আগামী নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। তাই আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াত ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা বলেছেন। তিনি আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসায় এ বৈঠক হয়। এ সময় জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাঁর (প্রধান উপদেষ্টা) কমিটমেন্টে তিনি ঠিক আছেন কি না, আমরা সেটা দেখতে চাই।’

জামায়াতের আমির আরও বলেন, ‘আমাদের ভিউ হচ্ছে, এটা (নির্বাচন) রমজানের আগেই শেষ করতে হবে। জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, বিভিন্ন ধরনের ঝড়ঝাপটা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, তখন আবার ইলেকশনটা (নির্বাচন) অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সে জন্য আমরা চাইছি, ওই আশঙ্কার আগেই যেন নির্বাচন হয়ে যায়।’

প্রসঙ্গত, আগামী বছর রমজান ১৬ ফেব্রুয়ারির (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) পর শুরু হবে।

জামায়াতের আমির জানান, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, সংস্কার প্রস্তাব, নির্বাচন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নারী অধিকার, শ্রমিক অধিকার ও সংখ্যালঘু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছি।’

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাষ্ট্র যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল (এখন তিন মাসের জন্য স্থগিত), সেটা পুনর্বিবেচনার জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বলে জানান জামায়াতের আমির। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাঁদের অনুরোধ করেছি, আমাদের দেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। আমরা আশা করি, তাঁরা এটুকু সহযোগিতা আমাদের করবেন।’

আওয়ামী লীগের বিচারের বিষয়েও কথা বলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখনো আহত ব্যক্তিরা হাসপাতালের বিছানায় রয়েছেন। শহীদদের মা, বোন ও স্ত্রীরা কান্নাকাটি করছেন। এ এবস্থায় আওয়ামী লীগের বিচার অবশ্যই হতে হবে। তবে আমরা ন্যায়বিচার চাই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ