামলা
  • মাওলানা রইস হত্যার বিচার দাবি জানিয়ে ১০২ নাগরিকের বিবৃতি
  • বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও কিশোর গ্যাংয়ের মামলায় আসামিপক্ষে সরকারি আইনজীবীদের না দাঁড়ানোর নির্দেশ
  • চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, রোববার ফের শুনানি
  • চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন, শুনানি হতে পারে রোববার
  • আনিসুল-সালমান-মামুন রিমান্ডে, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার আতিক
  • আবারও নিরপরাধ দাবি হিটু শেখের, ভিন্ন কথা সাক্ষীদের
  • কিউআর কোডসহ অনলাইন যাচাই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না: হাইকোর্ট